ফাল্গুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে দখিনা বাতাস উধাও। নেই ঝলমলে আকাশও। সকালে কিছুক্ষণ রোদ থাকলেও, দুপুরের পর থেকে আকাশের মুখ ভার। মনে হয়েছে, যে কোনও সময়েই বৃষ্টি নামবে। কিন্তু সেই বৃষ্টিটা শেষ পর্যন্ত না হওয়ায় বেড়েছে অস্বস্তি।
মেঘে ঢাকা আকাশে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা তেমন বাড়তে পারেনি। গুমোট গরমে সন্ধ্যার দিকে ফ্যান চালাতে হলেও মাঝরাতের পরে তাপমাত্রা হঠাৎ করেই নেমে যাচ্ছে এ সময়ের স্বাভাবিক সর্বনিম্নের নীচে। ফলে ফ্যান বন্ধ না করলে ঠাণ্ডা লেগে যাচ্ছে। প্রাতর্ভ্রমণে গেলে সঙ্গে শীতবস্ত্র রাখতেই হচ্ছে। মাঝ-বসন্তে এ রকম আবহাওয়া কলকাতা শেষ কবে পেয়েছে, তা মনে করতে পারছেন না আবহবিদেরা।
মৌসম ভবনের রেকর্ড বলছে, গত ১০ বছরের মধ্যে শুধু ২০১১ সালের ২ মার্চ সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের নীচে। তবে সে দিন আকাশ মেঘলা ছিল না। আগের রাতের কালবৈশাখীর জেরেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে গিয়েছিল ওই বছরের ২ মার্চ।
বর্ষার বাড়াবাড়িতে এ বার শরৎ আর হেমন্ত বোধগম্যই হয়নি। শীত ও লাগাতার পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জেরে এ বার বসন্তও কি মুখ ঘুরিয়ে নিতে চলেছে? ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বৃষ্টির পরে কিছু সময়ের জন্য দখিনা বাতাস ফিরে এসেছিল পরিমণ্ডলে। আগুনরঙা পলাশ ফুটেছিল অনেকটা দেরিতে। কিন্তু সেই পরিস্থিতিরও পরিবর্তন ঘটেছে গত দু’দিনে। আবহবিদেরা বলছেন, শুক্রবারের হঠাৎ ঝড়ের পরে উত্তুরে হাওয়ার পথে যে টুকু বাধা ছিল, তা পুরোপুরি সরে গিয়েছে। ফলে উত্তুরে হাওয়া সোজা পৌঁছে যাচ্ছে কলকাতায়। এই মুহূর্তে পরিমণ্ডলের উপরের স্তরে রয়েছে উত্তর ভারতের তীব্র গতিবেগের ঠাণ্ডা হাওয়া। তার নীচের স্তরে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ-ছত্তীসগঢ়ের জলীয় বাষ্পপূর্ণ হাওয়া। দুই হাওয়ার মিশেল গোটা পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়াকেই বদলে দিয়েছে।
আবহবিদেরা বলছেন, কাশ্মীরে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার হানা বন্ধ না হলে গোটা ভারতেই আবহাওয়া অস্থির থাকবে। কবে যে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার হানা বন্ধ হবে, তা অবশ্য আবহবিদদের জানা নেই। জম্মু-কাশ্মীরে নতুন একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে উত্তরাখণ্ড এবং উত্তর ভারতে বৃষ্টি হয়েছে শনিবার। সেই বৃষ্টির রেশ রবিবার পৌঁছেছে মধ্য ও পূর্ব ভারতে। দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে ভাল বৃষ্টি হয়েছে। কলকাতার আকাশেও জমেছে বর্ষার কালো মেঘ।
এক আবহবিদের কথায়, “যে ভাবে প্রতিদিন আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে এ বার বর্ষার পূর্বাভাস দেওয়াটা রীতিমতো সমস্যার হতে পারে। বছরের এই সময়টা থেকে পরিমণ্ডল গরম হতে শুরু না করলে বর্ষার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারবে না।” আবহাওয়ার এই পরিবর্তন ফসল, শাক-সব্জি, গ্রীষ্মকালীন ফলের উপরেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন কৃষি-বিজ্ঞানীরা।
শুধু কৃষিপণ্যই নয়, অস্বাভাবিক এই আবহাওয়া সরাসরি প্রভাব ফেলছে কীট-পতঙ্গ এবং জীবাণুদের উপরেও। মেঘে ঢাকা আকাশে দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটছে মশা-মাছির। পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আবহাওয়ার সঙ্গে তাল রাখতে না পেরে মানুষের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমছে। অতি সক্রিয় জীবাণুরা শরীরের মধ্যে গিয়ে দীর্ঘ দিন থেকে যাচ্ছে। বিশেষ করে শ্বাসনালী ও ফুসফুসের সংক্রমণ অত্যধিক বেড়ে গিয়েছে। শ্বাসকষ্ট এতটাই বেশি হচ্ছে যে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে অক্সিজেন নিতে হচ্ছে অনেককে।
সংক্রমণটা কী, সে ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেতে বারণ করছেন চিকিৎসকেরা। ঠাণ্ডা পানীয় এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। রাস্তার ধুলো এবং বাতাসে উড়তে থাকা ফুলের রেণু থেকেও অ্যালার্জি হচ্ছে অনেকের। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সঠিক ওষুধে জীবাণু পুরোপুরি না মারতে পারলে পরবর্তী কালে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। ঠিক ওষুধ প্রয়োগ না হলে কিংবা চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ মাঝপথে বন্ধ করে দিলে জীবাণুর প্রভাব দীর্ঘকাল শরীরে থেকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর থেকে ছড়াতে পারে সংক্রমণও।