এভাবেই মারধর তৃণমূল কাউন্সিলরকে। নিজস্ব চিত্র।
পাড়ার মহিলারা ঘিরে ধরেছেন এক ব্যক্তিকে। টানাহ্যাঁচড়া করে তাঁর জামা ছিঁড়ে দিলেন। তার পর আরও আক্রমণাত্মক হয়ে কিল-চড়-লাথি মারা শুরু হল তাঁকে।
দশমীর সকালে এ ভাবেই পাড়ার মহিলাদের হাতে বেধড়ক মার খেলেন ওই এলাকারই তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলর। শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটে হুগলির উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে। মার খেলেন ওই ওয়ার্ডেরই দাপুটে কাউন্সিলর সুমিত চক্রবর্তী। তিনি পুরসভার সিআইসি সদস্য এবং পানীয় জল সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত।
ঘটনার সূত্রপাত যদিও বৃহস্পতিবার রাতে। পাশের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ‘ইয়ংস্টার ক্লাব’-এর দুর্গাপুজো এলাকার অন্যতম পুরনো বারোয়ারি। ইয়ংস্টার ক্লাবের সদস্যদের অভিযোগ, ওই দিন রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ জনা তিরিশেক যুবককে নিয়ে তাঁদের পুজো মণ্ডপে হাজির হন সুমিতবাবু। এক ক্লাব সদস্যের দাবি, সুমিতবাবু তখন মত্ত ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই ওই যুবকরা ইয়ংস্টার ক্লাবের পুজো মণ্ডপ এবং পাশের মঞ্চে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কাউন্সিলর এবং তাঁর অনুগামীরা পুজো কমিটির ক্যাশ বাক্স ভেঙে লুঠ করেন নগদ প্রায় দেড় লাখ টাকা নিয়ে গিয়েছে। বাধা দিলে মারধর করা হয় ক্লাব সদস্যদের। এলাকার বাসিন্দাদেরও নাকি শাসিয়ে যান মত্ত সুমিতবাবু।
দেখুন ভিডিয়ো
এ দিন সকালে সকালেই উত্তরপাড়া থানায় সুমিত চক্রবর্তী এবং তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন ইয়ংস্টার ক্লাবের সদস্যরা। তার মধ্যেই ওই পাড়ার মহিলারা রাস্তায় দেখতে পান সুমিতবাবুকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তাঁকে দেখেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন মহিলারা। সকলে মিলে তাঁকে ঘিরে ধরেন। এর মধ্যেই কয়েক জন আরও আক্রমণাত্মক হয়ে চড়াও হন কাউন্সিলরের উপরে।
আরও পড়ুন: আটকে রেখে ১০ দিন ধরে গণধর্ষণ, কোণার্কে উদ্ধার কলকাতার তরুণী
এর পরেই শুরু হয়ে যায় রীতিমতো গণপ্রহার। মহিলারা কিল-চড়-লাথি-ঘুসি মারতে থাকেন দাপুটে ওই নেতাকে। ওই মহিলাদের সঙ্গে যোগ দেন এলাকার কিছু যুবক। দিনদুপুরে পাড়ার মধ্যেই মহিলাদের ওই রুদ্ররূপ দেখে নেতাকে বাঁচাতে এগোনোর সাহস পাননি কাউন্সিলরের অনুগামীরাও। মহিলারা রাস্তায় ফেলে লাথি মারতে মারতে রাস্তার পাশে নর্দমায় ফেলে দেন এই সুমিতবাবুকে।
খবর পেয়ে পুলিশ এবং সুমিতবাবুর অনুগামীরা তাঁকে উদ্ধার করেন। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে একটি পুজো করে স্থানীয় ত্রিশক্তি সংঘ। সেই পুজোর মূল পৃষ্ঠপোষক সুমিত চক্রবর্তী। ওই পুজো মণ্ডপ থেকে কয়েকশো মিটার দূরেই ইয়ংস্টার ক্লাবের পুজো। দীর্ঘ দিন ধরেই ওই দুই ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে রেষারেষি রয়েছে। তার জেরেই এই ঘটনা বলে মনে করছেন স্থানীয়দের একাংশ। ইয়ংস্টার ক্লাব সদস্যদের অভিযোগ, পুজো উপলক্ষে পুরসভার পক্ষ থেকে পুজো মণ্ডপের আশপাশে সিসি ক্যমেরা লাগানো হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনার সময়ে সেই সিসি ক্যামেরা বন্ধ রাখা হয়েছিল।
নিগৃহীত কাউন্সিলরের অবশ্য দাবি, “আমি কাল রাতে কলকাতায় পুজো দেখতে গিয়েছিলাম। ফিরে শুনি ওই ইয়ংস্টারের ছেলেরা ত্রিশক্তিতে এসে শাসিয়ে গিয়েছে। তাই নিয়ে একটা গন্ডগোল হয়। আমি আসার আগেই গন্ডগোল শুরু হয়ে গিয়েছিল। আমি বরং রাতে গিয়ে ঝামেলা মেটানোর চেষ্টা করি।” তিনি অবশ্য মার খাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। সুমিতবাবুর কথায়, “আমাকে ঘিরে ধরে ওঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। আমি বাইক নিয়ে চলে এসেছি।”
আরও পড়ুন: বেপরোয়া বাইকের আঘাতে প্রাণ গেল তিন জনের
পরিস্থিতি সামাল দিতে সকালে ঘটনাস্থলে যান পুরপ্রধান দিলীপ যাদব। তবে, এই ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি দেখছেন ওই পুরসভার ভাইস চেয়ারপার্সন অদিতি কুণ্ডু। তিনি বলেন, “ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের। ওই ক্লাবেও সিপিএম এবং বিজেপির সমর্থকরা রয়েছেন। তাঁরাই এই ঘটনার পিছনে রয়েছে।”
১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর সুস্মিতা সরকার অবশ্য এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “ওই ক্লাবের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। সকালে ভাঙচুরের কথা জানতে পারি। আমার ওয়ার্ডের পুজো। তাই আমি সকালে গিয়েছিলাম। এর বাইরে আমার কোনও যোগ নেই ক্লাবের সঙ্গে।”
আরও পড়ুন: সোমা-শিরিন-জোসেফের মিনি ইন্ডিয়া
এ বিষয়ে স্থানীয় বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল বলেন, ‘‘এটা গণধোলাই না অন্য দলের লোকজন এসে পিটিয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে। যেটাই হোক না কেন, অনভিপ্রেত। গোটা ঘটনাটাই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দোষীদের শাস্তি হবে।’’
উত্তরপাড়া থানার এক আধিকারিক বলেন, “আমরা দু’পক্ষের তরফেই অভিযোগ পেয়েছি।” সূত্রের খবর, পুলিশ তদন্তে নেমে সিসি টিভি ফুটেজ চায় পুরসভার কাছ থেকে। তখনই জানা যায়, ঘটনার সময়ে ক্যামেরা বন্ধ ছিল।
(কলকাতা শহরের রোজকার ঘটনার বাছাই করা বাংলা খবর পড়তে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।)