তেরাত্তিরও পেরোল না, শনিবার ফের অর্থলগ্নি সংস্থা রোজ ভ্যালির সদর দফতরে হানা দিল সিবিআই। তদন্তকারীরা জানান, দুপুর থেকে সন্ধে পর্যন্ত সংস্থার সার্ভার কম্পিউটারে খোঁজ চালিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তবে কোনও গ্রেফতারের খবর নেই।
অর্থলগ্নি সংস্থা রোজ ভ্যালি নিয়ে নানা অভিযোগ আগেই উঠেছিল। তার ভিত্তিতে তদন্ত করছিল কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। গত বুধবার সেই সূত্রেই দেশের ১১টি রাজ্যে ৪৩টি জায়গায় তল্লাশি চালান কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের অফিসারেরা। সে দিন রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু, ম্যানেজিং ডিরেক্টর শিবময় দত্তের পাশাপাশি তৃণমূলের অভিনেতা-সাংসদ তাপস পালের দক্ষিণ কলকাতার ফ্ল্যাটেও তল্লাশি চালায় সিবিআই। বেশ কিছু নথিপত্র, পেন ড্রাইভ, সিডি বাজেয়াপ্ত করা হয় সে দিন।
তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, এ দিন বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ সিবিআইয়ের দশ জনের একটি দল সল্টলেক সেক্টর ফাইভে রোজ ভ্যালির সদর দফতরে হানা দেয়। দলে দু’জন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞও ছিলেন। বুধবার ওই সদর দফতরে তল্লাশি চালানোর সময় কয়েকটি সার্ভার কম্পিউটার তাঁরা ‘সিল’ করে দিয়েছিলেন। এ দিন সেই ‘সিল’ খুলে বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধান করা হয়। সন্ধে সাড়ে ছ’টা নাগাদ তল্লাশি শেষ করে বেরিয়ে যায় দলটি। সিবিআইয়ের মুখপাত্র কাঞ্চন প্রসাদ অবশ্য একে ‘তল্লাশি’ বলতে রাজি নন। তাঁর কথায়, “এটা তল্লাশি নয়। আগের দিনের কিছু কাজ বাকি ছিল। সেই কাজ শেষ করতেই দলটি গিয়েছিল।” রোজ ভ্যালির অল ইন্ডিয়া ফিল্ড ট্রেড ইউনিয়নের সম্পাদক অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “কোনও তল্লাশি অভিযান নয়। সিস্টেম থেকে তথ্য নিতে সিবিআই অফিসারেরা এসেছিলেন। আমাদের কর্মীরা সব রকম সাহায্য করেছেন। এই কাজে আরও এক দিন লাগতে পারে।” এই তদন্তকেও স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।
সিবিআই সূত্রের খবর, রোজ ভ্যালি থেকে গত কয়েক মাস টাকা মিলছে না বলে অভিযোগ করছিলেন আমানতকারীরা। কিন্তু বাজার থেকে টাকা তোলা বন্ধ হয়েছিল কি না, তা জানা যায়নি। বুধবারের তল্লাশির সময় সেগুলি পুরোপুরি খোঁজ করা যায়নি। সিবিআইয়ের একাংশ জানান, এ ব্যাপারে তথ্যের জন্য সার্ভার কম্পিউটারই ঘাঁটতে হয়।
তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, এ দিন দুপুরে সংস্থার সদর দফতরে সার্ভার কম্পিউটারগুলির ‘সিল’ খুলে আমানতকারী এবং তাঁদের বিনিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য ঘাঁটা শুরু হয়। ওই কম্পিউটারগুলি থেকেই রোজ ভ্যালির বিভিন্ন শাখা অফিস এবং অন্যান্য দফতরের লেনদেন সংক্রান্ত নথি খতিয়ে দেখা হয়েছে। বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করেছেন গোয়েন্দারা। গুরুত্বপূর্ণ কিছু ই-মেলও তাদের হস্তাগত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তারা। রোজ ভ্যালির কয়েক জন কর্ণধারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলেও সিবিআই সূত্রের দাবি।
তদন্তকারীদের একাংশ বলছেন, শুধু আমানত সংগ্রহ-ই নয়, অথর্লগ্নি ব্যবসার সঙ্গে রোজ ভ্যালির গয়না, বিনোদন ও হোটেল ব্যবসাও জুড়ে ছিল। সেগুলির লেনদেনও ওই সার্ভার থেকে খতিয়ে দেখা হয়েছে।