উপকূল রক্ষায় গা নেই, পর্যটন নিয়ে দিবাস্বপ্ন

সপার্ষদ সাগরদ্বীপে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দ্বীপকে কেন্দ্র করে পর্যটনে বিকাশের কথাও জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রশাসনেরই একাংশের বক্তব্য, উপকূল পর্যটনে সরকারের যতটা উৎসাহ, উপকূল রক্ষার ব্যাপারে তার সিকি ভাগও নেই। এমনকী রাজ্যে উপকূলের সবিস্তার মানচিত্র তৈরির কাজও শেষ করতে পারেনি তারা।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫৬
Share:

সপার্ষদ সাগরদ্বীপে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দ্বীপকে কেন্দ্র করে পর্যটনে বিকাশের কথাও জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রশাসনেরই একাংশের বক্তব্য, উপকূল পর্যটনে সরকারের যতটা উৎসাহ, উপকূল রক্ষার ব্যাপারে তার সিকি ভাগও নেই। এমনকী রাজ্যে উপকূলের সবিস্তার মানচিত্র তৈরির কাজও শেষ করতে পারেনি তারা।

Advertisement

রাজ্যের উপকূলের অবস্থা কী, তা জানতে পরিবেশ দফতর ভূতাত্ত্বিক ও পরিবেশ মানচিত্র তৈরির পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু সেই কাজ এগোয়নি বললেই চলে। পরিবেশ দফতরের একাংশ বলছেন, সাগরের কাছে জলস্তর বৃদ্ধি এবং নদীর গতিপথ বদলের জন্য ভাঙন বাড়ছে। মৌসুমি আইল্যান্ড, জম্বুদ্বীপের মতো দ্বীপগুলি ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে। একটু একটু করে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে ঘোড়ামারা দ্বীপ। তাই সাগরে পর্যটন কেন্দ্র গড়তে গেলে সেখানকার ভূতাত্ত্বিক গঠন জানা প্রয়োজন। আর সেই জন্যই দরকার ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র। ২০০৯ সালেই সুন্দরবনে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় আয়লা। তছনছ হয়ে গিয়েছিল বিস্তীর্ণ অঞ্চল। “ফের ওই ধরনের ঝড় হলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে নতুন পর্যটন কেন্দ্র,” মন্তব্য পরিবেশ দফতরের এক বিজ্ঞানীর।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক তুহিন ঘোষের মতে, উপকূলে ভাঙন রোধ করতে এই মানচিত্র যেমন জরুরি, তেমনই ওই এলাকায় ঠিকমতো পর্যটন কেন্দ্র গড়তে কী কী প্রয়োজন, সেটাও এর থেকে জানা যায়। তাঁর ব্যাখ্যা, সাগরে পর্যটন কেন্দ্র গড়তে গেলে সড়ক ও নদী পরিবহণ, স্বাস্থ্য-সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো প্রয়োজন। সেই সঙ্গে ওই এলাকার পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁচানোর যথাযথ পরিকল্পনা করাও জরুরি। তুহিনবাবু বলেন, “চারটে হোটেল গড়ে উঠল আর এক দল লোক ভিড় করল এর মানেই কিন্তু পর্যটন কেন্দ্র নয়!”

Advertisement

পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর, উপকূল বাঁচানোর জন্য দেশ জুড়ে একটি সুসংহত প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। সেই প্রকল্পের আওতায় আছে পশ্চিমবঙ্গও। তার বেশির ভাগ টাকাই জোগাত বিশ্বব্যাঙ্ক। সেই প্রকল্পেই সাগরদ্বীপে ইকো-ট্যুরিজম বা পরিবেশ-পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাঙ্কের সর্বশেষ পর্যালোচনা রিপোর্ট অনুযায়ী, এ রাজ্যে উপকূল বাঁচানোর গোটা প্রকল্পটাই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। ২০১৫ সালে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তার কাজ শেষ হবে না বলেই আশঙ্কা করছে তারা।

সাগরে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে ২০১১ সাল থেকেই নানা ভাবে টালবাহানা চলছে বলে পরিবেশ দফতরের একাংশের অভিযোগ। প্রথমে একটি সংস্থাকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাঙ্কের কর্তারা তাদের কাজে সন্তুষ্ট হননি। পরে অন্য একটি সংস্থাকে আনা হয়। সেই সংস্থা ২০১৩ সালে প্রকল্পের পরিকল্পনা করে দেয়। তার পর থেকে প্রায় এক বছর ধরে কাজ এগোয়নি বলে অভিযোগ।

তবে পরিবেশ দফতরের এক কর্তার দাবি, “সাগরে পরিবেশ-পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের ব্যাপারে কিছু কাজের দরপত্র সম্প্রতি চূড়ান্ত হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।” যদিও ওই দফতরের অন্য একটি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী সাগরে যাচ্ছেন, এ কথা জানার পরে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তড়িঘড়ি বাস টার্মিনাস তৈরি, কপিলমুনির মন্দিরের সামনে ডালা আর্কেড তৈরি-সহ কয়েকটি কাজের দরপত্র চূড়ান্ত করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু গোটা প্রকল্পের বিচারে সেটা কিছুই নয়।

পরিবেশের ক্ষতি করে পর্যটন যে সম্ভব নয়, তা মেনে নিয়েছেন রাজ্যের পরিবেশ ও পর্যটন দফতরের একাধিক কর্তা। তাঁরাও বলছেন, অবৈজ্ঞানিক পন্থা ও পদ্ধতিতে উপকূলে কোনও রকম পর্যটন কেন্দ্র গড়া উচিত নয়।

“উপকূলে পর্যটন কেন্দ্র গড়তে হলে পরিবেশ-ছাড়পত্র নিয়েই এগোনো হবে,” আশ্বাস দিয়েছেন পর্যটনমন্ত্রী ব্রাত্য বসু। কিন্তু পর্যটন কেন্দ্র গড়ার পূর্বশর্ত হিসেবে যে-মানচিত্র হাতে পাওয়া দরকার, পরিবেশ দফতর এখনও সেটাই তৈরি করে উঠতে পারেনি। তারা যে-গতিতে মানচিত্রের কাজ করছে, তাতে পরিবেশ-ছাড়পত্র কী ভাবে মিলবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন