ব্যারাকপুরে উদ্ধার হওয়া এই ব্যাগটিতেই পাওয়া গিয়েছে শিশুর দেহ। — নিজস্ব চিত্র।
বাবার কাছে অন্য একটি মোবাইল পেয়ে সন্দেহ হয়েছিল কলেজ পড়ুয়া মেয়ের। সেই ফোনে নানা এসএমএস পড়ে তাঁর মনে হয়েছিল, যেন মনোমালিন্য হওয়া দম্পতির মধ্যে কথোপকথন। মাকেও জানিয়েছিলেন সে কথা। কিন্তু সন্দেহ দূর করে দিয়েছিলেন বাবাই। দাবি করেছিলেন, মোবাইলটি এক গ্রাহকের। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার হিসেবে এমন অনেকের পারিবারিক সমস্যা মেটাতে হয় বলে স্ত্রী-মেয়েকে জানিয়েছিলেন তিনি।
ব্যাগে করে প্রেমিকা সুচেতা চক্রবর্তী ও তাঁর শিশুকন্যা দীপাঞ্জনার মেয়ের দেহ মাঝগঙ্গায় ফেলে শনিবার শেওড়াফুলিতে গ্রেফতার হন দুর্গাপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সমরেশ সরকার। একদিন কেটে যাওয়ার পরে, রবিবারেও ব্যারাকপুরের চন্দ্র মাস্টার রোডের বাসিন্দা সমরেশের স্ত্রী উৎসাদেবী মানতে পারছেন না, স্বামী এমন করতে পারেন। কিন্তু এমন অবিশ্বাসের মধ্যেও উঁকি দিচ্ছে সেই এসএমএসের কথা। উৎসাদেবী বলেন, ‘‘সত্যি অন্য কোনও সম্পর্কে ও জড়িয়েছিল কি না, পুলিশের হেফাজতে এক দিন দেখা করে ওকে জিজ্ঞেস করতে চাই।’’
রবিবার উৎসাদেবীদের দোতলা বাড়িটার দরজা ছিল ভিতর থেকে তালা লাগানো। বাড়িল লোকজনকে সারা দিন বাইরে আসতে দেখা যায়নি। দুপুরে যখন সমরেশকে গ্রেফতারের খবর নিয়ে পুলিশের চিঠি এল, গেটের কাছে তা নিলেন উৎসাদেবী। ২১ বছর ধরে ব্যাঙ্কে চাকরি করছেন তাঁর স্বামী। দিনহাটা, তেজপুর, ডিগবয়— স্বামী যখন যেখানে বদলি হয়েছেন, দুই সন্তানকে নিয়ে সঙ্গে থেকেছেন উৎসাদেবী। বছর তিনেক আগে সমরেশবাবু দুর্গাপুরে বদলি হওয়ার পরে সেখানে যাননি। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার স্বার্থে ব্যারাকপুরের বাড়িতেই থাকতে শুরু করেন।
সমরেশের দাদা কুমারেশবাবু বলেন, ‘‘সংসারে ও-ই বেশি টাকা দিত। পুরনো বাড়িটা সুন্দর করে সাজাচ্ছিল। শনিবার নিজে দাঁড়িয়ে কাজ করাবে বলেছিল। আনন্দপুরীতে ফ্ল্যাট নিয়েছিল। কোনও হিসেবই মিলছে না!’’ উৎসাদেবীও বলেন, ‘‘ছুটিতে বাড়িতেই সময় দিত। ও কোনও সম্পর্কে জড়ালে, আমার তো বোঝার কথা!’’ এখন সকাল-বিকেল তাঁদের খোঁজ রাখছেন ব্যারাকপুরের পুরপ্রধান উত্তম দাস। তিনি বলেন, ‘‘সমরেশ ক’দিন আগেও রেশন কার্ডের বিষয়ে আমার কাছে এসেছিল। অস্বাভাবিক কিছু তো চোখে পড়েনি।’’
সমরেশের সঙ্গে সুচেতার যে সম্পর্ক ছিল, তা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না দুর্গাপুরে ওই ব্যাঙ্কের কর্মীরাও। তাঁরা জানান, সমরেশের অন্য বান্ধবীর কথা জানতেন তাঁরা। দুর্গাপুরের বিধাননগরের সুচেতা সম্প্রতি চাকরির খোঁজ শুরু করছিলেন। তাঁর শিক্ষাগত নানা শংসাপত্র রয়ে গিয়েছিল বসিরহাটে শ্বশুরবাড়িতে। তা ফিরিয়ে আনার জন্য স্থানীয় কাউন্সিলর দীপঙ্কর লাহার দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। দীপঙ্করবাবু বলেন, ‘‘দু’তিন বার এসেছিলেন উনি। আমি আশ্বাস দিয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই তো এমন ঘটে গেল!’’ সুচেতার প্রতিবেশী পিনাকী মিত্র বলেন, ‘‘পাড়ার নানা অনুষ্ঠানে উৎসাহের সঙ্গে যোগ দিতেন সুচেতা। তাঁর এমন পরিণতি হবে, ভাবতে পারছি না।’’