তৃণমূল যখন সারদা কাণ্ডে বিপর্যস্ত এবং দলেরই একাংশের বিদ্রোহে জেরবার, তখন বিজেপি-র বিড়ম্বনা হয়ে দেখা দিলেন তাদের সাংসদ কীর্তি আজাদ!
দ্বারভাঙার এই বিজেপি সাংসদ অরাজনৈতিক সফরে শনিবার কলকাতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সততার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, তিনি মমতাকে দীর্ঘ দিন ধরে চেনেন। তাঁর পক্ষে কোনও অসৎ কাজে লিপ্ত থাকা সম্ভব বলে তিনি বিশ্বাসই করেন না! সিবিআই-কে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। আরও বলেছিলেন, সিবিআই তদন্ত হলেই কেউ দোষী হয়ে যায় না। প্রথমে অভিযুক্ত হলেও সিবিআই পরে ছাড় দিয়েছে, এমন অনেক উদাহরণ আছে। কারও কারও মতে এই মন্তব্যের ইঙ্গিত আসলে কীর্তির দলেরই সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের দিকে! বিজেপি অবশ্য তৎক্ষণাৎ বুঝিয়ে দিয়েছিল, কীর্তির ওই মন্তব্য দল অনুমোদন করে না। তার পরেও দমেননি ১৯৮৩-র ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের এই সদস্য। রবিবার তিনি হাজির হয়েছিলেন কালীঘাটে! মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে প্রায় আধ ঘণ্টা দু’জনের মধ্যে কথাবার্তা হয়েছে। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, মমতার কাছে কীর্তি ইঙ্গিত দিয়েছেন, তৃণমূলের সঙ্গে ‘রাজনৈতিক সম্পর্ক’ তৈরিতেও তাঁর আপত্তি নেই।
সারদা এবং খাগড়াগড় বিস্ফোরণ নিয়ে বিজেপি এখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রবল আক্রমণাত্মক। রাজ্য সফরে এসে স্বয়ং অমিত তৃণমূলকে নিশানা করে যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে দলের তিন বারের সাংসদের কীর্তিতে অস্বস্তিতেই পড়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। আর নিজেদের দলে বিদ্রোহে বিব্রত তৃণমূল এতেই অক্সিজেন খুঁজছে! বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে এ রাজ্যের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ শনিবারই কীর্তির মন্তব্য জেনে বলেছিলেন, ওটা তাঁর ব্যক্তিগত মত। কীর্তি এ দিন মমতার বাড়ি যাওয়ার পরে প্রশ্ন উঠছে, দল অনুমোদন না করলে কেবল ব্যক্তিগত উদ্যোগে কি কীর্তির পক্ষে এত দূর যাওয়া সম্ভব? সিদ্ধার্থনাথের জবাব, “ব্যক্তিগত ভাবে তিনি কোথাও যেতে পারেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে দলের তরফে কোনও কথা বা বিবৃতি দেওয়ার অধিকার ওঁর নেই।” বিজেপি-র মতো দলে একা সিদ্ধার্থনাথের পক্ষে অবশ্য কীর্তিকে নিয়ে রাতারাতি কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া সম্ভবও নয়।
তৃণমূল সূত্রের খবর, বিজেপি-তে ‘প্রাপ্য মর্যাদা’ না পাওয়ায় কীর্তি ক্ষুণ্ণ। সতীর্থদের কাছে তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় এমন অন্তত ৪৯ জন আছেন, যাঁরা রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় তাঁর চেয়ে পিছিয়ে! কীর্তির যেমন এই ক্ষোভ আছে, তেমনই মমতার সঙ্গে তাঁর পারিবারিক সূত্রে পরিচয় আছে। কীর্তির বাবা বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রাক্তন সাংসদ ভগবৎ ঝা আজাদকে মমতা শ্রদ্ধা করতেন। ভগবৎ প্রথম জীবনে কংগ্রেসে ছিলেন। পরে তিনি বিজেপি-তে যোগ দেন। পূর্বপরিচিত ‘দিদি’র শহরে কীর্তি এসেছিসেন সাংসদদের দলের হয়ে ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে এবং কলকাতা সাহিত্য উৎসবের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। কলকাতায় কোনও হোটেলে না উঠে তিনি রাত কাটিয়েছেন তৃণমূলের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের বাড়িতে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কোনও বিজেপি সাংসদের কাছে যা অভাবনীয়! ডেরেকের কথায়, “সারদা এবং অন্যান্য বিষয়ে বিজেপি-র কী অবস্থান, সেটা জেনেই কিন্তু কীর্তি যা বলার বলেছেন। বাকিটা বুঝে নিন!”