ইলিশ মিলবে কবে, এ বার দিল্লির দিকে তাকিয়ে রাজ্যবাসী

আর মাত্র কয়েকটা দিন। সামনের বুধবার জামাইষষ্ঠী। অথচ এ রাজ্যের শাশুড়িরা অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন, এবারও কি জামাইয়ের পাতে পড়বে না পদ্মার ইলিশ? ইলিশ আমদানিকারীরা তাকিয়ে রয়েছেন দিল্লির দিকে। তাঁদের ভরসা, পারলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই পারবেন। যদিও তিনি ১০০ শতাংশ নিরামিশাষী, প্রিয় খাবার গুজরাতের ধোকলা আর খাকরা। তা বলে বাঙালির ইলিশপ্রীতি একেবারেই বুঝবেন না? মোদীর কূটনীতির প্রথম ফসল হবে ‘জলের রুপোলি শস্য,’ এমনই আশা করছেন রাজ্যবাসী।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৪ ০৩:২৩
Share:

কবে পাতে পড়বে? —নিজস্ব চিত্র।

আর মাত্র কয়েকটা দিন। সামনের বুধবার জামাইষষ্ঠী। অথচ এ রাজ্যের শাশুড়িরা অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন, এবারও কি জামাইয়ের পাতে পড়বে না পদ্মার ইলিশ?

Advertisement

ইলিশ আমদানিকারীরা তাকিয়ে রয়েছেন দিল্লির দিকে। তাঁদের ভরসা, পারলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই পারবেন। যদিও তিনি ১০০ শতাংশ নিরামিশাষী, প্রিয় খাবার গুজরাতের ধোকলা আর খাকরা। তা বলে বাঙালির ইলিশপ্রীতি একেবারেই বুঝবেন না? মোদীর কূটনীতির প্রথম ফসল হবে ‘জলের রুপোলি শস্য,’ এমনই আশা করছেন রাজ্যবাসী।

বাংলাদেশ থেকে দীর্ঘদিন ধরে এ রাজ্যে ইলিশ আমদানিকারীদের সংগঠন ‘ফিস ইমপোর্টাস্ অ্যাসোসিয়েশন।’ এদেশে ইলিশ রফতানির উপর বাংলাদেশ সরকার যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তা তুলে নেওয়ার জন্য সদস্যরা বহুদিন ধরেই দুই দেশের সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। হিলশার সভাপতি অতুলচন্দ্র দাসের অভিযোগ, ‘বাংলাদেশ সরকার যাতে ইলিশ রফতানির উপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রের কাছে বহুবার আবেদন করেছি। কিন্তু তারা উদ্যোগ নেয়নি। ওদেশের সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা পর্যন্ত বলেনি।’ অতুলবাবুর আশা, মোদী এ বিষয়ে নিশ্চয় উদ্যোগী হবেন। বাংলাদেশ এখনও অনুমতি দিলে জামাইষষ্ঠীর আগেই ইলিশ আসতে পারে বাজারে।

Advertisement

বাংলাদেশের বাজারে ইলিশের জোগান বাড়িয়ে দাম মধ্যবিত্তের আয়ত্তে রাখতে ২০০৭ সালে ইলিশ রফতানি নিষিদ্ধ করে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এরপর শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে ২০০৯ সালে ইলিশ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা আংশিক প্রত্যাহার করলেও, মাছের মাপ অনুযায়ী ইলিশের রফতানি দর বেধে দেয়। কিন্তু ও দেশের বাজারে ইলিশের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকে রফতানির সিদ্ধান্তকে দায়ী করেন। এর পর ২০১২ সালের ৩১ জুলাই ইলিশ রফতানি তিন মাসের জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার।

সেই নিষেধাজ্ঞা আর ওঠেনি। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের বণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ দিল্লি গেলে দিল্লির তরফে ইলিশ রফতানির উপর নিষেধ তুলে নেওয়ার আর্জি জানানো হয়। গত ২২ জানুয়ারি ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ সারন ঢাকায় বাংলাদেশের মৎস্য ও জলসম্পদ মন্ত্রী মহম্মদ শায়েদুল হকের সঙ্গে দেখা করে ভারতে ইলিশ রফতানির ওপর সব রকমের বিধি নিষেধ তুলে নেওয়ার আর্জি জানান। মন্ত্রী তাঁকে আশ্বাস দেন,বাণিজ্য মন্ত্রালয়ের সঙ্গে কথা বলে শীঘ্রই এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত তিনি ঘোষণা করবেন।

বাংলাদেশ সরকার ইলিশ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেও অবশ্য এ রাজ্যে ইলিশ ঢোকা বন্ধ করতে পারেনি। চোরাপথে প্রতি মরসুমেই দেদার ঢুকেছে ইলিশ। ফলে ওদেশের ঘরোয়া বাজারে যেমন দাম কমেনি, তেমনি বিপুল রাজস্ব থেকেও সরকার বঞ্চিত হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, বিধি নিষেধ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশায় বুক বেঁধেছিলেন আমদানিকারিরা। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত এখনও কার্যকর না হওয়ায় তাঁরা হতাশ। অতুলবাবু বলেন, “ওদেশের প্রধানমন্ত্রী এখনও ওই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন নি।”

এ রাজ্যে মূলত ভোলা মনপুরা বরিশালের পদ্মা-মেঘনার ইলিশ আসে। ওদেশে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে নোনা জল ছেড়ে মাছ মিষ্টি জলের সন্ধানে মোহনায় উঠে আসে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ রাজ্যে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ইলিশের চাহিদা বেড়ে গিয়েছে।

ক্রেতারা ইতিমধ্যেই বাজারে গিয়ে ইলিশের খোঁজ করছেন। ঘনশ্যাম হালদার নামে বনগাঁর এক মাছ বিক্রেতা জানালেন, “ইলিশ সম্পর্কে তথ্যের জোগান দিতেই সময় চলে যাচ্ছে। ইলিশ না পেয়ে বহুদিনের বরফে-থাকা ইলিশ কিনছেন কেউ কেউ। পরের দিন বাজারে এসে বিক্রেতাকে কটু কথাও তাঁরা শুনিয়ে যাচ্ছেন সেই স্বাদ না পেয়ে।” বনগাঁর বাসিন্দা সায়ন্তনী ভট্রাচার্য সম্প্রতি মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।

তাঁর কথায়, “ভেবেছিলাম মেয়ে জামাইকে এ বার জামাইষষ্ঠীতে বাংলাদেশি ইলিশ খাওয়াব। তা আর হল কই? আমার বিয়ের পর বাপের বাড়িতে প্রথম জামাইষষ্ঠীতে ইলিশ খেয়েছিলাম।” সায়ন্তনীদেবীর একটাই ভরসা। “মোদী যদি হাসিনাকে বলে ইলিশ ঢোকার করে দেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন