সুমিত্রা কুণ্ডু
নিলি, লক্ষ্মী, অভয়া। পর পর তিন মেয়ে। অভিযোগ, সেই কারণেই সুমিত্রা কুণ্ডুকে (২৬) শ্বশুরবাড়িতে নিত্য গঞ্জনা সইতে হত! অত্যাচার করত স্বামী তাপসও। দাঁত চেপে অত্যাচার সহ্য করেও সুমিত্রা ছোট মেয়ের নাম রাখেন অভয়া।
রবিবার ন’মাসের সেই অভয়া ও সুমিত্রাকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠল তাপস ও তাঁর বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির ডাঙাপাড়ার ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের কাউকেই পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। পড়শিদের একাংশের অভিযোগ, পর পর তিন মেয়ে হওয়ায় সুমিত্রাকেই দুষত তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বাড়িতে অশান্তিও হত। কিন্তু এমন ঘটতে পারে তা ভাবতেই পারেননি কেউ। সাগরদিঘির ওসি জামালউদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, পর পর মেয়ে হওয়ার কারণে সুমিত্রাকে নির্যাতন করা হত। খুনের মামলা রুজু করে তদন্তও শুরু হয়েছে।’’
২০১০ সালে সুমিত্রার সঙ্গে বিয়ে হয় তাপসের। তাপস যন্ত্রচালিত ভ্যান (লছিমন) চালান। বিয়ের চার বছরের মাথায় নিলির জন্ম হয়। সেই অশান্তির শুরু। বছর দু’য়েক আগে জন্ম হয় লক্ষ্মীর। কিন্তু মেয়ে হয়েছে শুনে স্ত্রীর সঙ্গে বহু দিন দেখা করতেও যাননি তাপস। নিরুপায় হয়ে মেয়ে ও নাতনিকে জামাইয়ের বাড়িতে রেখে যান সুমিত্রার বাবা হিরণ মণ্ডল।
হিরণ বলছেন, ‘‘তাপস ও তার বাবা-মা চাইত ছেলে হোক। তা না হওয়ায় মেয়েকে অত্যাচার করত। আমরা ছুটে গিয়েছি। প্রতিবেশীরাও বোঝান। শেষ পর্যন্ত মেয়ে-নাতনিকে ওরা মেরেই ফেলল।’’ ন’মাস আগে ফের মেয়ে হয়। সুমিত্রাই নাম রাখেন অভয়া। অভিযোগ, অভয়ার জন্মের পর থেকে অত্যাচার চরমে ওঠে। হিরণের অভিযোগ, রবিবার তিনি জানতে পারেন, অভয়া ও সুমিত্রাকে মারধর করে গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন তাপস ও তাঁর বাবা-মা।
অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় দু’জনকেই প্রথমে সাগরদিঘি হাসপাতাল ও পরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পথেই মৃত্যু হয় অভয়ার। মেডিক্যাল কলেজে মারা যান সুমিত্রা। সুমিত্রার মা নারায়ণী মণ্ডল বলছেন, ‘‘সন্তান তো সন্তানই। নাতনিদের জন্ম দিয়ে আমার মেয়ে কী অপরাধটা করেছিল, বলুন তো!’’