Biman Basu

Biman Basu: সক্রিয় বিমানও কি বসে যাবেন, বিভক্ত সিপিএম

সম্মেলন-পর্ব শুরু হওয়ার আগে এই প্রশ্নেই বিতর্ক বেঁধেছে বঙ্গ সিপিএমে।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২১ ০৬:৩০
Share:

বিমান বসু

অনেক আগেই প্রমোদ দাশুগুপ্ত-জ্যোতি বসুদের জমানা অতীত। সুভাষ চক্রবর্তী, শ্যামল চক্রবর্তীরা প্রয়াত। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দলের সম্পর্ক বিছিন্ন হয়ে গিয়েছিল তাঁর প্রয়াণের আগেই। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও এখন অন্তরালে। এর পরে বিমান বসু সরে দাঁড়ালে বাংলার সিপিএমের আর রইল কী!

Advertisement

সম্মেলন-পর্ব শুরু হওয়ার আগে এই প্রশ্নেই বিতর্ক বেঁধেছে বঙ্গ সিপিএমের অন্দরে। সংগঠনের চেহারা বদলাতে এ বার একেবারে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিচ্ছেন সীতারাম ইয়েচুরিরা। অবসরের বয়স কার্যকর হবে রাজ্য থেকে এরিয়া কমিটি পর্যন্ত নানা স্তরেই। কিন্তু সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই চান, বিমানবাবুর মতো পুরোদস্তুর সচল ও সক্রিয় নেতাকে বয়সের গেরোয় ফেলে অবসরে না পাঠাতে। তাঁদের যুক্তি, বিমানবাবু এমন এক জন ব্যক্তিত্ব, যাঁর সঙ্গে সিপিএমের নাম একাত্ম হয়ে গিয়েছে। তারুণ্যকে গুরুত্ব দেওয়া অবশ্যই জরুরি। কিন্তু বিমানবাবুর মতো নিবেদিতপ্রাণ সৈনিককে তার জন্য সরিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।

স্বয়ং বিমানবাবু অবশ্য দলের নীতির থেকে ‘ব্যতিক্রম’ হতে রাজি নন। দলীয় সূত্রের খবর, সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কাছেও তিনি এই মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন। দলের সকলের জন্য যে নীতি কার্যকর হবে, তা তাঁর উপরেও প্রযোজ্য হবে— এমনই অবস্থান তাঁর। দলের অন্দরে বিমানবাবুর বক্তব্য, কমিউনিস্ট পার্টিতে কাজ করতে গেলে কমিটি বা পদ কখনওই আবশ্যিক শর্ত হওয়া উচিত নয়। এই যে পরামর্শ তিনি দলের নেতা-কর্মীদের দিয়ে থাকেন, নিজের ক্ষেত্রে তার অন্যথা হবে কেন?

Advertisement

বিমানবাবুর এমন মনোভাবের কারণেই রাজ্য কমিটির সদ্য অনুষ্ঠিত বৈঠকে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, বয়স-নীতি কাজে লাগানোর সময়ে কোনও ‘ব্যতিক্রমের’ কথা তাঁরা ভাবছেন না। কারণ, ‘ব্যতিক্রম’ এক বার শুরু হলেই তা ‘সাধারণ’ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে দলের অন্দরের খবর, বিমানবাবুর প্রশ্নে টানাপড়েন এখনও জারি আছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

সিপিএমে নতুন বয়ঃসীমা চালু হলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৭৫ এবং রাজ্য কমিটিতে ৭২ বছর বয়সের পরে কেউ থাকতে পারবেন না। আশির কোঠায় চলে যাওয়া বিমানবাবু এখন দলের পলিটবুরো সদস্য এবং রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান। আলিমুদ্দিনের দলীয় দফতরই অনেক বছর ধরে তাঁর ঘর-বাড়ি। দলের কাজে মিশে যাবেন বলে কম বয়সে বাড়ি ছেড়ে এসেছিলেন। এখনও সিপিএম বা বামফ্রন্টের যে কোনও কর্মসূচিতে, মিছিলে অগ্রপথিকের নাম বিমানবাবুই।

দলের পলিটবুরোর এক সদস্যের মতে, ‘‘বাংলায় পার্টির ক্ষেত্রে বিমানদা এক জন ‘আইকনিক ফিগার’। বয়স-নীতি সার্বিক ভাবে চালু হলেও কিছু ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রমের কথা হয়তো ভাবতেই হবে। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে কি দলের কমিটি থেকে অবসর নেওয়ানো যাবে এখন? তেমনই বাংলার বিষয়টাও আরও আলোচনা করে চূড়ান্ত করতে হবে।’’ তবে ওই নেতা একই সঙ্গে মানছেন, ‘‘সম্পূর্ণ সক্রিয় থেকেও বিমানদা’র মতো নেতা দলের নীতির স্বার্থে অব্যাহতি নিলে সেটাও একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন