ইডি-র নজরে এসজেডিএ-ও

সারদা-কাণ্ডের সঙ্গে ‘শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’র (এসজেডিএ) টাকা নয়ছয়ের মামলাতেও নজর দিল ‘এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট’ (ইডি)। প্রায় ৬০ কোটি টাকার ওই দুর্নীতি মামলায় দলের একাধিক বড় নেতাকে আড়াল করতে তৃণমূল তৎপর হয়েছে বলে আগেই অভিযোগ ছিল বাম-সহ বিরোধীদের। রাজ্যে ভোট চলাকালীন ইডি সেই মামলায় খোঁজখবর নিতে শুরু করায় তাঁদের অনেকে ‘আশার আলো’ দেখতে শুরু করেছেন।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৪০
Share:

সারদা-কাণ্ডের সঙ্গে ‘শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’র (এসজেডিএ) টাকা নয়ছয়ের মামলাতেও নজর দিল ‘এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট’ (ইডি)।

Advertisement

প্রায় ৬০ কোটি টাকার ওই দুর্নীতি মামলায় দলের একাধিক বড় নেতাকে আড়াল করতে তৃণমূল তৎপর হয়েছে বলে আগেই অভিযোগ ছিল বাম-সহ বিরোধীদের। রাজ্যে ভোট চলাকালীন ইডি সেই মামলায় খোঁজখবর নিতে শুরু করায় তাঁদের অনেকে ‘আশার আলো’ দেখতে শুরু করেছেন।

তবে ইডি-র তদন্তের ব্যাপারে জানলেও সরাসরি সে ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। তাঁর বক্তব্য, “মনে রাখা দরকার, এসজেডিএ-র দুর্নীতির বিষয়ে জানার পরে পুলিশে অভিযোগ জানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। সেই মতো এফআইআর হয়। অনেকে গ্রেফতারও হন। দুর্নীতি রুখতে রাজ্য সরকার কতটা বদ্ধপরিকর, তা মানুষ জানেন।”

Advertisement

পক্ষান্তরে, এসজেডিএ-দুর্নীতির তদন্তও ইডি শুরু করায় খুশি সংস্থার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, “যে টাকাটা সরানো হল, সেটা কারা, কাদের দিল তা জানা দরকার। ইডি-র মতো সরকারি সংস্থা তদন্তে নামলে অনেক সত্যই প্রকাশ পাবে, বলে আশা করছি।” তাঁর দাবি, সারদা-কাণ্ডের তদন্তের জন্য দিল্লিতে দরবার করতে গিয়ে বামেরা একাধিক বার এসজেডিএ-দুর্নীতির তদন্তে নজর দিতেও আবেদন জানিয়ে এসেছেন।

ইতিমধ্যে ইডি-র পক্ষ থেকে এসজেডিএ-র এক অফিসারকে ডেকে জেরা করা হয়। কিন্তু ওই অফিসারের জবাবে সন্তুষ্ট না হয়ে ফের সংস্থার কোনও পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারকে তলব করে ইডি। দ্বিতীয় দফায় তলব পাওয়ার পরে, মঙ্গলবার এসজেডিএ-র সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার দীপেশ বণিককে কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। বুধবার দীপেশবাবুর কাছ থেকে ইডি-র অফিসারেরা কোন প্রকল্পের টাকা, কী ভাবে নয়ছয় হয়েছে, সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করবেন।

রাজ্যে পালাবদলের পরে এসজেডিএ-র অন্দরে দুর্নীতির আঁচ পেয়ে কড়া হাতে তা মোকাবিলা করার জন্য আসরে নেমেছিল রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে এফআইআর হওয়ার পরে এসজেডিএ-র তিন ইঞ্জিনিয়ার, ৯ জন ঠিকাদার সংস্থার প্রতিনিধি-কর্তা গ্রেফতার হন। কিন্তু এসজেডিএ-র তৎকালীন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক তথা মালদহের প্রাক্তন জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমারকে গ্রেফতার করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অপসারিত হন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কে জয়রামন। এর পরেই মামলায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন ওঠে।

ওই মামলায় শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক তথা এসজেডিএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ির প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জন শীলশর্মা, জলপাইগুড়ি তৃণমূলের সাংগঠনিক সভাপতি চন্দন ভৌমিককে জেরা করা হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, নেতা-কর্তাদের ভূমিকা আড়াল করতে শাসক দলের একাংশ তৎপর হয়েছে। এর পরে মামলার তদন্ত খানিকটা শ্লথ হয়ে পড়ে বলে পুলিশ এবং এসজেডিএ সূত্রেই জানা গিয়েছে।

এই অবস্থায়, ইডি দুর্নীতি-মামলা নিয়ে তদন্তে নামায় এসজেডিএ-র অন্দরেও নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। সংস্থার একাধিক অফিসার জানান, কোথাও সরকারি টাকা নয়ছয় হলে ও তা অন্যত্র সরানো হলে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ইডি খোঁজখবর নিতে ও তদন্ত করতে পারে। যে হেতু কেন্দ্রীয় নানা প্রকল্প-খাত থেকে এসজেডিএ বরাদ্দ পেয়ে থাকে, সে জন্য ইডি সেই টাকা কী ভাবে কোথায় সরানো হয়েছে, তা নিয়ে নিশ্চিত হতে চাইছে বলে এসজেডিএ-র অনেকেই ভাবছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন