বৈষ্ণবনগরে বিস্ফোরণ

বিতর্কের কেন্দ্রে না-পোশাক

এক বিস্ফোরণ তুলে দিয়ে গেল অনেক প্রশ্ন। যার মধ্যে সব থেকে গুরুতর কথাটি টেনে আনলেন মৃত পুলিশকর্মী বিশুদ্ধানন্দ মিশ্রের স্ত্রী পাপিয়া দেবী। তিনি যা বললেন তার নির্যাস— পুলিশ খেটে মরবে। কিন্তু তার সুরক্ষার বদলে টাকা খরচ হবে ক্লাব-উৎসবে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০৪:০৬
Share:

নিহত পুলিশকর্মীর মরদেহে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন মালদহের পুলিশ সুপার।

এক বিস্ফোরণ তুলে দিয়ে গেল অনেক প্রশ্ন। যার মধ্যে সব থেকে গুরুতর কথাটি টেনে আনলেন মৃত পুলিশকর্মী বিশুদ্ধানন্দ মিশ্রের স্ত্রী পাপিয়া দেবী। তিনি যা বললেন তার নির্যাস— পুলিশ খেটে মরবে। কিন্তু তার সুরক্ষার বদলে টাকা খরচ হবে ক্লাব-উৎসবে!

Advertisement

ঘটনা হল, সোমবার কিন্তু বিশুদ্ধানন্দ, সুব্রত চৌধুরী এবং মনিরুজ্জামান শেখদের কেউই বিস্ফোরক-নিরোধক পোশাক পরে ঘটনাস্থলে যাননি। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি তাঁরা এটাকে হাল্কা ভাবে নিয়েছিলেন? এর আগে একাধিক বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করেছেন ওঁরা। তাই কি ওঁদের মধ্যে কোনও আত্মতুষ্টি কাজ করছিল? পরিবারের লোকজন অবশ্য এ সব কথা মানতে নারাজ। তাঁরা আঙুল তুলেছেন পুলিশের ওপরমহলের দিকে। মালদহের এসপি সৈয়দ ওয়াকার রেজা এক সময় বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করার সময় অবশ্য পালনীয় একটি তালিকা তৈরি করেছিলেন। অথচ সোমবার এই দলে তিনি থাকা সত্ত্বেও এত বড় গাফিলতি হল কেন— এই প্রশ্নও পরিবারের কারও কারও। তাঁরা সরাসরি বলেছেন, ‘‘মালদহের পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে ছিলেন। তিনি কেন পোশাক ছাড়া সিআইডি কর্মীদের বোমার কাছে যেতে দিলেন? এ সব নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে গাফিলতির দায় কার তা চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হোক।’’

ওয়াকার রেজা অবশ্য ঘটনাস্থলে থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, রবিবার রাতে বিস্ফোরণের খবর পেয়ে সোমবার তাঁরা ঘটনাস্থলে যান ঠিকই। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটার আগে তিনি ওখান থেকে চলে আসেন। বস্তুত, প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ওয়াকার রেজাই বিস্ফোরক ও বোমাগুলি প্রথম দেখতে পান।

Advertisement

মৃত সহকর্মীদের পরিবারের তোপের মুখে পড়ে বিব্রত পুলিশ কর্তাদের অনেকেই। মঙ্গলবার সকালে ঘটনার তদন্তের জন্য মালদহে যান সিআইডি-র এডিজি রামফল পাওয়ার। তিনি পুলিশ লাইনে গিয়ে আলাদা করে মৃত দুই কর্মীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। এর পরে বেলা ৩টে নাগাদ বৈষ্ণবনগরের ঘটনাস্থলেও যান তিনি। ওই গ্রামে গিয়ে স্থানীয় পুলিশকর্মী ও গ্রামবাসীদের সঙ্গেও পৃথক ভাবে কথা বলেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘কী ভাবে ঘটনাটি ঘটল তা খতিয়ে দেখবেন বিশেষজ্ঞরা। এখনই বলা সম্ভব নয় কার গাফিলতি রয়েছে।’’

সিআইডি কর্তাদের যুক্তি মানতে রাজি নন মৃতের পরিবারের অনেকেই। বিশুদ্ধানন্দবাবুর স্ত্রী পাপিয়া দেবীকে ক্ষোভের সঙ্গে বলতে শোনা যায়, ‘‘পর্যাপ্ত পোশাক থাকবে কেন! এ রাজ্যে ক্লাবে টাকা বিলি হবে। পুলিশের জন্য কিছু হবে না। দিনরাত খেটে মরবে পুলিশের লোকেরা। সব শেষ করে দিল।’’ কেন তাঁর স্বামীর এমন পরিণতি হল, তা নিয়ে বিশদে তদন্তের দাবি তুলেছেন সুব্রতবাবুর স্ত্রী শম্পা দেবীও। তিনি বলেন, ‘‘কারও চাপে নিশ্চয়ই পোশাক ছাড়া ওঁরা যেতে বাধ্য হয়েছিল। সেটা সামনে আসা দরকার। আমরা চাই সত্যিকারের তদন্ত হোক।’’

সিআইডি-র এডিজি দুই পরিবারের ক্ষোভকে যুক্তিসঙ্গত বলে মানছেন। তিনি বলেন, ‘‘এমন অবস্থায় সান্ত্বনা জানানোর ভাষা নেই। এটা বলতে পারি, মৃতদের পরিবারের সব অভিযোগ নিয়ে তদন্ত হবে। মৃত ও আহত পুলিশকর্মীদের সব রকম ভাবে আমরা সহযোগিতা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন