দাঁতালকে উত্ত্যক্ত করতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ গিয়েছে সিদ্দিকুল্লা রহমানের। কিন্তু তাতে হাতিকে বিরক্ত করার প্রবণতা কমেনি। পরের পর ঘটনায় দেখা গিয়েছে, তাদের লক্ষ করে ঢিল ছোড়া থেকে শুরু করে
কাছে গিয়ে নিজস্বী তোলা অবধি হয়েছে। এমনই এক ঘটনায় শুক্রবার প্রাণ গেল নিউ মালের বাসিন্দা নির্মল দাসের। হাতির পায়ের চাপে তাঁর কোমর ও ডান পায়ের হাড় চুরমার হয়ে গিয়েছে।
কেন বারবার এমন বিপদের মধ্যে গিয়ে পড়ছেন বাসিন্দারা, প্রশ্ন এখন বনাধিকারিক থেকে পরিবেশপ্রেমী— সকলের মধ্যেই। তাঁরা মনে
করছেন, বুনো হাতি বা হাতির পালকে খেপিয়ে তুললে আক্রান্ত হওয়াই স্বাভাবিক। সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনা সে দিকেই ইঙ্গিত করছে। তাই হাতির দিকে নয়, বরং মানুষের দিকেই বারবার অভিযোগের আঙুল উঠছে।
মাত্র দিন দশেক আগে সিদ্দিকুলা রহমান যেমন লাটাগুড়ির রাস্তায় জঙ্গলের পথে জাতীয় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা প্রকাণ্ড আকৃতির দাঁতাল হাতির কাছে চলে যান। যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে হাতিকে জোর আওয়াজ করে স্যালুট করতে থাকেন। হাতিটি খেপে গিয়ে তাঁকে আক্রমণ করে। তার পরে আছড়ে, পায়ে পিষে মারে তাঁকে। এর পরে গত সপ্তাহেই মালবাজারের কুমলাই এলাকার নেপুচাপুর চা বাগানে দিনভর দাঁড়িয়ে থাকা হাতির পালকে নিশানা করে ঢিল ছোড়া, সেলফি বা নিজস্বী তোলার হিড়িক দেখা যায়। তরাই এলাকার নকশালবাড়িতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়।
শুক্রবার মালবাজারেও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে একই প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার রাতে রাঙামাটির একটি সেনা ছাউনির খুব কাছে ঝোপের আড়ালে প্রথম হাতির দলটিকে লক্ষ্য করেন স্থানীয় লোকজনেরা। দলে শাবকসমেত মোট ৬টি হাতি। এ দিন তারা নিউ মাল এলাকার কাছাকাছি চলে আসে। আর খবর পেয়ে সকাল থেকেই হাতি দেখতে ভিড় জমান বাসিন্দারা। বনকর্মীদের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে হাতিদের উত্যক্ত করা শুরু হয়। ধান চাষিদের অনেকেই হাতির দলকে ঢিল মেরে দূরে সরাতে চাইছিলেন। তাঁদের বক্তব্য, মাঠের ধান কাটা হয়নি। হাতির পাল তার উপর দিয়ে গেলে আর কিছু আস্ত থাকবে না।
এই হুড়োহুড়ির সময়ে নির্মল দাস হাতির পালের কাছে গিয়ে পড়েন। স্থানীয়দের দাবি, তখনই সম্ভবত কারও ছোড়া ঢিল লাগে শাবকটির গায়ে। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মা হাতি। সে তাড়া করলে যে যে দিকে পারে ছুট দেয়। পালাতে গিয়ে পড়ে যান নির্মল। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তখনই হাতি তাঁকে পা দিয়ে পিষে দেয়। তবে বাকি লোকজন চিৎকার করে ঢিল ছুড়তে থাকলে সেই হাতিও জঙ্গলে পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত, অচৈতন্য নির্মলকে তুলে প্রথমে মালবাজার মহকুমা হাসপাতাল, পরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পাঠানো হয়। রাতে তিনি মারা যান।
বন দফতরের কর্তারা বলছেন, দেখা যাক, এর পরে হুঁশ ফেরে কি না!