আবার পরিবর্তনের লক্ষ্যে মিশন ২০১৬

লোকসভা ভোটে যে রসদ জুটেছে, তাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যে দু’বছরের মধ্যে ইমারত গড়ার লক্ষ্যে নামছে বিজেপি। এ ব্যাপারে পরিকল্পনামাফিক কর্মসূচি নিয়ে এগোতে চাইছেন তাঁরা। রাজ্যে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল শাসনের অবসান ঘটাতে এখন থেকেই কাজ শুরু করার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৪ ০৩:৪৮
Share:

বাগযুদ্ধ। বিজেপির সদর দফতরে সরব সিদ্ধার্থনাথ সিংহ ও রাহুল সিংহ। নিজস্ব চিত্র

লোকসভা ভোটে যে রসদ জুটেছে, তাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যে দু’বছরের মধ্যে ইমারত গড়ার লক্ষ্যে নামছে বিজেপি। এ ব্যাপারে পরিকল্পনামাফিক কর্মসূচি নিয়ে এগোতে চাইছেন তাঁরা। রাজ্যে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল শাসনের অবসান ঘটাতে এখন থেকেই কাজ শুরু করার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

দু’দিন ধরে কলকাতায় রাজ্য কমিটির বৈঠকে সব জেলার নেতাদের বক্তব্য শুনেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। লোকসভা ভোটে দলের হয়ে লড়াই-করা সব প্রার্থীকেও সেখানে ডাকা হয়েছিল। বিধানসভার মহড়া হিসাবে আসন্ন পুরভোটে এলাকাভিত্তিতে কমিটি ও নেতা ঠিক করে দিয়ে ওয়ার্ডের প্রার্থী বাছাই করতে বলা হয়েছে। সংগঠন তৈরি করেই ‘মিশন ২০১৬’য় নামতে চায় বিজেপি। রবিবার এ রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেন, “২০১৬-য় তৃণমূল-মুক্ত বাংলা গড়াই এখন প্রধান লক্ষ্য বিজেপি-র।”

এই দু’বছর পর্যায়ক্রমে দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে কর্মীদের বুথ স্তরে মানুষের কাছে পৌঁছনোর লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-নেতাদের দু’বছর ধরে বারবার বাংলায় এনে কর্মীদের মনোবল বাড়ানো এবং তৃণমূল সরকারের উপরে চাপ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রাজ্যে উন্নয়নের কাজ ঠিক ভাবে হচ্ছে কি না, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা এখানে এসে সরেজমিনে খতিয়ে দেখবেন।

Advertisement

বস্তুত শনি ও রবিবারের বৈঠকে দলের নেতা-কর্মীদের বলা হয়েছে, তাঁদের বিশ্বাস করতে হবে যে, ২০১৬ সালে রাজ্যে ১৫০টি আসন জেতা বিজেপি-র পক্ষে সম্ভব। সেই লক্ষ্য মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে। সংগঠন ছড়াতে জনসংযোগ বাড়ানোর জন্য দু’মাসের কর্মসূচি এ দিন ঘোষণা করেছেন সিদ্ধার্থ। বীরভূমের ইলামবাজারে নিহত শেখ রহিমের বাড়িতে গিয়ে এ দিনই এলাকার আক্রান্ত সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেছেন শমীক ভট্টাচার্য-সহ বিজেপি নেতারা। সিপিএম, সিপিআইয়ের মতো বাম দলেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন শুধু ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে আক্রমণ করে বিজেপি-র মোকাবিলা করা যাবে কি?

লোকসভা ভোটের ফলে বাম ও কংগ্রেস যত হতমান হয়ে পড়ছে, ততই কোমর বেঁধে ময়দানে নামছে বিজেপি। দলীয় নেতৃত্বের আন্দোলন-বিমুখতায় ক্ষুব্ধ হয়ে এবং শাসক দলের সন্ত্রাস থেকে বাঁচতে বাম ও কংগ্রেস সমর্থকদের অনেকেই বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন। রাজ্য কমিটিতে এ দিন অবশ্য জেলা নেতাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, এলাকায় সামাজিক পরিচিতি খতিয়ে দেখেই নতুন কাউকে দলে নিতে হবে। শুধু অন্য দল করতেন বলে কাউকে নেওয়ার দরকার নেই।

রাজ্যে তাঁদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের পরিসংখ্যান দিয়েই সিদ্ধার্থনাথ এ দিন চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন মমতাকে। লোকসভা ভোটে প্রায় ১০% ভোট তৃণমূল রিগিং করে জিতেছে বলেও অভিযোগ তাঁর। সেই ভোট যে প্রকৃত জনমতের প্রতিফলন নয়, তা বুঝেই মমতা ৩৪টি লোকসভা আসন জিতেও খুশি নন বলে সিদ্ধার্থ মন্তব্য করেন। তাঁর কথায়, “৩৪টি আসন পেয়েও উনি এত ক্ষুব্ধ ও চিন্তিত কেন?” তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, “আগের সরকারের মতো কেন্দ্রের নতুন সরকারও এ রাজ্যকে কোনও ভাবে সাহায্য করছে না। কেন্দ্রের নেতারা এখানে এসে উস্কানিমূলক কথা বলছেন। সে জন্যই বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিন্তিত!” কেন্দ্রের অসহযোগিতার অভিযোগ পার্থবাবুরা করলেও রাজ্যের দাবিদাওয়া নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের কাছে এখনও অবশ্য সে ভাবে দরবার করা শুরুই করেনি তৃণমূলের সরকার।

নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের বার্তা দিতে তৃণমূল নেতৃত্ব এখন বোঝানোর চেষ্টা করছেন, বিজেপি-র উত্থানে তাঁরা আদৌ বিচলিত নন! সিদ্ধার্থের বক্তব্যের অব্যবহিত পরেই বিজেপি-র নামোল্লেখ না-করে পার্থবাবু এ দিন বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জের শক্তি এঁদের নেই। ওঁকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই!” লোকসভার প্রচারে স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী যা বলতেন, সেই সুরে পার্থবাবুর বক্তব্য, “নিজেদের আখের গোছাতে একটি সাম্প্রদায়িক দল ভাগাভাগিকে প্রশ্রয় দিয়ে বাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে!”

সিদ্ধার্থনাথ এ দিন জানান, রাজ্যের করুণ আইনশৃঙ্খলা এবং শাসক দলের সন্ত্রাসের অভিযোগ নিয়ে আগামী ২০ জুন সব জেলাশাসকের কাছে যাবে হয়ে এবং শাসক দলের সন্ত্রাস থেকে বাঁচতে বাম ও কংগ্রেস সমর্থকদের অনেকেই বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন। রাজ্য কমিটিতে এ দিন অবশ্য জেলা নেতাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, এলাকায় সামাজিক পরিচিতি খতিয়ে দেখেই নতুন কাউকে দলে নিতে হবে। শুধু অন্য দল করতেন বলে কাউকে নেওয়ার দরকার নেই।

রাজ্যে তাঁদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের পরিসংখ্যান দিয়েই সিদ্ধার্থনাথ এ দিন চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। লোকসভা ভোটে প্রায় ১০% ভোট তৃণমূল রিগিং করে জিতেছে বলেও অভিযোগ তাঁর। সেই ভোট যে প্রকৃত জনমতের প্রতিফলন নয়, তা বুঝেই মমতা ৩৪টি লোকসভা আসন জিতেও খুশি নন বলে সিদ্ধার্থ মন্তব্য করেন। তাঁর কথায়, “৩৪টি আসন পেয়েও উনি এত ক্ষুব্ধ ও চিন্তিত কেন?” তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, “আগের সরকারের মতো কেন্দ্রের নতুন সরকারও এ রাজ্যকে কোনও ভাবে সাহায্য করছে না। কেন্দ্রের নেতারা এখানে এসে উস্কানিমূলক কথা বলছেন। সে জন্যই বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিন্তিত!” কেন্দ্রের অসহযোগিতার অভিযোগ পার্থবাবুরা করলেও রাজ্যের দাবিদাওয়া নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের কাছে এখনও অবশ্য সে ভাবে দরবার করা শুরুই করেনি তৃণমূলের সরকার।

নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের বার্তা দিতে তৃণমূল নেতৃত্ব এখন বোঝানোর চেষ্টা করছেন, বিজেপি-র উত্থানে তাঁরা আদৌ বিচলিত নন! সিদ্ধার্থের বক্তব্যের অব্যবহিত পরেই বিজেপি-র নামোল্লেখ না-করে পার্থবাবু এ দিন বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জের শক্তি এঁদের নেই।

ওঁকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই!” লোকসভা ভোটের প্রচারে স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী যা বলতেন, সেই সুরেই পার্থবাবুর বক্তব্য, “নিজেদের আখের গোছাতে একটি সাম্প্রদায়িক দল ভাগাভাগিকে প্রশ্রয় দিয়ে বাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে!”

সিদ্ধার্থনাথ এ দিন জানান, রাজ্যের করুণ আইনশৃঙ্খলা এবং শাসক দলের সন্ত্রাসের অভিযোগ নিয়ে আগামী ২০ জুন সব জেলাশাসকের কাছে যাবে বিজেপি। তার পরে ২৩ জুন রাজ্য বিজেপি দফতর থেকে ধর্মতলার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত ‘বাংলা বাঁচাও’ শোভাযাত্রা করবে তারা। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু দিন ২৩ জুন থেকে তাঁর জন্মবার্ষিকী ৬ জুলাই পর্যন্ত ‘গ্রামে চলো’ অভিযান হবে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ-দুর্নীতির বিরুদ্ধেও জেলায় জেলায় শীঘ্রই বিক্ষোভ কর্মসূচির পরিকল্পনা হয়েছে।

বিজেপির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে আরএসএস। বিজেপি-র রাজ্য নেতা তথাগত রায়ের উপস্থিতিতে এ দিনই বারুইপুরের রাসমাঠে প্রকাশ্য প্রতিবাদ সভায় আরএসএস ঘোষণা করেছে, কোনও ভাবেই শাসক দলের সন্ত্রাসের কাছে মাথা নত করা হবে না। রাজ্যের সঙ্ঘ চালক অতুল বিশ্বাস এ দিন সঙ্ঘ-সেবকদের উদ্দেশে বলেছেন, “নির্বাচনের পরে শাসক দলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা করছে। সন্ত্রাস হলে প্রয়োজনে রাজ্যের সর্বত্রই আমরা প্রতিরোধের পথে যাব।” সমাবেশে ছিলেন ‘হিন্দু জাগরণ মঞ্চে’র নেতা দিলীপ ঘোষ-সহ একাধিক নেতা এবং হাজার চারেক সঙ্ঘ-সেবক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন