Doctor's Posting Controversy

পোস্টিং বিতর্ক: কাজে যোগ দেবেন অনিকেত, দেবাশিস, আসফাক? না-দিলে গুনতে হতে পারে লক্ষ লক্ষ টাকা

গত বছর আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিলেন দেবাশিস, অনিকেতরা। বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। তাঁদের পোস্টিং নিয়ে ঝঞ্ঝাট শুরু হতেই দানা বাঁধে বিতর্ক। প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্বাস্থ্যভবনের সামনে অবস্থানেও বসেন ডব্লিউবিডিএফ-এর সদস্যেরা।

Advertisement

সারমিন বেগম

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৫ ১৪:১৫
Share:

(বাঁ দিক থেকে) অনিকেত মাহাতো, দেবাশিস হালদার, আসফাকুল্লা নাইয়া। —ফাইল চিত্র।

কাউন্সেলিংয়ে ঠিক হওয়া হাসপাতালের বদলে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে’ অন্যত্র পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। এমনটাই অভিযোগ তুলেছেন আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম তিন মুখ দেবাশিস হালদার, অনিকেত মাহাতো এবং আসফাকুল্লা নাইয়া। অভিযোগ, নিয়ম মেনে সিনিয়র রেসিডেন্টশিপের কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ায় কে কোথায় নিয়োগ চান জানতে চাওয়ার পরেও মেধাতালিকা বেরোনোর পর দেখা গিয়েছে, বাস্তবে তাঁদের পোস্টিং হয়েছে অনেক দূরে। সে খবর প্রকাশ্যে আসতে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ। এখন প্রশ্ন হল, সরকারি আদেশ মেনে কাজে যোগ না দিলে কী হতে পারে দেবাশিস, অনিকেতদের? সে ক্ষেত্রে কি তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হতে পারে?

Advertisement

নিয়ম অনুসারে, কোনও হাসপাতালে সিনিয়র রেসিডেন্ট পদটি একপ্রকার ‘বন্ড’ পোস্টিং। স্নাতকোত্তর পরীক্ষার পর সিনিয়র রেসিডেন্ট হিসাবে যোগ দিলে তিন বছরের বন্ড থাকে। সেই বন্ড অনুযায়ী সরকারের তরফে তাঁদের নিয়োগ করা হয়। এ জন্য কাউন্সেলিং হয়। মেধাতালিকায় থাকা চিকিৎসকেরা পোস্টিংয়ের জন্য পছন্দের জায়গা বেছে নিতে পারেন বলে দাবি। যাঁদের নাম তালিকার উপরের দিকে থাকে, তাঁরা সাধারণত আগে সুযোগ পান। এর পরেই নির্দিষ্ট কলেজে নিয়োগ করা হয় পিজিটি-কে। বন্ড না মানলে, কিংবা তিন বছর শেষ হওয়ার আগেই বন্ড ভেঙে বেরিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে টাকা দিতে হয়। তিন বছরের টাকার অঙ্কের পরিমাণ মোট ৩০ লক্ষ টাকা! অর্থাৎ, দেবাশিসরা যদি কাজে যোগ না দেন, তা হলে সর্বাধিক ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দিতে হতে পারে তাঁদের।

দেবাশিস সিনিয়র রেসিডেন্ট হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন বছর দুয়েক আগে। সিনিয়র রেসিডেন্টশিপের আর এক বছর বাকি রয়েছে তাঁর। ফলে তাঁকে অবশিষ্ট এক বছরের জন্য ১০ লক্ষ টাকা দিতে হবে। অন্য দিকে, অনিকেত আর আসফাকুল্লাকে দিতে হবে পুরো টাকাই। এ বিষয়ে প্রাক্তন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা (ডিএমই) প্রদীপ মিত্র জানাচ্ছেন, আইনি লড়াই কিংবা ব্যক্তিগত কারণে কেউ যদি কাজে যোগ দিতে টালবাহানা করেন, তবে তাঁদেরই ক্ষতি। কারণ, ভবিষ্যতে অধ্যাপনা করতে গেলেও অন্তত এক বছর সিনিয়র রেসিডেন্ট হিসাবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক। চাইলে সরকারি হাসপাতালের পরিবর্তে বেসরকারি হাসপাতালেও সিনিয়র রেসিডেন্ট হিসাবে যোগ দেওয়া যায়। কিন্তু এই মুহূর্তে দেবাশিসদের শংসাপত্র স্বাস্থ্য দফতরের কাছে জমা রয়েছে। ফলে বন্ডের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অন্যত্র কাজে যোগ দিতে পারবেন না তাঁরা। প্রদীপ আরও জানিয়েছেন, পদে থাকার সময় তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিন বছরের বদলে এক বছরের বন্ড করা হোক। পরিবর্তে বাড়িয়ে দেওয়া হোক টাকার অঙ্ক, যাতে সিনিয়র রেসিডেন্টরা সহজে কাজ ছেড়ে যেতে না পারেন। কারণ, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসকের ঘাটতি মেটান সিনিয়র রেসিডেন্টরাই।

Advertisement

উল্লেখ্য, গত বছর আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিলেন দেবাশিস, অনিকেতরা। বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। ফলে তাঁদের পোস্টিং নিয়ে ঝঞ্ঝাট শুরু হতেই দানা বাঁধে বিতর্ক। প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে স্বাস্থ্যভবনের সামনে অবস্থানেও বসেন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্‌স ফোরাম (ডব্লিউবিডিএফ)-এর সদস্যেরা। তাঁদের অভিযোগ, কাউন্সেলিংয়ে দেবাশিস, অনিকেত, আসফাকুল্লারা জানিয়েছিলেন, তাঁরা যথাক্রমে হাওড়া, আরজি কর এবং আরামবাগ হাসপাতালে পোস্টিং চান। সেইমতো সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে যোগ দিতে চেয়ে বন্ডেও সই করেন অনিকেতরা। কিন্তু মেধাতালিকা বেরোতেই দেখা যায়, মালদহের গাজোলে পোস্টিং হয়েছে দেবাশিসের। অথচ জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, গাজোলের ওই হাসপাতালে কোনও শূন্যপদই ছিল না! পরে জানা যায়, শুধু দেবাশিসই নয়, একই রকম ভাবে দূরে পোস্টিং হয়েছে আরজি কর আন্দোলনের অন্য দুই নেতা অনিকেত ও আসফাকুল্লার। আরজি করের পরিবর্তে অনিকেতকে পাঠানো হয়েছে রায়গঞ্জে, আর আসফাকুল্লার পোস্টিং হয়েছে পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে!

ডব্লিউবিডিএফের দাবি, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ থেকেই আরজি কর আন্দোলনের তিন মুখের সঙ্গে এমনটা করা হয়েছে। কারণ, এত জনের মেধাতালিকায় শুধুমাত্র তাঁরা তিন জনই পছন্দের জায়গায় ‘পোস্টিং’ পাননি বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে অনিকেতদের আরও অভিযোগ, স্বাস্থ্য ভবন ‘অনৈতিক কাজ’ করছে। তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের প্রান্তিক কোনও জায়গায় যেতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা নিয়োগে স্বচ্ছতা চেয়েছিলাম।’’ আসফাকুল্লার গলাতেও একই সুর। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা গ্রামের ছেলে। গ্রামে কাজ করতে কোনও আপত্তি নেই। আসলে গ্রাম-শহর গুলিয়ে দিয়ে মেধাতালিকাকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা চলছে। ১৬০০ জনের মধ্যে কেন তিন জনের পোস্টিং বদলে গেল, আমরা সেই উত্তর জানতে চাই।’’ সরকারি হাসপাতালে অব্যবস্থা এবং চিকিৎসক নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। স্বাস্থ্যসচিবের পদত্যাগ চান কি না, প্রশ্ন করলে অনিকেত বলেন, ‘‘উনি যে অযোগ্য, তা আমরা আগেই বলেছিলাম। আরজি কর আন্দোলনের সময় থেকেই আমরা ওঁর পদত্যাগ চেয়ে এসেছি। এটা আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি।’’ উল্লেখ্য, ডিএমই-র সঙ্গে কথা বলে মঙ্গলবারই এই পোস্টিংয়ের ‘পরিবর্তন’ নিয়ে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন দেবাশিস। বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দেন অনিকেত ও আসফাকুল্লাও। তাঁরা জানিয়েছেন, এই বিষয়ে আইনি পরামর্শও নিচ্ছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement