‘জাত গিয়েছে’, মাথা কামিয়ে শাস্তি যুবতীর 

গ্রামে ফিরতেই মাতব্বরেরা নিদান দিলেন, ‘জাত খোয়া গিয়েছে। প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বেলপাহাড়ি শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৩৯
Share:

স্বামী অসুস্থ। চিকিৎসার অনেক খরচ। দুই সন্তানের পড়াশোনার খরচও আছে। চেন্নাইয়ের কারখানায় তাই কাজে গিয়েছিলেন এক আদিবাসী যুবতী। গ্রামে ফিরতেই মাতব্বরেরা নিদান দিলেন, ‘জাত খোয়া গিয়েছে। প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।’

Advertisement

ঘটনাস্থল বেলপাহাড়ির ওড়লি। ‘প্রায়শ্চিত্তে’ মূল্য ধরে দেওয়ার সিদ্ধান্তই হয়েছিল। কিন্তু ধারদেনা করে ৩১ হাজার টাকা দিয়েও সম্ভ্রম বাঁচাতে পারেননি বছর সাতাশের ওই যুবতী। অভিযোগ, গত ৯ ডিসেম্বর বাড়িতেই প্রায়শ্চিত্তের নামে স্বামী-সন্তানদের সামনে জোর করে নেড়া করে দেওয়া হয় তাঁকে। নজরদারিও চলছিল, পাছে কোথাও অভিযোগ জানান। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার স্বামীর চিকিৎসার নাম করে বেলপাহাড়ি থানায় এসে একাধিক ব্যক্তির নামে লিখিত অভিযোগ করেছেন নিগৃহীতা। অভিযোগ জানিয়েছেন বেলপাহাড়ির বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কাছেও।

দিনমজুরি করে সংসার চলত ওই আদিবাসী পরিবারের। কয়েক বছর আগে যকৃতের অসুখে আক্রান্ত হন গৃহকর্তা। কিছুদিন ভর্তি ছিলেন কলকাতার হাসপাতালেও। দম্পতির মেয়ের বয়স দশ, ছেলে সাত বছরের। কিছু দিন আগে ওই যুবতী পরিচিতদের মাধ্যমে জানতে পারেন, চেন্নাইয়ের কারখানায় কাজের লোক নিচ্ছে। স্বামীর সঙ্গে কথা বলেই গত অগস্টে তিনি চেন্নাই যান। সেখানে মজুরি মিলত দিনে ২২০ টাকা। গত নভেম্বরে বাড়ি ফিরতেই শুরু হয় সমস্যা। অভিযোগপত্রে ওই যুবতী জানিয়েছেন, গত ৩ ডিসেম্বর সালিশি সভা ডাকে ভূমিজ সমাজ। সেখানেই প্রায়শ্চিত্তের নিদান হয়।

Advertisement

যুবতী বলেন, ‘‘তিন মাস বাড়ির বাইরে ছিলাম। তাই আমার চরিত্র নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন মাতব্বরেরা। বলা হয়, জাত গিয়েছে।’’ নিগৃহীতার স্বামীর কথায়, ‘‘আমি অসুস্থ। ভারী কাজ করতে পারি না। চাষজমিও নেই। তাই স্ত্রী ভিন্‌ রাজ্যে কাজে গিয়েছিল। তার এই পরিণতি মানতে পারছি না।’’ ঘটনায় সরব হয়েছেন বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য, কংগ্রেস নেতা সুব্রত ভট্টাচার্য। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এ কোন রাজ্যে বাস করছি। এ তো তালিবানি শাসন!’’

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখে মামলা রুজু হবে। বেলপাহাড়ির বিডিও বরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন