ছবি: সংগৃহীত।
ভানু ভবনের সামনে সংঘর্ষের পরে জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গের দেহরক্ষী প্রত্যাহার করেছে রাজ্য সরকার। যে পুলিশকর্মীরা গুরুঙ্গের দেহরক্ষী ছিলেন, তাঁদের বদলি করা হয়েছে রাজ্যের অন্যত্র। তবে জিটিএ প্রধানের পদ রাজ্যের পূর্ণমন্ত্রীর সমতুল্য। গুরুঙ্গকে নতুন করে দেহরক্ষী ও এসকর্ট দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে বলে প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে।
উচ্চপদস্থ এক সরকারি আধিকারিকের কথায়, মোর্চার কথা মেনে জিটিএ প্রধানকে পূর্ণমন্ত্রীর সমান মর্যাদার পদ দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে সেই মতো দেহরক্ষী ও এসকর্টও দেওয়া হয়। ঘটনা হল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার উত্তরকন্যায় বলেছেন, ‘‘অনেক কথাই আগে মেনে নেওয়া হয়েছে। আর সে সব হবে না।’’
মোর্চার বক্তব্য, রাজনৈতিক সম্পর্কের যতই অবনতি হোক, জিটিএ প্রধানের নিরাপত্তা রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক দায়িত্ব। সেই কর্তব্য পালন করা হচ্ছে না। তাঁকে না জানিয়ে তাঁর দেহরক্ষী ও এসকর্ট সরানোয় ক্ষুব্ধ গুরুঙ্গও। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, ‘‘রাজ্য তার দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে। তবে পাহাড়ের মানুষই আমাদের নিরাপত্তা দেবেন।’’ রোশন জানান, অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে। সম্পর্ক খাদে পড়লে দেহরক্ষী তুলে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এ বার পাহাড়বাসীই এ সবের জবাব দেবেন।’’ প্রশাসনিক সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে দার্জিলিঙে যে ধুন্ধুমার শুরু হয়, তখন জিটিএ প্রধানের দেহরক্ষীদের ভূমিকা নিয়ে পুলিশ মহলেই প্রশ্ন উঠেছে। গুরুঙ্গের দেহরক্ষীরা পুলিশকে কোনও খবরই দেননি। তাঁরা শুধু গুরুঙ্গকে নিরাপদে বের করে নিয়ে যান। পুলিশের কয়েক জন আধিকারিকের দাবি, ভানু ভবনের সামনে যে মোর্চা সমর্থকেরা জড়ো হয়েছেন, পরিস্থিতি যে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে—সে সব খবর পুলিশের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন গুরুঙ্গের দেহরক্ষীরা। গুরুঙ্গের ৭ দেহরক্ষীকে তাই সে দিন রাত থেকেই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তাঁদের বদলির প্রক্রিয়াও শুরু হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁদের বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় বদলি করা হয়েছে। দার্জিলিঙের সদ্য নিযুক্ত পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, ‘‘প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলের সিদ্ধান্তেই জিটিএ প্রধানের দেহরক্ষী তুলে নেওয়া হয়েছে। আবার দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
বাড়ানো হয়েছে পাহাড়ে তৃণমূল নেতাদের নিরাপত্তাও। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, অতীতে জিএনএলএফ আন্দোলনের সময়ে পাহাড়ের প্রধান প্রতিপক্ষ সিপিএম নেতাদের কয়েক জনের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের উপরে হামলার একাধিক ঘটনাও ঘটেছিল। সে কথা মাথায় রেখেই কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না রাজ্য। তাই আজ, সোমবার থেকে পাহাড়ের সব সরকারি অফিস বন্ধের ডাক দেওয়ার প্রেক্ষাপটে সেখানেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে।