ছেলে চাই, নিশ্চুপে হারায় শিশুকন্যারা

পাটিগণিতের আঁক কষে গুণধর স্বামী বুঝিয়ে দিয়েছিলেন শ্বশুরবাড়িতে থাকলে হলে পণের দাবিটা মেটাতেই হবে, সঙ্গে শর্ত, তেমনি জন্ম দিতে হবে পুত্রসন্তানের! 

Advertisement

শুভাশিস সৈয়দ

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৪৮
Share:

তালাবন্ধ শ্বশুরবাড়ির সামনে মা ও মেয়ের সঙ্গে বসে রয়েছেন পাপিয়া সুলতানা। লালবাগে। নিজস্ব চিত্র

বিয়ের পণ সঙ্গে দোসর কন্যাসন্তান!

Advertisement

পাটিগণিতের আঁক কষে গুণধর স্বামী বুঝিয়ে দিয়েছিলেন শ্বশুরবাড়িতে থাকলে হলে পণের দাবিটা মেটাতেই হবে, সঙ্গে শর্ত, তেমনি জন্ম দিতে হবে পুত্রসন্তানের!

এর অন্যথা হলেই নেমে আসবে খড়্গহস্ত! বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের এলাহিগঞ্জের মাইনুল ইসলাম। কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য বাবার বাড়ি থেকে ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে আসার হুমকি দেন। স্ত্রী ওই টাকা নিয়ে আসতে না পারার জন্য তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দিতেও পিছপা হননি।

Advertisement

তবে এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কান্দির আন্দুলিয়া পঞ্চায়েতের শাসপুেরর মোতালেব শেখ (নাম পরিবর্তিত) প্রথম সন্তান কন্যা হওয়ায় মুখের উপরে বলে দিয়েছিলেন—তিনি মেয়ের কোনও খরচ দিতে পারবেন না। মেয়ের যাবতীয় খরচ বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে হবে। স্ত্রী রাজি হননি। তার জেরে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার চালায় স্বামী। দ্বিতীয় সন্তানও মেয়ে হওয়ায় এ বার পত্রপাট স্ত্রীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল বাপেরবাড়ি। একই ‘দাবিতে’ স্ত্রী’র গায়ে হাত তুলতে দ্বিধা করেননি রেজিনগরের বাসিন্দা এক স্কুল শিক্ষকও। ওই মহিলা স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে দেন। নিজের সম্মানহানির ভয়ে ওই শিক্ষক বিষয়টি আপোসে মিটিয়ে নেন। আশির দশকের মাঝামাঝিতে কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়া এবং দাবি মতো মোটরবাইক কিনে দিতে পারেননি স্কুল শিক্ষক শ্বশুর। এক দিন ‘মেয়ে কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছে’ বলে খবর দেওয়া হয়। পরে ভগবানগোলার মেদেডুমুরিয়া গ্রামে গিয়ে দেখেন— বাড়ির বাইরের উঠোনে শুইয়ে রাখা হয়েছে মেয়ের দেহ। হ্যাঁ, পুত্রসন্তানের সেই অমোঘ দাবিতে এখনও হারিয়ে যায় শিশু-কন্যা, নিশ্চুপে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন