অর্থের অভাবে যাঁর ঠিকমতো দিন গুজরান হয় না, তিনিও যাতে বিচারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত না-হন, তা দেখতে হবে সরকারকে। গরিব মানুষকে এক জন আইনজীবী দিয়ে সাহায্য করলেই হবে না। তাঁর বাড়ি থেকে যাতায়াত, কলকাতায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা-সহ মামলার যাবতীয় খরচ বহন করতে হবে তাদের। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলার শুনানি চলাকালীন এই নির্দেশ দেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত।
মামলাটি ছিল স্টেট ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে অখিলবন্ধু সাহা নামে এক ব্যক্তির। দীর্ঘদিন লড়াই চালানোর পরে অখিলবাবু মামলায় জেতেন। হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এক বার মামলা লড়ে জীবনের প্রায় সব সঞ্চয় শেষ করে ফেলা অখিলবাবু সর্বোচ্চ আদালতে গিয়ে মামলা চালাবেন কী করে? সম্প্রতি হাইকোর্টের কাছে আবেদন করে সেই প্রশ্নই তোলেন বৃদ্ধ। বিচারপতির কাছে তিনি সরাসরি জানান, এখন বাড়ি থেকে হাইকোর্টে আসার যে-খরচ, তাঁর পক্ষে সেটাও বহন করা সম্ভব নয়। তা হলে তিনি সুপ্রিম কোর্ট যাবেন কী করে?
অখিলবাবুর প্রকৃত অবস্থা খতিয়ে দেখে তাঁকে সাহায্য করার জন্য আইনজীবী প্রতীক ধরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। আর এক আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেছিলেন, তিনি যেন আদালত-বান্ধব হিসেবে কাজ করেন। এর পরে অখিলবাবুর সঙ্গে দীর্ঘ কথাবার্তা বলে প্রতীকবাবু আদালতে জানান, ব্যাঙ্কের সঙ্গে হাইকোর্টে মামলা চালাতে গিয়ে তাঁর মক্কেল কার্যত দেউলিয়া হয়ে গিয়েছেন। রোজগার বলতে কিছু নেই। কাল কী খাবেন, তা-ও জানেন না।
সব শুনে বিচারপতি বলেন, তা হলে কি ধরে নিতে হবে কপর্দকশূন্য এক জন মানুষের বিচার পাওয়ার কোনও অধিকার নেই? সংবিধানের ৩৯ (ক) ধারায় বলা আছে, অর্থবান ব্যক্তির পাশাপাশি দরিদ্রতম মানুষও বিচার পাওয়ার সমান অধিকারী। কখনও, কোনও মানুষকেই তাঁর আর্থিক অবস্থার প্রেক্ষিতে বিচার পাওয়া থেকে বিরত রাখা যায় না। তাঁর কথায়, এক জন গরিব মানুষের পক্ষে মফস্সলের কোনও শহর বা গ্রাম থেকে হাইকোর্টে এসে মামলা চালানো সম্ভব না-ও হতে পারে। তাঁকে যদি সুপ্রিম কোর্ট যেতে হয়, সেটা তাঁর পক্ষে আরও সম্ভব নয়।
অখিলবাবুর আবেদনের ভিত্তিতে জাতীয় লিগাল এড, রাজ্য লিগাল এড এবং হাইকোর্ট লিগাস এড সার্ভিসকে বিচারপতি বলেন, কোন ধরনের গরিব মানুষ সাহায্য পেতে পারেন, তার একটি নীতি তৈরি করা হোক। কীসের ভিত্তিতে সেই নীতি তৈরি হবে, তারও একটি ‘গাইডলাইন’ বা নির্দেশিকা দেন বিচারপতি। বলেন, শুধু আইনজীবী দিলেই হবে না। দেখতে হবে, যাঁতে তাঁরা যাতায়াত, খাওয়া-দাওয়া, থাকা এবং মামলা চালানোর সব খরচই পেতে পারেন। এই খরচ দিতে হবে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার এবং লিগাল এড-কে। বিচারপতির মন্তব্য, এক জনের কাছে টাকা নেই বলে সারা জীবন মামলায় হেরেই চলবেনবা বিচারের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন না এটা সংবিধান-বিরোধী। তাই তাঁর লড়াই চালানোর উপযুক্ত ব্যবস্থা করাটা সরকারেরই দায়িত্ব।