রূপনারায়ণ নদে এই নৌকোতেই লুকিয়ে রাখা হয় অপহৃত ঈশ্বরচন্দ্রকে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
পুলিশে চাকরি করে দেওয়ার নাম করে এক তরুণের থেকে ৩৫ হাজার টাকা নিয়েছিল তার প্রতিবেশী যুবক। দ্বিতীয় দফায় চেয়েছিল আরও কিছু টাকা। দিতে রাজি না হলে ওই তরুণকে অপহরণ করে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সে। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে পুলিশ ধরে ফেলে অপহরণকারী যুবককে। উদ্ধার হয় অপহৃত তরুণও।
অপহৃত তরুণের নাম ঈশ্বরচন্দ্র পাল। বয়স ২০ বছর। বাড়ি শ্যামপুরের উত্তর দূর্গাপুরের জামিরা গ্রামে। ইশ্বর সাঁতরাগাছির একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ছাত্র। পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড আনার জন্য গত ২২ জুন বিকেল ৩টে নাগাদ বাড়ি থেকে বেরোন ঈশ্বর। আর ফেরেননি। পরদিন বিকেল ৩টে নাগাদ তাঁর বাবা শঙ্কর পালের কাছে ঈশ্বরেরই মোবাইল থেকে ফোন ক’রে একজন ১০ লক্ষ টাকা নিয়ে বিকেল পাঁচটায় মেচেদা স্টেশনে আসতে বলে।
শঙ্করবাবু বিষয়টি পুলিশকে জানান। অপহরণের মামলা রুজু করে বড়বাবু সুমন দাস নিজে পুলিশকর্মীদের নিয়ে মেচেদায় যান। সঙ্গে ছিলেন শঙ্করবাবুও। টিকিট কাউন্টারের সামনে শঙ্করবাবু একটি ব্যাগ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। দু’ ঘন্টা অপেক্ষা করার পরে সাড়ে সাতটা নাগাদ শঙ্করবাবুর মোবাইলে ফোন আসে। একজন বলে, ‘‘চিন্তা করবেন না, আপনার ছেলে ভাল আছে।’’ নম্বর ট্র্যাক করে পুলিশ জানতে পারে ফোনটি করা হয়েছে শ্যামপুর থেকেই। শঙ্করবাবুও পুলিশকে জানান, নম্বরটি পাশের গ্রাম নওদার বাসিন্দা চিন্ময় মুখোপাধ্যায় নামে এক যুবকের। তিনি পুলিশকে জানান, তাঁর ছেলেকে পুলিশে চাকরি করে দেবে বলে ৩৫ হাজার টাকাও সে নিয়েছে।
নওদা এলাকায় একটি পুলিশের ফাঁড়ি রয়েছে। বড়বাবুর নির্দেশ পেয়ে ফাঁড়ির পুলিশ চিন্ময়ের বাড়িতে গিয়ে তাকে আটক করে ফাঁড়িতে আনে। চিন্ময় কবুল করে, তমলুক থেকে শ্যামপুরের আমবেড়িয়ায় পারাপারের জন্য যে খেয়াঘাট আছে, সেখানে তার সঙ্গী লালু মান্নার হেফাজতে রয়েছে ঈশ্বর। পুলিশের নির্দেশে চিন্ময় লালুকে তমলুকের হসপিটাল মোড়ে ঈশ্বরকে আনতে বলে। লালু রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ রঞ্জিত কাণ্ডার নামে এক যুবকের স্কুটারে করে ঈশ্বরকে হসপিটাল মোড়ে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে মোতায়েন ছিল পুলিশ। তারা ঈশ্বরকে উদ্ধার করে তাঁর বাবার হাতে তুলে দেয়। রঞ্জিতকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন বুধবার সকালে খেয়াঘাটের কাছ থেকে ধরা হয় লালুকে। আগেই গ্রেফতার হয় চিন্ময়।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, একবার ৩৫ হাজার টাকা নেওয়ার পরে ছেলের চাকরির জন্য শঙ্করবাবুর কাছে ফের টাকা চায় চিন্ময়। তিনি রাজি হননি। এরপরেই চিন্ময় ইশ্বরকে অপহরণের ছক করে। সঙ্গে নেয় পাশের গ্রামের বাসিন্দা, খেয়াঘাটের কর্মী লালুকে। নৌকার মাঝি ক্ষুদিরাম বেরা বলেন, ‘‘সোমবার বিকেলে এক যুবককে লালু নৌকার মধ্যে এনে রাখে। তাকে নিজের শ্যালক বলে পরিচয় দেয় সে। আমাকে দু’দিনের জন্য ছুটি দেয়।’’ তবে পুলিশ জানিয়েছে, রঞ্জিত অপহরণের সঙ্গে জড়িত নন। লালুর অনুরোধে সে তার স্কুটারে করে ইশ্বরকে নিয়ে আসে।
ফিরে আসার পর ইশ্বর বলেন, ‘‘আমাকে চিন্ময় বলল, ‘পুলিশে যদি কাজ করতে চাস আজকেই তমলুকে চলে যা। কাল মাঠে দৌড়ের পরীক্ষা আছে।’ তার কথামতো লালু নৌকায় চাপিয়ে তমলুক খেয়াঘাটে আনে। সেখানে আমাকে আটকে দিয়ে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়।’’
পুলিশের দাবি, জেরায় চিন্ময় জানিয়েছে, তার আশা শঙ্করবাবুকে চাপ দিয়ে অন্তত ২-৩ লক্ষ টাকা মিলবে। সেই আশাতেই সে ঈ শ্বরকে অপহরণ করেছিল। হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘এই ধরনের অপহরণের ঘটনার তদন্তে ঝুঁকি থাকে। পুলিশ তৎপরতার সঙ্গে কাজ করেছে।’’
ছেলেকে ফিরে পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন শঙ্করবাবু। তিনি বলেন, ‘‘চারদিকে যা শুনছি, তাতে ছেলেকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।’’