ছাগলের ঘর তৈরির টাকা বিলোবেন মুখ্যমন্ত্রী

এ বার ছাগলের বাড়ি! এত দিন মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বিলিয়েছেন মানুষের বসতবাড়ির মডেল। ইন্দিরা আবাস, গীতাঞ্জলি, আমার বাড়ি, নিজ ভূমি নিজ গৃহ এমন নানা প্রকল্পের অধীনে বাড়ির অনুদান তুলে দিয়েছেন প্রাপকদের হাতে। এ বার জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বিলি করবেন ছাগলদের ঘরের অনুদান। বাংলার কালো ছাগলের (ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট) ঘর মজবুত করতে ছাগল চাষিদের হাতে নগদ ৫০০ টাকা তুলে দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪৮
Share:

এ বার ছাগলের বাড়ি!

Advertisement

এত দিন মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বিলিয়েছেন মানুষের বসতবাড়ির মডেল। ইন্দিরা আবাস, গীতাঞ্জলি, আমার বাড়ি, নিজ ভূমি নিজ গৃহ এমন নানা প্রকল্পের অধীনে বাড়ির অনুদান তুলে দিয়েছেন প্রাপকদের হাতে। এ বার জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বিলি করবেন ছাগলদের ঘরের অনুদান। বাংলার কালো ছাগলের (ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট) ঘর মজবুত করতে ছাগল চাষিদের হাতে নগদ ৫০০ টাকা তুলে দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

হাতে-হাতে সেই অনুদান পেতে দক্ষিণবঙ্গের ১২টি জেলার ১৮ হাজার ছাগল চাষি যাচ্ছেন বর্ধমানে। আগামীকাল, সোমবার তালিতের সাই স্টেডিয়ামের পাশে মুখ্যন্ত্রীর সভায়। মুখ্যমন্ত্রীই যে সভার নাম দিয়েছেন ‘মা-মাটি-কৃষি কথা।’ সরকারি বাসে বিনে পয়সায় যাতায়াত, খাওয়া বাবদ নগদ ২০০ টাকা এবং স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর বিলি-করা ৫০০ টাকা! এ রাজ্যের ছাগলচাষির ভাগ্যে এমন শিকে কবে ছিঁড়েছে, প্রাণীসম্পদ দফতরের কর্তারা মনে করতে পারছেন না!

Advertisement

প্রশাসনের অন্দরেই সমালোচনা উঠছে, ছাগল উপলক্ষ মাত্র। আসলে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় ভিড় জমাতে নগদপ্রাপ্তির লোভ দেখিয়ে লোক জড়ো করা হচ্ছে। এ ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে। এ প্রসঙ্গে ছাগল-ভেড়ার চাষ বাড়িয়ে চাষির রোজগার বাড়ানোর প্রকল্পটিকেই উদাহরণ হিসেবে দেখাচ্ছেন অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, এই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য, রাজ্যের ১০০টি ব্লকে ৫০০ জন দরিদ্রতম চাষি পরিবারের রোজগার বাড়ানো। এ জন্য সাড়ে ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এই খাতে প্রতি চাষিকে যে ১৫০০ টাকা অনুদান দেওয়া হবে, তার মধ্যে ছাগলের ঘর তৈরির জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৫০০ টাকা। মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যে সব ছাগল চাষি আসবেন, তাঁদের সকলের হাতে এই ৫০০ টাকা নগদে তুলে দেওয়া হবে। সেই জন্য দক্ষিণবঙ্গের ছাগল চাষিদের বর্ধমানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া হাঁস-মুরগির ছানা বিলি তো রয়েছেই।

সোমবার বর্ধমানের ‘মাটি উৎসব কৃষিকথা’-ই শেষ নয়, বুধবার বীরভূমের রামপুরহাটে ফের সভা মুখ্যমন্ত্রীর। সেখানেও সবক’টি

ব্লক থেকে সরকারি খরচে লোক জুটিয়ে আনতে হবে জেলা প্রশাসনকে। এমনই নির্দেশ নবান্নের। সেখানেও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে উপভোক্তাদের এক দফা সরকারি সুবিধা বিলি করবেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পর চাষিদের নিয়ে উৎসব হবে উত্তরবঙ্গে।

শুধু বর্ধমানে তিন দিনের উৎসবে অন্তত ১৫ কোটি টাকা খরচ করছে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর। আমলাদের একাংশের ক্ষোভ, যে ভাবে কৃষি, পশুপালন, মৎস্যচাষের উন্নতির জন্য বরাদ্দ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা খরচ করা হচ্ছে, তাতে চাষিদের আখেরে কোনও লাভ হচ্ছে না। বারোটি জেলা থেকে যে ২৫ হাজার চাষিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় ভিড় বাড়ানোর জন্য, তাঁদের খাওয়া বাবদই ১ কোটি টাকার বেশি খরচ হবে! যাতায়াতের জন্য আরও অন্তত ৩ কোটি! অথচ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা আর কৃষি-পশুপালন সংক্রান্ত কিছু পরামর্শ শোনা ছাড়া আর কোনও উপকার হবে কি? মেলার আয়োজকদের অবশ্য দাবি, চাষিদের প্রশিক্ষণ, আধুনিক সরঞ্জাম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করার কাজ আলাদা আলাদা ভাবে জেলায় করতে হলে অনেক বেশি টাকা খরচ হতো। সেই কারণেই দক্ষিণবঙ্গের ১২টি জেলার সমস্ত উপভোক্তাদের এক সঙ্গে আনা হচ্ছে। রাজ্যের প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথের বক্তব্য, “উপভোক্তা যাঁরা আসবেন, তাঁদের চেতনা বাড়াবেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এই কর্মোদ্যমকে স্যালুট জানাতে বর্ধমানের প্রতিটি ব্লক থেকে লোক যাবে। এক লক্ষ মানুষকে নিয়ে উৎসব হবে। টাকা বিলি করে লোক জমানোর অভিযোগ মিথ্যা।”

বিরোধীরা অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না। বিজেপি নেতা রাহুল সিংহের বক্তব্য, “সততার প্রতীক মমতা এখন সারদার প্রতীক! তাঁর কথা শুনতে লোক আসছে না, তাই ভাড়া করে আনতে হচ্ছে। দুঃখের বিষয়, সে জন্য কেন্দ্রের দেওয়া উন্নয়নের টাকা খরচ করতে হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন