চা পাতায় কীটনাশকের মাত্রা বেঁধে দিল পর্ষদ

চা চাষে কীটনাশক ব্যবহার এবং চায়ের পাতায় তার অবশিষ্ট মাত্রার সর্বোচ্চ সীমা (ম্যাক্সিমাম রেসিডুয়াল লিমিট বা এমআরএল) বেঁধে দিল চা পর্ষদ (টি বোর্ড)। বুধবার এর মাধ্যমে এই প্রথম দেশে চা শিল্পের জন্য ‘প্লান্ট প্রোটেকশন কোড’ বা পিপিসি চালু করল তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৪ ০৩:০১
Share:

চা চাষে কীটনাশক ব্যবহার এবং চায়ের পাতায় তার অবশিষ্ট মাত্রার সর্বোচ্চ সীমা (ম্যাক্সিমাম রেসিডুয়াল লিমিট বা এমআরএল) বেঁধে দিল চা পর্ষদ (টি বোর্ড)। বুধবার এর মাধ্যমে এই প্রথম দেশে চা শিল্পের জন্য ‘প্লান্ট প্রোটেকশন কোড’ বা পিপিসি চালু করল তারা। কীটনাশক ব্যবহারে মাত্রার পাশাপাশি তার খুঁটিনাটিও (কত দিন বাদে ব্যবহার করা উচিত, কোথায় কী ভাবে মজুত করতে হবে) বলা থাকবে ওই কোডে।

Advertisement

চা গাছে কোন কোন কীটনাশকের ব্যবহার চলবে, সরকারি স্তরে তার তালিকা রয়েছে। কিন্তু সব থেকে বেশি কী পরিমাণে তা দেওয়া যাবে কিংবা চা পাতায় অবশিষ্ট হিসেবে তার সর্বোচ্চ কতটা থেকে যেতে পারে, সে মাত্রা এত দিন নির্দিষ্ট ছিল না। ফলে চায়ের মান খারাপ হওয়া কিংবা তা পান করলে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যেত না। সমস্যা হয় রফতানির ক্ষেত্রেও। কিন্তু এ বার মাত্রা বেঁধে দেওয়ায় দুই সমস্যারই সুরাহা হতে পারে, মনে করছেন অনেকে।

স্বাভাবিক ভাবেই অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, তবে কি এত দিন খারাপ চা পান করেছেন ক্রেতারা? কোনও লাগামই ছিল না কীটনাশক ব্যবহারে? পর্ষদ ও চা শিল্পের দাবি, সর্বোচ্চ মাত্রার মাপকাঠি না-থাকলেও কোন কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে, তার সুপারিশ করত দক্ষিণ ভারতের চা চাষিদের সংগঠন উপাসি এবং উত্তর ভারতের চা গবেষণা কেন্দ্র। ছাড়পত্র দিত কেন্দ্রীয় কীটনাশক পষর্দও।

Advertisement

কিন্তু শুধু ব্যবহারযোগ্য কীটনাশকের তালিকা থাকলেই চলে না। কারণ সেই কীটনাশকের ব্যবহারও মাত্রাছাড়া হলে, ক্ষতি হতে পারে ফসল ও জমির। রোগ হতে পারে শ্রমিকের। ফল ভুগতে হতে পারে চা পানকারীদেরও। সে জন্যই পর্ষদ কীটনাশকের সর্বোচ্চ মাত্রা বেঁধে দেওয়ার পথে পা বাড়াল, দাবি চা শিল্পমহলের।

এ ছাড়া, কীটনাশকের মাত্রাছাড়া ব্যবহার-সহ বিভিন্ন কারণে এর আগে নানা সময়ে রফতানি বাজারেও সমস্যায় পড়েছেন এ দেশের চাষিরা। আটকেছেন আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুনের বেড়াজালে। বিশেষত ’৯০-এর দশকের শেষ থেকে জার্মানি সমেত ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে। যদিও পর্ষদের দাবি, রফতানি বাজারের দিকে তাকিয়ে নয়, দেশের কথা মাথায় রেখেই পিপিসি চালু করছে তারা। রফতানি বাজারে কড়াকড়ির কথা মেনে নিয়েও তাদের বক্তব্য, ভারতীয় চা ওই সমস্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই বিদেশে পা রাখে। তা ছাড়া, ভারতীয় চায়ের ৮০% বিক্রি হয় দেশে। ফলে সেই বিশাল সংখ্যক ক্রেতার পেয়ালায় সঠিক মানের চা পৌঁছে দিতে চান তাঁরা। সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত।

বুধবার পর্ষদের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ বলেন, “এই কোড শ্রমিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের স্বার্থরক্ষা করবে। তা ছাড়া, এখন পরিবেশবান্ধব চায়ের চাহিদা বাড়ছে।”

পর্ষদ সূত্রে খবর, সেন্ট্রাল ইনসেক্টিসাইডস বোর্ড অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন কমিটি চা চাষের জন্য ৩৪টি কীটনাশককে অনুমোদন দিয়েছিল। এ বার কোন কীটনাশকের এমআরএল কতটা হবে, তা-ও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। ভারতের ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া আগেই ৭টি কীটনাশকের এমআরএলে ছাড়পত্র দিয়েছে। অর্থাৎ, এ বার কোড মেনে সেগুলি নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করতে পারবে চা বাগানগুলি। নতুন কোড আরও ২৪টি এমআরএল নির্দিষ্ট করেছে। সেগুলির মধ্যে ১৭টি ছাড়পত্রের অপেক্ষায়। বাকিগুলিও ছাড়পত্র পাবে বলেই পর্ষদের আশা।

ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের মতে, বড় বাগানগুলি চাষের নিয়মকানুন সাধারণত মেনে চলে। তবুও এ ধরনের মাপকাঠির প্রয়োজন ছিল। আইটিএ-র সেক্রেটারি জেনারেল মনোজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, “দেশে-বিদেশে পরিবেশ সহায়ক চা চাষের গুরুত্ব বাড়ছে। সরকারি নিয়মের পাশাপাশি চা শিল্পও স্বেচ্ছায় পরিবেশবান্ধব চাষ পদ্ধতি মানতে চায়।”

অনেকের মতে, সমস্যা বেশি ছোট চাষিদের। কারণ, তাঁরা বাড়তি ফসলের আশায় মাত্রাছাড়া কীটনাশক বা সার ব্যবহারে পিছপা হন না। অথচ দেশের প্রায় ৩৬% চা আসে তাঁদের বাগান থেকে। তাঁদের সংগঠনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী জানান, “অনেকেই চা-কে স্বল্পমেয়াদি ফসল ভাবলেও তা আসলে দীর্ঘমেয়াদি। তাই এই কোড অত্যন্ত জরুরি। কর্মশালার মাধ্যমে এ বিষয়ে ক্ষুদ্র চা চাষিদের সচেতন করব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement