জসলিন কৌর
এক যুবকের হাত থেকে রিভলভার কেড়ে নিতে ধস্তাধস্তি করছেন এক তরুণী। টানাটানিতে রিভলভারটি ভেঙে যেতেই বোঝা গেল সেটি আসলে খেলনা। এর পরে তরুণী চিৎকার শুরু করতেই যুবক তাঁর মুখ চেপে ধরে। কিন্তু কড়ে আঙুলে সজোরে কামড় পড়তেই রণে ভঙ্গ দেয় সে।
শনিবার সকাল ৭টা নাগাদ শিবপুর বটানিক্যাল গার্ডেনের ভিতরে প্রাতর্ভ্রমণকারী, বছর পঁচিশের এক তরুণীর উপরে এ ভাবেই হামলা চালাল এক দুষ্কৃতী। এই ঘটনা ফের প্রমাণ করে দিল যে, ওই উদ্যানের ভিতরে পুলিশ ক্যাম্প এবং কর্তৃপক্ষের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী থাকলেও প্রাতর্ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তা দিতে তাঁরা কার্যত ব্যর্থ।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রতি দিনের মতো বাবা রাজেন্দ্র সিংহের সঙ্গে প্রাতর্ভ্রমণে এসেছিলেন আন্দুল রোডের বাসিন্দা জসলিন কৌর। জসলিন আলাদা ভাবে অপেক্ষাকৃত নির্জন জায়গা তালসারির রাস্তা ধরে হাঁটছিলেন। তখনই ঝোপ থেকে বেরিয়ে এসে এক দুষ্কৃতী তাঁর মাথায় রিভলভারের মতো দেখতে অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকাপয়সা ও মোবাইল চায়। জসলিন ওই যুবককে বলেন, তাঁর কাছে কিছু নেই। শুনে যুবক তাঁর পেটে রিভলভারের মতো অস্ত্রটি ঠেকিয়ে গুলি করার ভয় দেখায়। তখনই তিনি দুষ্কৃতীকে পাল্টা আঘাত করেন। জসলিন বলেন, ‘‘ছেলেটির ডান হাত মুচড়ে রিভলভার কাড়ার চেষ্টা করতেই সেটি ভেঙে টুকরো হয়ে গেল। বুঝলাম, ওটা খেলনা। এর পরেই চিৎকার শুরু করলে দুষ্কৃতী আমার মুখ চেপে ধরে।’’
জসলিন জানান, চিৎকার শুনে কেউ না আসায় ওই যুবকের আঙুল কামড়ে ধরেন তিনি। তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে পালায় সে। জসলিনের ঠোঁট কেটে যায়। ঘটনার পরে গার্ডেনের নিরাপত্তারক্ষীরা ছুটে আসেন। আসেন জসলিনের বাবাও। খবর যায় পুলিশে।
বটানিক্যাল গার্ডেনের মতো জাতীয় উদ্যানে এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জসলিন ও তাঁর বাবা। তাঁদের প্রশ্ন, সকাল আটটার আগে কেউ কার্ড না নিয়ে ঢুকতে পারে না। কিন্তু পুলিশ ও রক্ষীদের নজর এড়িয়ে ছেলেটি ঢুকল কী করে? প্রাতর্ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তা কোথায়?
‘বটানিক্যাল গার্ডেন মর্নিং ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি এইচ বি সিংহ বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবেই এ সব হচ্ছে।’’ গার্ডেনের ডিরেক্টর অরবিন্দ প্রামাণিক বলেন, ‘‘এই ঘটনার পরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হচ্ছে। পুলিশকেও সক্রিয় হতে বলছি। প্রাতর্ভ্রমণকারীদের কাছেও ভোরের দিকে নির্জন জায়গা এড়িয়ে চলতে আবেদন করা হবে।’’
হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা জানান, ঘটনাটি সিসিটিভিতে ধরা পড়ছে। দুষ্কৃতীকে ধরার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, ‘‘গার্ডেনে আমাদের ক্যাম্প থাকলেও সব সময় পাহারা দেওয়ার মতো যথেষ্ট পুলিশকর্মী থাকেন না। গার্ডেনের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীরাই বিষয়টি দেখেন।’’