খামখেয়ালি বর্ষায় চিন্তা চোরা ঘাটতি

দক্ষিণবঙ্গে সে আদৌ এসেছে কি না, সেই ব্যাপারে এ বার রীতিমতো প্রহেলিকা সৃষ্টি করে তুঘলকিপনা দেখিয়েছিল শীত। তার পরে বসন্তকে হটিয়ে, জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে খামখেয়ালের চূড়ান্ত করেছে গ্রীষ্ম। বর্ষাই বা কম যায় কীসে? সে-ও মেতে উঠেছে তুঘলকিয়ানায়!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৬ ০৩:১৭
Share:

দক্ষিণবঙ্গে সে আদৌ এসেছে কি না, সেই ব্যাপারে এ বার রীতিমতো প্রহেলিকা সৃষ্টি করে তুঘলকিপনা দেখিয়েছিল শীত। তার পরে বসন্তকে হটিয়ে, জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে খামখেয়ালের চূড়ান্ত করেছে গ্রীষ্ম। বর্ষাই বা কম যায় কীসে? সে-ও মেতে উঠেছে তুঘলকিয়ানায়!

Advertisement

আসতেই অনেক দেরি করেছিল বর্ষা। তবু দিল্লির মৌসম ভবনের আশ্বাস ছিল, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বর্ষণ হবে। তারা বলছে, জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষে সারা দেশে বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকেও চার শতাংশ বেশি। কিন্তু মাঠেঘাটে তার প্রমাণ মিলছে না। আসলে মৌসুমি বায়ুর খামখেয়াল এমনই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কৃষি মার খাচ্ছে ভীষণ ভাবে। কারণ, বৃষ্টি হচ্ছে কোনও রকম সামঞ্জস্য ছাড়াই। কোথাও বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের থেকে ২৫% বেশি। কোথাও বা স্বাভাবিকের থেকে ২৩% কম। কোথাও অতিবৃষ্টিতে বন্যা হয়েছে। কোথাও বৃষ্টির অভাবে বীজতলাই তৈরি করা যাচ্ছে না। তাই বর্ষার প্রথম পর্বে মৌসম ভবন স্বাভাবিক বৃষ্টির তথ্য দিলেও কৃষি মন্ত্রক কিন্তু বৃষ্টির বিন্যাসে শঙ্কিত।

সাদা চোখে এবং অঙ্কের হিসেবে বৃষ্টি ধরা পড়ছে ঠিকই। কিন্তু বিষম এক পরিহাসের মতো থেকে যাচ্ছে চোরা ঘাটতি। মৌসম ভবনের তথ্য বলছে, ১ জুন থেকে ১৩ জুলাইয়ের হিসেবে মধ্য ভারতে স্বাভাবিকের থেকে ২৫% বেশি বৃষ্টি হয়েছে। পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে কিন্তু বৃষ্টি-ঘাটতি ২৩%। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ঘাটতি ১২%। বীজতলা তৈরিতে সমস্যায় পড়ছেন দক্ষিণবঙ্গের চাষিরা। আবার উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি চলছে টানা এক মাস। বৃষ্টির এই সামঞ্জস্যহীনতার মূলে আছে নিম্নচাপ-ঘূর্ণাবর্তের খেল্‌। মধ্যপ্রদেশে সাত দিন ধরে একটি ঘূর্ণাবর্ত সক্রিয় রয়েছে। ফলে সেখানে স্বাভাবিকের থেকে ৯০% বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আবার শক্তিশালী ঘূর্ণাবর্তের অভাবে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে ওই সময়ে বৃষ্টি-ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৭%।

Advertisement

আলিপুর হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। তার জেরে কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে বিক্ষিপ্ত ভাবে। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের ঘূর্ণাবর্তটি অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই মেঘ টেনে নিয়ে যাচ্ছে সে। দক্ষিণবঙ্গের উপরে বাদলমেঘ সে-ভাবে দানা বাঁধতেই পারছে না। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানী গণেশকুমার দাস বলছেন, ‘‘গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বা রাজ্যের উপকূলে একটা জোরালো নিম্নচাপ তৈরি হলে এখানে বর্ষার হাল এমনটা হতো না। জুলাইয়ের মাঝামাঝি ঘাটতি থাকত না বৃষ্টির।’’

শুক্রবার দুপুরে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় যে-বৃষ্টি হয়েছে, গোটা দক্ষিণবঙ্গে আরও তিন-চার দিন তেমনটা হলে পরিস্থিতির কিছুটা সুরাহা হবে বলে আশ্বাস দিচ্ছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। কিন্তু সেটা হবে কি?

হাওয়া অফিস বলছে, দক্ষিণবঙ্গ ঘেঁষা ঝাড়খণ্ডের ঘূর্ণাবর্তটি কতটা শক্তিশালী হয়, তার উপরেই সব নির্ভর করছে। ‘‘ওই ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে শনি ও রবিবার জোরালো বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে,’’ আশ্বাস দিচ্ছেন গণেশবাবু।

আবহবিজ্ঞানীদের একাংশ কিন্তু বলছেন, এই ঘূর্ণাবর্তটি দুর্বল হলেই মৌসুমি অক্ষরেখা উত্তরবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্সের দিকে সরে যাবে। ফলে সেই এলাকায় বৃষ্টি বাড়লেও দক্ষিণবঙ্গে ফের ঘাটতি তৈরি হবে। খুব জলদি বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্ত তৈরির ইঙ্গিতও নেই। এক আবহবিজ্ঞানী জানান, আগামী সপ্তাহে বৃষ্টির পরিমাণ কমবে। বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে। তবে তা ঘাটতি মেটাতে পারবে না বলেই মনে করছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন