কেমন আছে রাজহাঁসগুলো, পিজিতে প্রশ্ন মদনের

সবার প্রশ্ন, তিনি কেমন আছেন? তিনি জানতে চান, কেমন আছে এসএসকেএম হাসপাতালের রাজহাঁসগুলো! মদন মিত্র এমনই। পুরনো টান চট করে ছিঁড়তে চান না। জেলে থেকেও নেত্রীবন্দনায় অবিচল তিনি। গ্রেফতার হওয়ার আগেই মুকুল রায়ের মতো ডেলো পাহাড়ের বৈঠক নিয়ে বেফাঁস কথা বলে নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলেননি তিনি। পড়লে ডালপালা নিয়েই পড়বেন ঘনিষ্ঠমহলে একটা সময়ে এমন কথা জানিয়েছিলেন বটে, তবে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়গান গাওয়ার সুযোগ একটি বারের জন্যেও হাতছাড়া করেননি তিনি। শনিবারও তার ব্যতিক্রম হল না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৫
Share:

এসএসকেএম থেকে বেরনোর পথে মদন মিত্র। ছবি: রণজিৎ নন্দী

সবার প্রশ্ন, তিনি কেমন আছেন? তিনি জানতে চান, কেমন আছে এসএসকেএম হাসপাতালের রাজহাঁসগুলো!

Advertisement

মদন মিত্র এমনই। পুরনো টান চট করে ছিঁড়তে চান না। জেলে থেকেও নেত্রীবন্দনায় অবিচল তিনি। গ্রেফতার হওয়ার আগেই মুকুল রায়ের মতো ডেলো পাহাড়ের বৈঠক নিয়ে বেফাঁস কথা বলে নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলেননি তিনি। পড়লে ডালপালা নিয়েই পড়বেন ঘনিষ্ঠমহলে একটা সময়ে এমন কথা জানিয়েছিলেন বটে, তবে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়গান গাওয়ার সুযোগ একটি বারের জন্যেও হাতছাড়া করেননি তিনি। শনিবারও তার ব্যতিক্রম হল না।

আগের দিনই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে বাধা দেওয়ায় পুলিশকে ধমকেছিলেন পরিবহণ মন্ত্রী। শনিবার ফের তিনি এসএসকেএম হাসপাতালে রুটিন চেক-আপে এলে পুলিশ আর ওই পথে হাঁটেনি। সেই সুযোগে সংবাদমাধ্যমকে হাতের কাছে পেয়ে ফের এক দফা মুখ্যমন্ত্রীর জয়গান করে গেলেন মদন। বললেন, “পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই শেষ কথা।” দাবি করলেন, আরও ২০ বছর রাজ্যে ক্ষমতায় থাকবে দল। আরও ভাল ফল হবে তৃণমূলের আসন্ন উপনির্বাচনে।

Advertisement

এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ সাদা স্করপিও গাড়িতে চাপিয়ে মদনকে হাসপাতালে আনা হয়। আগে-পিছে পুলিশের পাঁচটি গাড়ি। হাসপাতালে পৌঁছেই ওয়ার্ডের চারপাশ ঘিরে নেয় পুলিশ। সওয়া এক ঘণ্টার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে ওয়ার্ড থেকে বেরনোর পথে সংবাদমাধ্যমকে ডেকে দাঁড়িয়ে পড়েন মদন। সাংবাদিকরা তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির কথা জানতে চাইলেও নিজের শরীর নিয়ে একটি কথাও বলেননি। বরং গড়গড় করে ইংরেজিতে তিনি বলে যান নেত্রীর কথা, ভোটে দলের ভাল ফলের কথা। এর পরেই গাড়িতে উঠে হাসপাতাল ছাড়েন মন্ত্রী। এটা বেশ স্পষ্ট, মুকুল রায়ের পথে হাঁটতে রাজি নন মদন। সিবিআইয়ের কাছে যাওয়ার আগেই ডেলোর বৈঠক নিয়ে বিতর্ক বাড়িয়ে মুকুল অস্বস্তিতে ফেলেছেন দলনেত্রীকে। মদন কিন্তু গ্রেফতার হওয়ার পরেও মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি তিনি কতটা অনুগত, সেটা বোঝাতে প্রায় প্রতি বারই আদালতে পৌঁছে দলনেত্রীর স্তুতি করেছেন। স্লোগানও তুলেছেন নিজে থেকেই। এ দিন আরও এক ধাপ এগিয়ে আসন্ন উপনির্বাচনে দলের জয় ও আরও অন্তত চার দফায় সরকারে থাকার কথা বলে দলনেত্রীর প্রতি আনুগত্যেরই বার্তা দিলেন তিনি।

মন্ত্রী নিজে শরীর নিয়ে কিছু না বললেও এসএসকেএম সূত্রে জানানো হয়েছে, তিনি সুস্থই আছেন। তবে শ্বাসের কিছুটা সমস্যা এখনও আছে। তাই ওষুধের ডোজ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। দু-তিন সপ্তাহ পরে ফের মন্ত্রীকে চেক-আপে আসতে বলেছেন চিকিৎসকেরা। মদন যে সুস্থ আছেন তা তাঁর কথাবার্তাতেই বোঝা গিয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, উডবার্ন ওয়ার্ডে ঢুকেই তিনি ডাক্তারদের বলেন, “টেনশন করবেন না। আজ ভর্তি হতে আসিনি। রুটিন চেক-আপে এসেছি।”

গ্রেফতার হওয়ার পর বারবার তাঁর হাসপাতাল যাত্রা যে চিকিৎসকদেরও বিড়ম্বনায় ফেলেছে, পরোক্ষে সেটাই কার্যত কবুল করলেন মন্ত্রী। হালে ‘রোগী’ হিসেবে বারবার দেখা দিলেও পিজি-র সঙ্গে মদনের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। এক সময় তিনি এই হাসপাতালকে ছ’টি রাজহাঁস দিয়েছিলেন। সেই হাঁসগুলি এখনও হাসপাতালের পুকুরেই ঘুরে বেড়ায়। মন্ত্রী এ দিন ডাক্তারদের কাছে জানতে চান, কেমন আছে হাঁসগুলো? পরামর্শ দেন সেগুলোর দিকে খেয়াল রাখতে। ডাক্তারদের কয়েক জন মন্ত্রীকে জানান, এসএসকেএমের প্রতিষ্ঠা দিবস শুক্রবার। সেই উপলক্ষে অনুষ্ঠান হবে। কিন্তু মদন এ বার তাতে থাকতে পারবেন না। এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা গেল ডাক্তারদের একাংশকেও।

এ সম্পর্কও যে দীর্ঘদিনের!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন