মানেকসিয়া নিয়ে বৈঠক আজ

আলোচনায় জট কাটুক, চান মালিক-কর্মীরা

বন্ধ হয়ে যাওয়া মানেকসিয়ার অ্যালুমিনিয়াম কারখানা নিয়ে আজ, বুধবার বৈঠক রয়েছে হলদিয়ায় জেলা উপ-শ্রম কমিশনারের দফতরে। এই বৈঠকে শুধু মালিকপক্ষকেই ডাকা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপ-শ্রম কমিশনার মিহির সরকার জানান, ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস দেওয়ার আগেই ওই কারখানার স্থায়ী কর্মীরা দাবিসনদ (চার্টার অফ ডিমান্ড) জমা দিয়েছেন।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪৪
Share:

বন্ধ হয়ে যাওয়া মানেকসিয়ার অ্যালুমিনিয়াম কারখানা নিয়ে আজ, বুধবার বৈঠক রয়েছে হলদিয়ায় জেলা উপ-শ্রম কমিশনারের দফতরে। এই বৈঠকে শুধু মালিকপক্ষকেই ডাকা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপ-শ্রম কমিশনার মিহির সরকার জানান, ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস দেওয়ার আগেই ওই কারখানার স্থায়ী কর্মীরা দাবিসনদ (চার্টার অফ ডিমান্ড) জমা দিয়েছেন। তার প্রেক্ষিতে আজ দুপুরের বৈঠকে শুধু মালিকপক্ষকে বৈঠকে ডাকা হয়েছে। তবে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ নিয়েও সেখানে আলোচনা হবে বলে জানান উপ-শ্রম কমিশনার।

Advertisement

কারখানার মালিকপক্ষও জানিয়েছেন, বৈঠকে মূলত সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক নিয়েই আলোচনা হবে। মানেকসিয়ার গ্রুপ পার্সোনেল ম্যানেজার অনুপম মিত্র বলেন, “উপ-শ্রম কমিশনার স্থায়ী কর্মীদের দেওয়া দাবিসনদ নিয়ে আমাদের মতামত চেয়েছেন। কিন্তু এখন যেহেতু সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিস দেওয়া হয়েছে, তাই আমরা সে বিষয়ে আগে আলোচনা করব।” সমস্যা সমাধানে তাঁরা রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে চান বলেও জানিয়েছেন এই কারখানা কর্তা। অনুপমবাবুর মতে, “নিচুতলায় আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধান হবে না বলে মনে হচ্ছে। আমরা উপরমহলে যোগাযোগ রাখছি।”

গত রবিবার রাতে হলদিয়ার দুর্গাচক এলাকার ঝিকুরখালির এই অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিস ঝুলিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানিয়েছেন, চাপে পড়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। সরাসরি কারও নাম না বলা হলেও কাদের চাপ, তা পরিষ্কার। কারণ, এখানে তৃণমূল প্রভাবিত আইএনটিটিইউসি ছাড়া আরও কোনও শ্রমিক সংগঠনই নেই।

Advertisement

সম্প্রতি এই কারখানায় অস্থায়ী কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু স্থায়ী কর্মীদের বেতন বাড়ানো হয়নি। প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেন একাংশ স্থায়ী কর্মী। কারখানার অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারকে মারধরেরও অভিযোগ ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে। তবে কারখানায় স্থায়ী কর্মীদের কোনও ইউনিয়ন নেই। আইএনটিটিইউসি-র সংগঠন রয়েছে শুধু অস্থায়ী কর্মীদের। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অস্থায়ী কর্মীদের নিয়েই মূল সমস্যা। গ্রুপ পার্সোনেল ম্যানেজার অনুপমবাবুর কথায়, “স্থায়ী কর্মীদের নিয়ে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। ঠিকা কর্মীরা দাবিসনদ না মানায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।” কারখানার আইএনটিটিইউসি পরিচালিত শ্রমিক সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি মিলন মণ্ডলের অবশ্য দাবি, “ওই কারখানায় ঠিকা কর্মীদের নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। স্থায়ী কর্মীরা বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। তা নিয়েই সমস্যা।” তবে মিলনবাবু জানিয়েছেন, তাঁরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পক্ষপাতী। সব মিলিয়ে আজকের বৈঠকে কী হয়, সে দিকেই সকলে তাকিয়ে।

মঙ্গলবার মানেকসিয়ার অ্যালুমিনিয়াম কারখানার গেট বন্ধ ছিল। কর্মীদের কারখানায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে মানেকসিয়ার স্টিল ইউনিটের কাজ স্বাভাবিক ভাবেই হয়েছে। মানেকসিয়ার স্থায়ী কর্মী শেখ নুর মহম্মদ বলেন, “আমরা বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছিলাম। পরে আইএনটিটিইউসি পরিচালিত শ্রমিক সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি মিলনবাবু এবং দুর্গাচক থানার ওসির আশ্বাসে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছিলাম। তার পরে হঠাৎ জানলাম কারখানা বন্ধের নোটিস দেওয়া হয়েছে।” তাঁর কথায়, প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বেতন হয়ে যায়। গত মাসের বেতন এখনও হয়নি! কী হবে বুঝতে পারছি না।

ওই কারখানার পাশে দোকান রয়েছে উত্তম বলিদারের। উত্তমবাবু বলেন, “প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন কারখানার কর্মী টিফিন করতেন। কারখানা বন্ধ হওয়ায় তাঁরা আসছেন না!” পাশেই পান ও মুরগির মাংসের দোকান চালান পদ্মারানি মণ্ডল। তিনি জানালেন, কারখানা বন্ধ হতেই খরিদ্দার কমেছে। তিনি বলেন, “আমার স্বামী এখানে ঠিকাদারের কাছে কাজ করতেন। এই অবস্থায় কী ভাবে সংসার চলবে জানি না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন