পারদ পতনেও পতঙ্গ-জীবাণু কুপোকাত হবে কি না ধন্দ

ভোরে হাঁটতে বেরোচ্ছিলেন পাটুলির বৃদ্ধ দেবব্রত দাস। রাস্তায় বেরোতেই টের পেলেন, অগ্রহায়ণের শুরুতেই শীত যেন শহরে হাজির!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:০১
Share:

ওম: শীত আসুক না-আসুক, আজ শীত। বুধবার ধর্মতলায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী

সাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে মঙ্গলবার রাতেই ঠান্ডা টের পেয়েছিলেন কোন্নগরের মহম্মদ তাহের। বুধবার সকালে অনলাইনে খবর পড়তে গিয়েই দেখলেন, এক ধাক্কায় প্রায় পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস নেমে গিয়েছে রাতের তাপমাত্রা!

Advertisement

ভোরে হাঁটতে বেরোচ্ছিলেন পাটুলির বৃদ্ধ দেবব্রত দাস। রাস্তায় বেরোতেই টের পেলেন, অগ্রহায়ণের শুরুতেই শীত যেন শহরে হাজির!

টালা পার্কে প্রাতর্ভ্রমণে বেরোনো পাইকপাড়ার শীলভদ্র সামন্তকে ঘিরে ধরল অন্য ভাবনা। মাঝ-হেমন্তেই শীত দরাজ হলে কি আশা করা যেতে পারে যে, প্রাকৃতিক অস্ত্রেই কুপোকাত হবে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার মতো রোগব্যাধি?

Advertisement

‘‘আসলে নিম্নচাপের বাধা সরে যাওয়ায় উত্তুরে হাওয়ার পথ খুলে গিয়েছে। পরিস্থিতিও শীত আগমনের অনুকূল,’’ বলছেন আলিপুর হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস। শীত-শীত ভাবটা যে প্রকৃত শীত নয়, তা জানিয়ে দিয়ে আবহবিদেরা বলছেন, জব্বর শীত আসতে আসতে গড়িয়ে যেতে পারে ডিসেম্বর।

আর পতঙ্গবিদেরা বলছেন, পরিস্থিতি অনুকূল হলেই হবে না। শীতকে স্বমহিমায় আসতে হবে এবং থিতু হতে হবে। তবেই কমতে পারে পতঙ্গবাহিত রোগের প্রকোপ। পারদ পতন নিতান্ত সাময়িক হলে মশা বা জীবাণু কতটা জব্দ হবে, আদৌ হবে কি না, সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

শীতপ্রেমিক কলকাতা শীতের জন্য শীতকে তো চাইছেই আবার রোগ দমনের জন্যও চাইছে শীতের দাক্ষিণ্য। মঙ্গলবার মহানগরীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১.৫ ডিগ্রি। বুধবার তা নেমে এসেছে ১৬.৭ ডিগ্রিতে। ২৪ ঘণ্টা ব্যবধানে তাপমাত্রার ফারাক প্রায় পাঁচ ডিগ্রি! এর জন্য উত্তুরে হাওয়ার গুগলিকেই দায়ী করছেন আবহবিজ্ঞানীরা। তাঁদের একাংশ জানাচ্ছেন, কাশ্মীর ও উত্তরাখণ্ডে সম্প্রতি বরফ পড়েছে। তার পরেই শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে রাজস্থান, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, দিল্লি, উত্তরাখণ্ডে। সেখান থেকেই কনকনে ঠান্ডা নিয়ে বাংলা-সহ পূর্ব ভারতের দিকে ছুটে আসছে উত্তুরে হাওয়া। তাই শীতের আগমনি শোনা যাচ্ছে বাংলায়।

আবহাওয়া দফতরের খবর, জেলাগুলিতে পারদ নেমেছে আরও বেশি। বীরভূমের শ্রীনিকেতনে রাতের তাপমাত্রা নেমে গিয়েছে ১১.৬ ডিগ্রিতে, বাঁকুড়া-আসানসোলের মতো পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রির আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। গণেশবাবু জানান, আজ, বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা আরও একটু নামতে পারে। রাজ্যের পশ্চিমের জেলাগুলিতে শীত আরও কিছুটা বেশি মাত্রায় মালুম হবে।

প্রকৃত শীত কবে আসবে, সেই নিশ্চয়তা না-থাকলেও সে যে এমন ভাবে আগমনি বার্তা পাঠাবে, এটুকুও আসা করেননি অনেকে। কেউ কেউ তো ফেসবুকের দেওয়ালে ‘শীত কবে আসবে সুপর্ণা...’ গোছের লাইন লিখে হাহুতাশ শুরু করে দিয়েছিলেন। অক্টোবরের মাঝামাঝি বর্ষা খাতায়-কলমে বিদায় নেওয়ার পরেও বারবার নিম্নচাপ, নিম্নচাপ অক্ষরেখা আর ঘূর্ণাবর্তের বৃষ্টি হেমন্তের মেজাজ বিগড়ে দিয়েছিল। কয়েক দিন আগেও গভীর নিম্নচাপের জেরে বৃষ্টি হয়েছে। সেই নিম্নচাপের প্রস্থানে হেমন্তের ফিরে আসার আশা জেগেছিল। সেই জায়গায় শীত-ভাবটা বড় পাওনা।

হাওয়া অফিসের খবর, নভেম্বরের শেষ ভাগে কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রির কাছাকাছি থাকাটাই দস্তুর। সে-দিক থেকে দেখলে এ দিন স্বাভাবিক তাপমাত্রার তুলনায় মাত্র এক ডিগ্রি কম ছিল। গত বছর ২২ নভেম্বর কলকাতার তাপমাত্রা ছিল ১৭.২ ডিগ্রি, এ বারের থেকে এক ডিগ্রি বেশি।

দিল্লির মৌসম ভবন সূত্রের খবর, হিসার, কারনাল, আগরায় তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছে ছয় থেকে আট ডিগ্রির মধ্যে। এ দিন দেশের সমতল এলাকার মধ্যে সব থেকে বেশি ঠান্ডা ছিল রাজস্থানের সিকারে। সেখানে তাপমাত্রা নেমে গিয়েছে ৪.৫ ডিগ্রিতে। উত্তুরে হাওয়ার দাপটে পারদ বেশ খানিকটা নেমেছে বিহার-ঝাড়খণ্ডেও। পটনা এবং গয়ায় রাতের তাপমাত্রা নেমে গিয়েছে যথাক্রমে ১০.৫ এবং ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

শীত কি তা হলে এসেই গেল কলকাতায়? এখনই এতটা বলতে রাজি নন আবহবিদেরা। তাঁদের বক্তব্য, বর্ষা সমাগমের নির্দিষ্ট দিনক্ষণ থাকলেও শীতের তেমন কিছু নির্ঘণ্ট নেই। কিছু কিছু লক্ষণ ও পরিস্থিতি দেখে শীতের আগমন ঘোষণা করা হয়। কবে কী ভাবে সেই ঘোষণা হবে? এক আবহবিজ্ঞানীর ব্যাখ্যা, রাতের তাপমাত্রা অন্তত ১৪ ডিগ্রিতে নেমে থিতু হতে হবে। উত্তুরে হাওয়া বইতে হবে একটানা। কমতে হবে আর্দ্রতাও। তবেই মিলবে শীত।

এই সব পরিস্থিতি তৈরি হতে হতে ডিসেম্বর গড়িয়ে যাবে বলেই মনে করছে আবহাওয়া দফতর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন