এক যাদবপুর কাণ্ডেই কুড়ি মামলা, পুলিশ নাজেহাল

শুরু হয়েছিল একটি দিয়ে। এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ। যার জেরে পরবর্তী ছাব্বিশ দিনে দায়ের হয়েছে আরও ঊনিশটি মামলা। এবং যাদবপুর কাণ্ডে এই গোটা কুড়ি মামলা সামাল দিতে পুলিশ এই মুহূর্তে কার্যত হিমসিম খাচ্ছে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে তিন সপ্তাহের মধ্যে এতগুলো মামলা দেখে লালবাজারের কর্তারাও হতচকিত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫৫
Share:

শুরু হয়েছিল একটি দিয়ে। এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ। যার জেরে পরবর্তী ছাব্বিশ দিনে দায়ের হয়েছে আরও ঊনিশটি মামলা।

Advertisement

এবং যাদবপুর কাণ্ডে এই গোটা কুড়ি মামলা সামাল দিতে পুলিশ এই মুহূর্তে কার্যত হিমসিম খাচ্ছে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে তিন সপ্তাহের মধ্যে এতগুলো মামলা দেখে লালবাজারের কর্তারাও হতচকিত। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, ছাত্রছাত্রীরা জড়িত থাকায় প্রতিটি মামলাই স্পর্শকাতর। যে কোনও হঠকারী পদক্ষেপে ক্যাম্পাস তথা মহানগর ফের উত্তাল হয়ে উঠতে পারে। তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে চরম সতর্ক হয়ে এগোতে হচ্ছে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রী ও কর্তৃপক্ষের তরফে রবিবার পর্যন্ত ১৮টি মামলা দাখিল হয়েছে যাদবপুর থানায়। কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানায় জমা পড়েছে দু’টি অভিযোগ। যাদবপুর থানায় রুজু হওয়া মামলাগুলির মধ্যে ১৬টি-ই শ্লীলতাহানির। তার প্রথমটিতেই দুই ছাত্রকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। লালবাজারের এক কর্তা এ দিন বলেন, “শ্লীলতাহানির সব মামলার তদন্ত গোয়েন্দা বিভাগের মহিলা শাখার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাইবার ক্রাইম থানা দু’টো মামলা করেছে। অন্য দু’টো রয়েছে যাদবপুর থানার হাতে।”

Advertisement

যাদবপুর কাণ্ডে পুলিশের কাছে প্রথম মামলাটি দাখিল হয়েছিল গত ২ সেপ্টেম্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী সে দিন যাদবপুর থানায় অভিযোগ করেন, ২৮ অগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তাঁর শ্লীলতাহানি করেছে অজ্ঞাতপরিচয় কিছু ছাত্র। যাদবপুর থানা তখন তদন্তে নেমে অভিযুক্তদের ধরতে পারেনি। পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের একাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, যা ক্রমে আন্দোলনের চেহারা নেয়।

এবং এরই সূত্র ধরে যাদবপুর চত্বরে সাম্প্রতিক অস্থিরতার সূচনা। বিক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির দাবিতে ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে যাদবপুরের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীকে ঘেরাও করেছিলেন। উপাচার্যের ‘বিপদ-বার্তা’ পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করতে গভীর রাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢোকে। অভিযোগ, ছাত্রছাত্রীদের বেদম মারধর করা হয়, এমনকী ছাত্রীদেরও রেয়াত করা হয়নি। পর দিন ১৫ জন ছাত্রী যাদবপুর থানায় লিখিত ভাবে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনেন। আলাদা আলাদা ভাবে দায়ের করা অভিযোগগুলির বক্তব্য: আগের রাতে (১৬ সেপ্টেম্বর) উপাচার্য, কলকাতা পুলিশের এক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও যাদবপুর থানার এক আধিকারিক তাঁদের শ্লীলতাহানি ও মারধর করেছেন।

ছাত্রীদের অভিযোগগুলি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে গোয়েন্দা বিভাগে। যদিও মূল তদন্তে এখনও হাত পড়েনি। কেন? পুলিশ-সূত্রের দাবি: কোন পদস্থ কর্তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ এলে প্রথমে তা খতিয়ে দেখা হয়। তার পরে মূল তদন্ত। এ ক্ষেত্রে প্রথম প্রক্রিয়া শেষ হয়নি বলেই মূল তদন্ত শুরু হয়নি। ইতিমধ্যে পুজো এসে যাওয়ায় প্রাথমিক তদন্তের পর্ব কবে শেষ হবে, সে ব্যাপারে পুলিশেরই অন্দরে সংশয় রয়েছে।

১৭ তারিখে থানায় অভিযোগ পেশ করেন যাদবপুরের রেজিস্ট্রার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘বেআইনি জমায়েত’ নিয়ে। যাদবপুর থানা তার তদন্ত করছে। এর পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন নালিশ নিয়ে লালবাজারের সাইবার ক্রাইম বিভাগের দ্বারস্থ হন। তাতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক করে উপাচার্যের বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।

গত বুধবার দুপুরে হাইকোর্ট যাদবপুর ক্যাম্পাসে অচলাবস্থা নিরসনের নির্দেশ দেয়। যার প্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে কিছু নতুন নিয়ম চালু করার কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি জারি করেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। এবং সে দিনই উপাচার্য ফের পুলিশের দ্বারস্থ হন। লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ না-মেনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কিছু পড়ুয়া ও বহিরাগত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনের (অরবিন্দ ভবন) চারপাশে জড়ো হয়ে অচলাবস্থা তৈরি করছিলেন, মিডিয়ার লোকজনও গেট পাস ছাড়া ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি করেছেন। এমনকী, তাঁকেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিজিৎবাবুর দাবি। তার ভিত্তিতে যাদবপুর থানা ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ ছাত্র-ছাত্রী ও বহিরাগতদের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে।

বৃহস্পতিবারই সাইবার ক্রাইমে আর একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। এই অভিযোগকারিণীই যাদবপুর থানায় শ্লীলতাহানির প্রথম অভিযোগটি করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, এক সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটে তাঁর নামে কুৎসা রটানো হয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই পেজটিকে বন্ধ করে দিলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

“বলতে গেলে যাদবপুর নিয়ে আমাদের সুতোর উপর দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে।” মন্তব্য এক পুলিশ অফিসারের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement