এই ট্যাবই হাতিয়ার। -নিজস্ব চিত্র।
কৃষকদের সহায়তায় আগেই তথ্য প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করেছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই ছ’টি জেলার কৃষকেরা সেই সুবিধা পাচ্ছেন। এ বার একই সুবিধা পেতে চলেছেন বীরভূমের কৃষকেরাও।
কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক (কেপিএস) ও ব্লক কৃষি আধিকারিক-সহ বিভিন্ন ধাপের কৃষি আধিকারিকদের দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাযুক্ত ট্যাব। এর সাহায্যে চাষাবাদ সংক্রান্ত কৃষকের যে কোনও প্রশ্ন সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে যাবে আধিকারিক ও বিশেষজ্ঞদের কাছে। ন্যূনতম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সমাধান সূত্র তাঁরা জানিয়ে দেবেন ওই সাহায্যপ্রার্থী কৃষককে।
কৃষি দফতরের দাবি, এর সাহায্য চাষবাদ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পরামর্শ যেমন দ্রুত মিলবে, তেমনই উন্নত প্রথায় চাষ, কৃষি বিজ্ঞান, প্রকল্প সংক্রান্ত তথ্য, কৃষিজাত পণ্যের বাজারদর ও আবহাওয়া সংক্রান্ত নানা ধরনের তথ্যগত সহায়তা কৃষিক্ষেত্রের অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে। কিন্তু জেলাজুড়ে কেপিএস-র ঘাটতি থাকায় এই প্রকল্প কতটা চাষিদের কাছে পৌঁছবে তা নিয়েই প্রশ্ন রয়ে গেল।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে পানাগড়ে মাটি উৎসবে কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য ‘মাটির কথা’ নামে যে প্রকল্পের সূচনা করা হয়েছিল, এ বার থেকে সেই প্রকল্পের সুযোগ পেতে চলেছেন এই জেলার চাষিরা। মঙ্গলবার সিউড়ির রাষ্ট্রীয় কৃষিখামারে আয়োজিত একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে ট্যাব চালানোর কৌশল শেখানোর পাশাপাশি জেলার ৪৬ জন কেপিএস, ব্লকগুলির সহ-কৃষি আধিকারিক, তিন মহকুমা কৃষি আধিকারিক (বিষয় বস্তু বিশেষজ্ঞ) ও জেলাস্তরের দুই আধিকারিক-সহ মোট ৬৭ জনকে ট্যাব তুলে দেওয়া হল।
উপস্থিত ছিলেন, জেলার ভারপ্রাপ্ত উপ-কৃষি অধিকর্তা তথা সহকৃষি অধিকর্তা (তথ্য) অমর মণ্ডল, উপ কৃষিঅধিকর্তা (বিশ্বব্যাঙ্ক) তপনকুমার ভাণ্ডারী, উপ কৃষি অধিকর্তা (সিড সার্টিফিকেশন) একেএম মিনাজুর হাসন প্রমুখ। তাঁরা জানান, প্রথম ধাপে বর্ধমান, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, হুগলি ও জলপাইগুড়ির মতো ছ’টি জেলায় প্রকল্প চলছে। প্রভূত সাফল্যও ইতিমধ্যেই পাওয়া গিয়েছে। নিজের জমিতে দাঁড়িয়েই অনলাইনে কৃষি সংক্রান্ত ১২,৯৯৩টি প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন ওই ছ’টি জেলার ১১,৫০০ জন কৃষক। এ বার সেই সুবিধা পেতে চলেছেন বীরভূমের চাষিরাও। ওয়েবেল ও ইনগ্রিন নামে দুই সংস্থার তত্ত্বাবধানে ট্যাবগুলি আধিকারিক ও কেপিএসদের হাতে তুলে দেওয়া হল। প্রশিক্ষণ চলবে তিনদিন।
কী ভাবে সাহায্য পাবেন কৃষকেরা?
কৃষি আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ফসলে পোকার আক্রমণ বা কোনও রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে, কিংবা জমিতে অন্য কোনও চাষ করার ইচ্ছে হয়েছে কোনও কৃষকের। তিনি কেপিএসের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই তাঁর ট্যাবের মাধ্যমে সব পরামর্শ নিমেষে পেয়ে যাবেন। ট্যাবে রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন প্রকার চাষ সংক্রান্ত তথ্য ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া আছে।
এ ছাড়া, প্রয়োজনে ওই প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে ব্লক, জেলা বা রাজ্যস্তরের কৃষি আধিকারিকদের কাছ থেকেও। তাঁদের কাছে প্রয়োজনে ট্যাব থেকে ছবি তুলে পাঠানোও যাবে। নলহাটি ১ ও ২ ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা অর্জুন মণ্ডল, খয়রাশোলের কৃষি আধিকারিক দেবব্রত আচার্য ও ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের আধিকারিক প্রদীপ গিরি বলছেন, চাষ আবাদে সুপরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সমাধান সূত্র পেতে অবশ্যই উল্লখযোগ্য ভূমিকা নেবে তথ্য প্রযুক্তি।’’
কিন্তু এত কিছুর পরেও যে কেপিএস-দের উপর ভিত্তি করে প্রকল্পটি এগোবে সেই কেপিএসদের সংখ্যাই তো জেলায় অনেক কম। জেলা কৃষি দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, জেলায় মোট কেপিএস থাকার কথা ১১৫ জন। সেখানে কেপিএস আছেন মাত্র ৬৩ জন। তাঁদের মধ্যে ৪৬ জন কেপিএস মাঠেঘাটের দায়িত্বে রয়েছেন। বাকিরা অফিসে। ফলে কী ভাবে ওই ৪৬ জনের সঙ্গে জেলার লক্ষ লক্ষ কৃষক যোগাযোগ করবেন, তা নিয়ে প্রশ্নটাই দিনের শেষে বড় হয়ে উঠেছে।
মুরারই ও রামপুরহাট ২ ব্লকের মতো বেশ কয়েকটি ব্লক রয়েছে যেখানে মাত্র একজন করে কেপিএস দায়িত্বে রয়েছেন। অনেকের আবার বয়সও হয়েছে। সমস্যার কথা মেনে জেলার ভারপ্রাপ্ত উপ কৃষি অধিকর্তা তথা সহকৃষি অধিকর্তা (তথ্য) অমর মণ্ডল বলছেন, ‘‘নতুন করে ৩২ জন কেপিএসের প্রশিক্ষণ চলছে। ছ’মাস পরে তাঁরা যোগ দিলে সমস্যা মিটে যাবে।’’
কেপিএসদের স্বল্প সংখ্যাই চূড়ান্ত সমস্যা মেনে নিচ্ছেন কেপিএসরাও। নলহাটি ১-এর কেপিএস দেবাশিস দত্ত, নলহাটি ২-এর মহম্মদ সিরাজউদ্দিন, মুরারই ১-এর নীলাঞ্জন সরকাররা বলছেন, ‘‘অবশ্যই আমাদের সংখ্যা কম থাকাটা বিরাট সমস্যা। তবে কেপিএসদের অনেকেই কিন্তু চাষিদের সমস্যা সমাধানে নতুন হাতিয়ার পেয়ে খুশি।’’
খয়রাশোলের কৃষকরত্ন পাওয়া চাষি রামকৃষ্ণ পাল, নলহাটির সেরগ্রামের অপর এক কৃষকরত্ন পাওয়া চাষি গৌসল আজমেরা বলছেন, ‘‘সমস্যার তৎক্ষণাৎ জবাব পেলে কাজে লাগবে এই প্রকল্প।’’