কর্মী নিয়োগ হয়নি ২৭ বছর, কাজ শিকেয় সরকারি সংস্থায়

কাজ অফুরন্ত। অথচ বাড়ন্ত কর্মী। নবীনতম ইঞ্জিনিয়ারের বয়স ৫০। প্রায় ২৭ বছর নিয়োগ হয়নি কোনও ইঞ্জিনিয়ার। আর এর জেরেই নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ সারতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে তাঁদের। এমনই বেহাল দশা কলকাতা মেট্রোপলিটন ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন অথরিটির (কেএমডব্লিউএসএ)।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৪ ০৩:৩২
Share:

কাজ অফুরন্ত। অথচ বাড়ন্ত কর্মী। নবীনতম ইঞ্জিনিয়ারের বয়স ৫০। প্রায় ২৭ বছর নিয়োগ হয়নি কোনও ইঞ্জিনিয়ার। আর এর জেরেই নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ সারতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে তাঁদের। এমনই বেহাল দশা কলকাতা মেট্রোপলিটন ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন অথরিটির (কেএমডব্লিউএসএ)।

Advertisement

কেএমডব্লিউএসএ সূত্রে খবর, ১৯৬৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় কলকাতা মেট্রোপলিটন এলাকার জল সরবরাহ, স্যুয়ারেজ ও নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য একটি সংস্থা তৈরির প্রস্তাব পেশ হয়। তা পাঠানো হয় ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের কাছে। তাঁর সম্মতি নিয়েই ১৯৬৬-র মে মাস নাগাদ রাজ্য সরকারের অধীনে একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে গঠিত হয় কলকাতা মেট্রোপলিটন ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন অথরিটি বা কেএমডব্লিউএসএ। এই সংস্থাটি পুরসভাগুলির মধ্যে সংযোগ সাধনকারী সংস্থা হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে প্রধানত উলুবেড়িয়া, হাওড়া, বালি, কলকাতা, মহেশতলা, বজবজ, ও পূজালি পুর-এলাকায় কেএমডব্লিউএসএ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করে। এর বাইরেও বিভিন্ন পুর-এলাকায় প্রকল্পের কাজ করতে হয় এই সংস্থাকে। কিন্তু এই সংস্থার কর্মী-সমস্যা বর্তমানে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করেছ যে এক একজন ইঞ্জিনিয়ারকে প্রায় দু’টি করে বিভাগ সামলাতে হচ্ছে।

সংস্থা সূত্রে খবর, জেএনএনইউআরএম-এর মতো কোনও প্রকল্প সর্ম্পূণ করতে গেলে দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তার জন্য এই সংস্থার বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ স্বতন্ত্র ভাবে কাজ করে। প্রতিটি বিভাগেই একজন করে এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার থাকেন। কিন্তু কেএমডব্লিউএসএ-তে একজন এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকেই দু’টি করে বিভাগ সামলাতে হচ্ছে। ফলে গোটা প্রক্রিয়ায় ভাটার টান পড়াটাই স্বাভাবিক।

Advertisement

কী ভাবে শুরু করা হয় জেএনএনইউআরএম-এর প্রকল্প?

এই সংস্থা থেকে কোনও প্রকল্পের পরিকল্পনা করে তা পাঠানো হয় কেএমডিএ-র কাছে। সেখানে থাকা কমিটি পরিকল্পনাটি পাঠান রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর কাছে। তার পর আর একটি কমিটির মাধ্যমে মন্ত্রী ওই পরিকল্পনা বিষয়ে তাঁর মত পাঠান। সেটি আবার এই সংস্থা থেকেই পাঠানো হয় দিল্লিতে নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে। তার পরে ওই প্রকল্প পাশ হলে তার বার্তা আসার পর থেকে সেই খাতে ৩৫ শতাংশ অর্থ দেয় কেন্দ্র। বাকি ৬৫ শতাংশ দেয় রাজ্য। শুরু হয় কাজ। আর তার ফলেই প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ারদের নাস্তানাবুদ অবস্থা হয়। সেই সময় আরও একটি অন্য বিভাগের প্রকল্পের কাজ শুরু হলে চাপ আরও বাড়ে। ফলে প্রকল্পের কাজ কতটা সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করা যায় তা নিয়ে যথেষ্টই সন্দিহান কর্মীদের একাংশ।

তার উপর হিড়িক পড়েছে এই সংস্থা থেকে ইঞ্জিনিয়ারদের অন্যত্র নিয়ে চলে যাওয়ার প্রবণতা। সূত্রের খবর অনুযায়ী, কয়েক মাসের মধ্যেই দু’জন চিফ ইঞ্জিনিয়ার, একজন অতিরিক্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার-সহ মোট বারো জন ইঞ্জিনিয়ারকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। কেউ হিডকোয় তো কেউ হাওড়ায়। এর ফলে এই সংস্থা কার্যত অসহায় হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ। এ ছাড়া, সব থেকে বড় সমস্যা ১৯৮৭ সালে শেষ বারের মতো এই সংস্থায় কর্মী নিয়োগ হয়েছিল। ফলে এখান নবীনতম সদস্যদের অবসর নিতে গড়ে মাত্র সাত বছর বাকি রয়েছে। নতুন কোনও মুখও আসেনি এই সংস্থায়। যেমন সিভিল বিভাগে ২৭ জন এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার থাকার কথা, কিন্তু আছেন মাত্র ৮ জন। আবার ‘ইলেকট্র্রিকাল ও মেকানিকাল বিভাগে ১৩ জন এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের জায়গায় আছেন মাত্র ৭ জন। অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ও সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ফলে সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে কপালে ভাঁজ পড়েছে সাধারণ মানুষেরও।

কী ভাবে নিয়োগ হয় কর্মী?

সংস্থা সূত্রে খবর, মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করেন। কিন্তু রাজ্য সরকারের অনুমোদন ছাড়া তা সম্ভব হয় না। অর্থাৎ সরকার যতক্ষণ না পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগের বিষয়ে উদ্যোগী হচ্ছে ততক্ষণ তা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।

সমস্যা নিয়ে কী কী প্রকল্পের কাজ করতে হবে এই সংস্থাকে?

সংস্থা সূত্রে খবর, মহেশতলা, আক্রা, হাওড়া, উলুবেড়িয়ায় পানীয় জল সরবরাহের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে বারুইপুর, হুগলি, হাওড়া পুরসভার সংযুক্ত এলাকার জল সরবরাহের কাজ। এ ছাড়াও ব্যারাকপুর, বজবজ, উলুবেড়িয়ার দ্বিতীয় পর্যায়ের ও টিটাগড় এলাকায় প্রকল্পের কাজ বাকি পড়ে রয়েছে। এ দিকে, নিকাশির উন্নয়নের কাজ বাকি রয়েছে হাওড়া পুর এলাকায়, নদীয়ার গয়েশপুরে বাকি রয়েছে সেচের কাজও। অল্প সংখ্যক কর্মী নিয়ে এই বিশাল পরিমাণ কাজের তালিকা সম্পন্ন করা যে কতটা সম্ভবপর হবে তা নিয়ে চিন্তায় কর্মীরা। তবে রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement