ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে রাশিয়াকে সাহায্য করছে ভারত। প্রতিবেশী এক দেশও তার সঙ্গে যুক্ত! এমনটাই দাবি করলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ স্টিফেন মিলার। তিনি হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ পদে রয়েছেন। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য নিয়ে ট্রাম্প একাধিক বার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এমনকি, রাশিয়া থেকে অস্ত্র এবং খনিজ তেল কেনা চালিয়ে গেলে আগামী দিনে ভারতকে ‘জরিমানা’ দিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তাঁর ঘনিষ্ঠ আরও এক ধাপ এগিয়ে দাবি করলেন, ভারত রাশিয়াকে যুদ্ধে সাহায্য করছে এক প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে।
কোন প্রতিবেশী? স্টিফেনের দাবি, রাশিয়াকে সাহায্য করার বিষয়ে ভারত আসলে চিনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। দুই দেশ একসঙ্গে মিলে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টিকে ‘আশ্চর্যজনক সত্য’ বলে উল্লেখ করেছেন হোয়াইট হাউস কর্তা।
ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে আমেরিকা, যা পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কার চেয়ে বেশি। ট্রাম্প সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির তেল এবং অস্ত্রের বাণিজ্য তিনি ভাল চোখে দেখছেন না। এতে রাশিয়ার সুবিধা হচ্ছে। দুই দেশের অর্থনীতিকে ‘নিষ্প্রাণ’ বলে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘‘রাশিয়া এবং ভারত তাদের নিষ্প্রাণ অর্থনীতিকে আরও অধঃপতনের দিকে নিয়ে যাক।’’ রবিবার স্টিফেন আমেরিকার এক সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘ট্রাম্প খুব স্পষ্ট করেই বলেছেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না। ভারত রাশিয়ার থেকে তেল কিনেই যাচ্ছে। এর মাধ্যমে ওরা যুদ্ধে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মানুষ এটা শুনে অবাক হবেন যে, রাশিয়ার তেল কেনার ক্ষেত্রে ভারত আসলে চিনের সঙ্গে যুক্ত। এটা একটা আশ্চর্যজনক সত্য।’’ স্টিফেনের কথায়, ‘‘ভারত এবং নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ট্রাম্প অসাধারণ এক সম্পর্ক তৈরি করতে চান। কিন্তু যুদ্ধের অর্থ জোগানের বিষয়টিতে আমাদের আরও বাস্তবসম্মত হতে হবে। ইউক্রেনে যুদ্ধ থামিয়ে শান্তি ফেরাতে কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য সব বিকল্প পথ ট্রাম্প খোলা রেখেছেন।’’
২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল রাশিয়া। এখনও সেই যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরেই আমেরিকা-সহ পশ্চিমি বিশ্ব রাশিয়ার উপর একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল অধিকাংশ বাণিজ্য। ফলে রাশিয়ার অর্থনীতি বড়়সড় ধাক্কা খায়। সেই সময় রাশিয়া বাজারদরের চেয়ে অনেক বেশি ছাড়ে তেল বিক্রি শুরু করে। ভারত হয়ে ওঠে রাশিয়ার তেলের অন্যতম প্রধান ক্রেতা। সস্তায় রাশিয়া থেকে তেল কেনার ফলে ভারতের অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সুবিধা হয়েছে। এই মুহূর্তে রাশিয়া থেকে ভারত ৩৫ শতাংশ তেল আমদানি করে থাকে। রাশিয়ার তেল কেনার ক্ষেত্রে চিনের পরেই ভারতের স্থান। চিনও ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার উপর চাপিয়ে দেওয়া বিধিনিষেধ মানেনি। বরং দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে গত কয়েক বছরে।
ভারত সরকার প্রথম থেকেই জানিয়ে এসেছে, আন্তর্জাতিক বাজারদর বিবেচনা করে তেল আমদানি করা হবে। জাতীয় স্বার্থ এখানে প্রাধান্য পাবে। শনিবার সরকারি সূত্র উল্লেখ করে বেশ কিছু সংবাদ সংস্থা জানায়, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই নয়াদিল্লির। এই পরিস্থিতিতে চিন নিয়ে ট্রাম্প ঘনিষ্ঠের দাবি বিতর্কে আলাদা তাৎপর্য যোগ করল।