কয়েক বছরে বাড়ি-গাড়ি ঘনিষ্ঠ কর্মীদেরও

এক সময়ে যাঁদের সঙ্গে সব সময়ের ওঠাবসা ছিল, পরে চক্ষুশূল হয়েছেন তাঁরাই। ঘনিষ্ঠ-বৃত্তে হাজির হয়েছে নতুন লোকজন। তৃণমূলের পাণ্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি নরেন চক্রবর্তীর অনুগামীর তালিকা বদলেছে বারবার।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

পাণ্ডবেশ্বর শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:৪৩
Share:

নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। ফাইল চিত্র।

এক সময়ে যাঁদের সঙ্গে সব সময়ের ওঠাবসা ছিল, পরে চক্ষুশূল হয়েছেন তাঁরাই। ঘনিষ্ঠ-বৃত্তে হাজির হয়েছে নতুন লোকজন। তৃণমূলের পাণ্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি নরেন চক্রবর্তীর অনুগামীর তালিকা বদলেছে বারবার। অনেক অনুগামীর দ্রুত ফুলেফেঁপে ওঠা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

Advertisement

নরেনবাবু তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে ধীরে-ধীরে তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় প্রহ্লাদ সাউ, সন্দীপ সরকার, শিবনাথ ঘোষ, গৌতম ধাঙড়, চিরন্তন চট্টোপাধ্যায়দের। কিন্তু পরে একে একে তাঁরা নরেনবাবুর শিবির ছেড়েছেন। দলের পাণ্ডবেশ্বর ব্লক যুব সভাপতি প্রহ্লাদবাবু, ব্লক সাধারণ সম্পাদক সন্দীপবাবু বা চিরন্তনবাবুরা এখন দুর্গাপুর জেলা সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। অথচ, দীর্ঘ সময় ধরে তাঁরাই ছিলেন নরেনবাবুর নানা কর্মের সঙ্গী।

প্রহ্লাদবাবু, চিরন্তনবাবুদের সঙ্গে নরেনবাবুর দূরত্ব তৈরি হওয়ার পরে সেই জায়গা নেন সিপিএম, সিপিআই(এমএল) ছেড়ে আসা কিছু নেতা-কর্মী। তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই নেতা-কর্মীরা কিছু দিনের মধ্যে ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করায় দলের পুরনো লোকজনের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। তা থেকেও অনেকে নরেনবাবুর শিবির ছেড়ে দলের অন্য গোষ্ঠীতে চলে যান। প্রহ্লাদবাবু, চিরন্তনবাবুরা অবশ্য নরেনবাবু গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

Advertisement

কেন্দ্রা পঞ্চায়েতে ১৯৯৮ সালে তৃণমূলের প্রথম সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন লোকমান আনসারি। দলের এক নেতা জানান, রাজ্যে ক্ষমতার হাতবদলের পরে প্রথম লোকমানই নরেনবাবুর সঙ্গ ছাড়েন। তার কিছু দিন পরেই বীরভূমে এক তৃণমূল নেতা খুনে নাম জড়ায় লোকমানের এক আত্মীয়ের। পরিবারের অভিযোগ, নরেনবাবুর অনুগামীরা তাঁকে ফাঁসিয়ে দেয়। লোকমানের কথায়, “গোষ্ঠী-রাজনীতি করতে গিয়ে কেউ এমন নোংরামি করতে পারেন, ভাবলে কষ্ট হয়।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘দল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরেই নরেন আমাদের দীর্ঘদিনের শত্রুদের দলে এনে নিরঙ্কুশ আধিপত্য বিস্তারে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাতে বিরক্ত হয়ে আমি নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে বাধ্য হই।”

কেন্দ্রার পুরনো এক সিপিআই(এমএল) কর্মী, এক সময়ে সিপিএমে থাকা বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক বা তৃণমূলে নবাগত কয়েক জন এখন এলাকায় নরেনবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। অভিযোগ, তাঁদের কেউ অন্যের আবাসন দখল করে বাস করছেন। কেউ আবার অজয় পেরিয়ে বীরভূমে প্রাসাদোপম বাড়ি তৈরি করেছেন। কেউ একাধিক ডাম্পার ও ছোট গাড়ির মালিক হয়ে উঠেছেন তো কেউ খোট্টাডিহি প্যাচে খনিকর্মীদের কাছ থেকে মাসে-মাসে টাকা আদায় করছেন বলে এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ। তৃণমূলের এক জেলা নেতার অভিযোগ, ‘‘নরেনবাবুর ঘনিষ্ঠ-বৃত্তে এসে কয়েক বছরেই ভোল বদলে গিয়েছে এক ব্যক্তির যিনি আগে পুরোহিত ছিলেন। এখন তিনি নানা এলাকায় ট্যাঙ্কারে করে জল পাঠান ও দলের নাম করে তোলাবাজি করেন।’’ তাঁর আরও দাবি, এলাকায় জুয়ার ঠেক নিয়ন্ত্রণ করেন যিনি, নরেন-অনুগামী হিসেবে পরিচিত সেই ব্যক্তি আগে সিপিএমে ছিলেন।

নরেনবাবুর সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে দলের বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজনের উপরে চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে বারবারই। শঙ্করপুর সাইডিংয়ে কয়লা পরিবহণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষ থেকে বহুলায় কাজের বরাত পাওয়া ঠিকাদারকে হেনস্থার নালিশ— ঝামেলা বেধেছে একের পর এক। সম্প্রতি শোনপুর বাজারি প্রকল্পে দরপত্রের আবেদন জমা দিতে চাওয়া এক ঠিকাদারকে মারধরের অভিযোগ ওঠে যাঁর বিরুদ্ধে, তিনিও এলাকায় নরেনবাবুর শিবিরের লোক বলে পরিচিত। কর্মী নিয়োগ থেকে কাজের বরাত, সবেতেই তাঁরা ছড়ি ঘোরাচ্ছেন বলে অভিযোগ।

নরেনবাবুর ঘনিষ্ঠদের অবশ্য দাবি, বিরোধীদের দাপট কমিয়ে এলাকায় দলের সংগঠন গড়ে তুলেছেন তাঁদের নেতা, যা দলের কিছু লোকের পছন্দ হচ্ছে না। সে কারণেই নানা রকম মিথ্যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। দলের দুর্গাপুর জেলা সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় গোটা বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন