পুরভোটে আশানুরূপ ফল করতে না পারার পরে হতোদ্যম কর্মীদের চাঙ্গা করতে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মুখ চেয়ে আছে রাজ্য বিজেপি। এর আগে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁদের খালি হাতে ফিরিয়েছেন। বিড়ম্বনা বাড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। এ বার রাজ্য বিজেপির ভরসা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। মোদী সরকারের বর্ষপূর্তিতে তাদের সাফল্য প্রচার করতে আজ, মঙ্গলবার কলকাতায় আসছেন রাজনাথ। এই সফরে তিনি তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কোনও শব্দ খরচ করেন কি না, সে দিকেই তাকিয়ে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব।
পুরভোটে ধাক্কা খাওয়ার পরে বিজেপি শিবির কিছুটা বিভ্রান্ত এবং হতাশ। দলের একাংশের বক্তব্য, জনস্বার্থ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নে তৃণমূল স্তর থেকে আন্দোলনের ঢেউ তুলতে না পারলে রাজ্যে প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখাই কঠিন হবে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সফরে এসে মোদী সরকারি মঞ্চ থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। বরং, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সহযোগিতার বার্তাই দিয়েছেন। এমনকী, সারদা-কাণ্ড নিয়েও নীরব ছিলেন মোদী। এর পরেই বাবুল-মমতার ঝালমুড়ি কূটনীতির ঘটনা ঘটেছে। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের নয়া ব্যাখ্যা দিয়ে মমতার প্রশস্তিও করেছেন বাবুল। রাজ্য বিজেপির একাংশ মনে করছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের এ হেন আচরণে তাদের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এ বার রাজনাথ এসে যদি মমতা সরকারের বিরুদ্ধে অন্তত কয়েকটি বাক্যও বলেন, তা হলে দলের মুখরক্ষা হয়। কিন্তু ব্যক্তিগত স্তরে রাজনাথ-মমতার ‘সুসম্পর্কে’র কথাও সুবিদিত। ফলে রাজনাথও তাঁদের আশা পূরণ করবেন কি না, তা নিয়ে সন্দিহান রাজ্য নেতৃত্বই। বিজেপি-র জাতীয় মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্র অবশ্য সোমবার কলকাতায় দলের রাজ্য দফতরে মিডিয়া কর্মশালায় আশ্বস্ত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র-রাজ্য সুসম্পর্ক থাকবে। কিন্তু পাশাপাশি তৃণমূলের সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াইও চলবে। এই আশ্বাস এর আগে নির্মলা সীতারামনের কাছ থেকেও পেয়েছে রাজ্য বিজেপি। কিন্তু তাতে বাস্তবে দলের তৃণমূল-বিরোধী ভাবমূর্তি ফেরানো সহজ হচ্ছে না।
সম্বিৎ এ দিন ওই কর্মশালায় নির্দেশ দেন, অঞ্চল বা ওয়ার্ড থেকে রাজ্য স্তর পর্যন্ত মিডিয়া সেল তৈরি করতে হবে। কোনও ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ওই সব স্তরকেই তার খবর সংগ্রহ করতে হবে। কী ভাবে ওই কাজ হবে, তা ব্যাখ্যা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য রাজ্যবাসীকে ঋণের ফাঁদে জড়ানো, শিল্পে খরা-সহ তৃণমূল সরকারের চার বছরের নানা কুকীর্তির বিবরণ দেন। সম্বিৎ বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সাফল্য এবং রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা প্রচার করাই হবে মিডিয়া সেলের কাজ।