গা বাঁচাতে ব্যস্ত পুলিশ, রাজ্যকে বিঁধল হাইকোর্ট

গঙ্গার পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে দু’টি ঘটনারই মূলে আছে জমি। দু’টিতেই কর্তব্য করতে গিয়ে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের বাধার মুখে পড়েছিল পুলিশ। একটি হাওড়ার পাঁচলায়। অন্যটি কলকাতার আলিপুরে। মহানগরীর ঘটনাটিতে পুলিশের মেরুদণ্ড কী ভাবে গুঁড়িয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে শোরগোল চলছে। পাঁচলার জমি-মামলায় এ বার আলিপুর কাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়েই কটাক্ষ করল কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৫
Share:

গঙ্গার পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে দু’টি ঘটনারই মূলে আছে জমি। দু’টিতেই কর্তব্য করতে গিয়ে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের বাধার মুখে পড়েছিল পুলিশ। একটি হাওড়ার পাঁচলায়। অন্যটি কলকাতার আলিপুরে। মহানগরীর ঘটনাটিতে পুলিশের মেরুদণ্ড কী ভাবে গুঁড়িয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে শোরগোল চলছে। পাঁচলার জমি-মামলায় এ বার আলিপুর কাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়েই কটাক্ষ করল কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

হাওড়ায় পাঁচলা পঞ্চায়েত সমিতির এলাকায় একটি জমি থেকে দখলদার তুলতে গিয়ে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের প্রবল বাধার মুখে পড়েছিল পুলিশ। জমির মালিক গণেশচন্দ্র সাধুখাঁ জমি উদ্ধারের জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। সেই মামলায় হাইকোর্ট হাওড়া জেলা প্রশাসনকে ওই জমি দখলমুক্ত করে আদালতে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দেয়। সোমবার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সেই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। হাওড়ার পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ভরতলাল মীনা ওই রিপোর্ট নিয়ে এ দিন হাজির ছিলেন বিচারপতি অশোক দাস অধিকারীর এজলাসে।

রিপোর্ট পেশ করে সরকারি আইনজীবী অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বাধার মুখে প্রথমে পিছু হটলেও পরে পুলিশ কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করেনি। এলাকার যে-সব বাসিন্দা ওই জমি দখলমুক্ত করার কাজে পুলিশকে বাধা দিয়েছিলেন, তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় পাঁচলা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি। পুলিশ পরে সেই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি-সহ ছ’জনকে গ্রেফতারও করেছে।

Advertisement

পুলিশ সুপারের রিপোর্ট পড়ার পরেই বিচারপতি অশোক দাস অধিকারী আলিপুর থানায় হামলার প্রসঙ্গ টেনে আনেন। সেখানে জমিটি কোনও ব্যক্তির মালিকানাধীন নয়। সেটা সরকারি সম্পত্তি। সেখানে নির্মাণকাজ করতে গিয়ে তৃণমূলের বাধার মুখে পড়ে পূর্ত দফতর। বাধা হটাতে গিয়ে আক্রান্ত হয় পুলিশ। সেই ঘটনার জেরে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা আলিপুর থানায় হামলা চালান। কাচ ভাঙেন। নিজেদের বাঁচাতে পুলিশকর্মীদের ফাইলকে ঢাল করে টেবিলের তলায় গিয়ে লুকোতে হয়। বিচারপতি এ দিন আইন-রক্ষক পুলিশের সেই দুরবস্থার কথা তোলেন। সরকারি কৌঁসুলির উদ্দেশে তিনি বলেন, “খবরের কাগজে ছবি দেখেছেন? পুলিশ ফাইল মাথায় দিয়ে লুকোনোর চেষ্টা করছে। তা হলেই বুঝুন, এই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে!”

সরকারি আইনজীবী পাঁচলার ঘটনা সম্পর্কে জানান, সেখানে কী ভাবে পুলিশকে বাধা দেওয়া হয়েছিল, তার ভিডিও ফুটেজ তোলা আছে। বিচারপতির কাছে রিপোর্ট পেশের সঙ্গে সঙ্গে সেই ভিডিও ফুটেজও জমা দেন সরকারি আইনজীবী।

শুক্রবার আলিপুর থানায় যে-হামলা হয়েছিল, তারও ভিডিও ফুটেজ আছে পুলিশের কাছে। কিন্তু মূল অভিযুক্তদের কাউকেই এখনও গ্রেফতার করেনি তারা। হাইকোর্টের এক আইনজীবীর মন্তব্য, হাওড়ার ঘটনায় পুলিশ প্রথমে জমি দখলমুক্ত করতে পারেনি। যাঁরা জমির দখলদার উচ্ছেদে বাধা দিয়েছিলেন, প্রথমে তাঁদের কাউকে গ্রেফতারও করতে পারেনি। কিন্তু হাইকোর্টের গুঁতো খেয়ে পুলিশই শেষ পর্যন্ত জমিটিকে দখলমুক্ত করেছে। গ্রেফতার করেছে বাধাদানে অভিযুক্ত তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য এবং তাঁর সঙ্গীদের।

আলিপুরের ক্ষেত্রেও একমাত্র আদালতই প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে তাঁদের গ্রেফতার করানোর ব্যবস্থা করতে পারে বলে মন্তব্য করেন ওই কৌঁসুলি। তবে এ ক্ষেত্রে জমিটি সরকারের। এবং পুরো ঘটনায় জড়িত এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা। সে-ক্ষেত্রে সরকার আদালতে যাবে কি না, বড় প্রশ্ন সেটাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন