গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব ওড়াল মোমবাতির প্রতিবাদ

তদন্ত শেষের আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, সালকিয়ার যুবক অরূপ ভাণ্ডারীর মৃত্যু আসলে দুই গোষ্ঠীর গোলমালের ফসল। মুখ্যমন্ত্রী বলার পরে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা সেই তত্ত্বই প্রচার করতে শুরু করেন। অর্থাৎ, কোনও ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে মৃত্যু হয়নি অরূপের। প্রথম প্রতিবাদ করেছিল পরিবার। এ বার পাশে দাঁড়ালেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। রবিবার মোমবাতি নিয়ে মৌনমিছিলে পা মেলালেন এলাকার বিভিন্ন স্তরের মানুষ। অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসন ও একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল অরূপের উপর থেকে প্রতিবাদী যুবকের তকমা মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তা তাঁরা কিছুতেই মেনে নেবেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫০
Share:

মিছিলে অরূপের মা ও ভাই। রবিবার, সালকিয়ায়। নিজস্ব চিত্র

তদন্ত শেষের আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, সালকিয়ার যুবক অরূপ ভাণ্ডারীর মৃত্যু আসলে দুই গোষ্ঠীর গোলমালের ফসল। মুখ্যমন্ত্রী বলার পরে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা সেই তত্ত্বই প্রচার করতে শুরু করেন। অর্থাৎ, কোনও ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে মৃত্যু হয়নি অরূপের। প্রথম প্রতিবাদ করেছিল পরিবার। এ বার পাশে দাঁড়ালেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। রবিবার মোমবাতি নিয়ে মৌনমিছিলে পা মেলালেন এলাকার বিভিন্ন স্তরের মানুষ। অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসন ও একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল অরূপের উপর থেকে প্রতিবাদী যুবকের তকমা মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তা তাঁরা কিছুতেই মেনে নেবেন না।

Advertisement

এক সময়ে সিভিক পুলিশে কাজ করা অরূপের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিক পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনও। এ দিন অরূপের বাড়িতে যায় তাদের প্রতিনিধি দল। সংগঠনের সভাপতি সঞ্জয় পারিয়া বলেন, “অবিলম্বে পুলিশমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা বলে তিনি মূল ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাইছেন এবং অপরাধীদের আড়াল করতে চাইছেন।

গত ২৮ জানুয়ারি থেকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ২ ফেব্রুয়ারি কলকাতার হাসপাতালে মারা যান অরূপ। প্রতিবাদী বলে পরিচিত অরূপের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে সালকিয়ার হৃষিকেশ ঘোষ লেন। ঘটনায় জড়িত স্থানীয় দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে, বুকে পোস্টার ঝুলিয়ে ওই যুবকের শবযাত্রায় পা মিলিয়েছিল পাড়া।

Advertisement

সরস্বতী পুজোর বিসর্জনের দিনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত অরূপের বন্ধু ও প্রতিবেশীরা প্রথম থেকেই পুলিশকে জানিয়ে এসেছেন, মহিলাদের সঙ্গে অশালীনতার প্রতিবাদ করায় অরূপকে মারা হয়েছিল। অভিযোগ, তখন থেকেই পুলিশ ইভটিজিংয়ের এই তত্ত্ব মানতে চায়নি। পরে মুখ্যমন্ত্রী অরূপের বাড়িতে এসে বলে যান, দুই গোষ্ঠীর গোলমালেই এই ঘটনা। তিনি আরও বলেন, যাঁদের উত্ত্যক্ত করা হয়েছিল, তাঁদেরও খুঁজে বার করতে হবে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরেই স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও প্রচার শুরু করে দেন, ঘটনার পিছনে কোনও মহিলাকে কটূক্তির বিষয় নেই। বিসর্জন ঘিরে দুই গোষ্ঠীর গোলমালের জেরেই অরূপের মৃত্যু।

এ দিন সন্ধ্যায় সালকিয়া হিন্দু স্কুল থেকে মিছিল শুরু হয়ে এলাকা পরিক্রমা করে। ‘প্রতিবাদ করা কি অপরাধ?’ এমন প্রশ্ন পোস্টারে লিখে মিছিলে পা মেলান স্থানীয়েরা। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিও ওঠে। মিছিলের সামনে ছেলের ছবি বুকে নিয়ে পথ হাঁটেন অরূপের মা মেনকাদেবী। পা মেলান এপিডিআরের সদস্যরাও। স্থানীয় বাসিন্দা শঙ্কর নায়েক এ দিন বলেন, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রচারের একটা চেষ্টা চলছে ঠিকই। তবে এলাকার মানুষ তা মেনে নিচ্ছেন না। তারই প্রতিবাদে আজ নীরবে মোমবাতি মিছিল হল। প্রয়োজনে সরব প্রতিবাদও হবে।”

একই বক্তব্য ঘটনার দিন অরূপের সঙ্গে থাকা অভিজিৎ বসু, সুজয় দত্তেরও। সুজয় বলেন, “কিছু মহল ইভটিজিংয়ের বিষয়টি এড়াতে এ সব রটাচ্ছে। আমরা তো প্রত্যক্ষদর্শী। আমাদের কাছ থেকে প্রকৃত ঘটনা জানতেই চায়নি পুলিশ।”

ঘটনার তদন্তে এসে শনিবার সিআইডি অফিসাররাও অরূপের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। পরিবার সূত্রে খবর, তাঁদের মূলত একটাই প্রশ্ন ছিল পাড়ার দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে কী নিয়ে গোলমাল হয়েছিল? ইভটিজিংয়ের ঘটনা জানতে তাঁরা বেশি আগ্রহী ছিলেন না বলেই পরিবারের দাবি। অরূপের ভাই অমর ভাণ্ডারী বলেন, “সিআইডি-ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে বেশি জানতে চাইছে। মনে হচ্ছে, প্রতিবাদ করতে গিয়ে দাদার মৃত্যুর বিষয়টি তদন্তে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। এমন হলে এলাকার মানুষ নিশ্চয়ই মেনে নেবেন না। ” অভিযোগ মানতে নারাজ সিআইডি। এক পুলিশকর্তার দাবি, মৃত্যুর পিছনে সম্ভাব্য সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন