অশোক-খুনে দাবি পুলিশের

খুনিদের বাইক দেন তৃণমূলের দুই নেতা

অশোক মুখোপাধ্যায় হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত ছক কষেছিলেন স্থানীয় কিছু তৃণমূল নেতাই, তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, হতাকাণ্ডের ছক কষা হয়েছিল কেন্দ্রগড়িয়ার দুর্গামন্দিরে। হত্যাকাণ্ড চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার আগে সাত দিন ওই সুপারি কিলারেরা ঠাঁই নিয়েছিল পাঁচড়া কটন মিলের একটি কোয়ার্টারে। এমনকী, ঘটনার দিন তারা স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতার মোটরবাইকে চেপেই অপারেশনে নেমেছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪১
Share:

দুবরাজপুর আদালতে হাজির করানো হচ্ছে ধৃত বাবলু, বাহারুদ্দিন, দিলীপ ও পাপ্পুকে। —নিজস্ব চিত্র

অশোক মুখোপাধ্যায় হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত ছক কষেছিলেন স্থানীয় কিছু তৃণমূল নেতাই, তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, হতাকাণ্ডের ছক কষা হয়েছিল কেন্দ্রগড়িয়ার দুর্গামন্দিরে। হত্যাকাণ্ড চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার আগে সাত দিন ওই সুপারি কিলারেরা ঠাঁই নিয়েছিল পাঁচড়া কটন মিলের একটি কোয়ার্টারে। এমনকী, ঘটনার দিন তারা স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতার মোটরবাইকে চেপেই অপারেশনে নেমেছিল। পুলিশের দাবি, ধৃতদের জেরা করা জানা গিয়েছে অশোক মুখোপাধ্যায় খুনে আগেই ধৃত কিশোর মণ্ডল এবং আশিস ঘোষই ওই দুই তৃণমূল নেতা।

Advertisement

গত বছর ১২ অগস্ট খুন হয়েছিলেন অশোক ঘোষ। আর অশোক মুখোপাধ্যায়কে (যিনি অশোক ঘোষের খুনেই মূল অভিযুক্ত) খুন করা হয় ১৬ অগস্ট। প্রথম থেকে পাল্টা খুনের তত্ত্বে বিশ্বাস করে তদন্তে এগিয়েছে পুলিশ। খুনের এক মাসের মাথায় গত ১০ সেপ্টেম্বর আব্দুর রহমান, আশিস ঘোষ এবং কিশোর মণ্ডল নামে অভিযুক্তদের তালিকায় থাকা তিন তৃণমূল নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের জেরা করে ১৫ সেপ্টেম্বর বিশ্বরূপ চট্টোপাধ্যায় এবং ২৭ সেপ্টেম্বর স্বপন সেন, হাবুল শেখ, লক্ষ্মীকান্ত পাল (লখাই), কেদার আলি এবং সেখ সইবুল নামে দলেরই আরও পাঁচ নেতা-কর্মী ধরা পড়ে। পুলিশের দাবি, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই ওই সুপারি কিলারদের কথা প্রথম জানা যায়। এর পরেই পটনা-সহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ বাবলু শর্মা, অঞ্জু সাহু ওরফে পাপ্পু, বাহারুদ্দিন শেখ এবং দিলীপ কুমার নামে ওই চার সুপারি কিলারকে গ্রেফতার করে। আর এক সুপারি কিলার দ্বিজেন্দ্র রামের খোঁজ চলছে। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় স্বীকার করেছে, দাদার (অশোক ঘোষ) খুনের বদলা নিতেই তৃণমূল নেতা দীপক ঘোষ গোটা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন।

এ দিকে রবিবার রাতেই পুলিশ ধৃতদের কাছ থেকে একটি নাইন এমএম পিস্তল, দু’টি ওয়ান শটার, দু’টি থ্রি নট থ্রি কার্তুজ উদ্ধার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, অশোক-খুন অপারেশনের লিডার দিলীপ কুমার এক সময় অশোক ঘোষ ঘনিষ্ঠ খয়রাশোলের তৃণমূল নেতা আনিসুর রহমানের ডান হাত ছিলেন। ২০১২ সালে আনিসুর খুন হওয়ার পওয়ার পরে দিলীপ এলাকা ছেড়ে দেয়। তবে, অশোক ঘোষের খুনের পরে সে এলাকায় ফিরে আসে বলে জানা গিয়েছে। পুলিসের দাবি, কিশোর মণ্ডল এবং আশিস ঘোষের মাধ্যমে দীপক ঘোষরা দিলীপের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার পরেই ওই খুনের যাবতীয় ছক কষা হয়। সাত দিন অশোক মুখোপাধ্যায়ের গতিবিধির উপরে নজর রাখা হয়। সে ক্ষেত্রে পাঁচড়া গ্রামেরই বাসিন্দা ধৃত বিশ্বরূপ চট্টোপাধ্যায়ই হত্যাকাণ্ডের দিন ফোন মারফত অশোকবাবুর সঙ্গে থাকা দেহরক্ষীদের অবস্থান সম্পর্কে জানিয়ে ছিলেন বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। ১২-১৬ অগস্টের মধ্যে, তিন বারের চেষ্টায় অশোকবাবুকে খুন করতে সফল হয় পাঁচ সুপারি কিলার।

Advertisement

এ দিন ধৃত চার সুপারি কিলারকে পুলিশ দুবরাজপুর আদালতে হাজির করিয়ে সাত দিনের পুলিশি হেফাজত চেয়েছিল। তবে, দুবরাজপুরের সিজেএম ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায় তাদের চার দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement