ছবিতে ছাড়, কাট আউটে ‘না’ বিমানের

পাঁচ বছর আগে উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্র জুড়ে প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের ছবি দিয়ে প্রচার চালিয়েছিল একটি সংস্থা। বাম প্রার্থীর প্রচারে কেন ছবি, এই বিতর্কের চোটে শেষমেশ হস্তক্ষেপ করেছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। ভোটের আগেই নামিয়ে ফেলতে হয়েছিল ‘জয় হো’ লেখা সেই সব ব্যানার-ফেস্টুন!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:২২
Share:

রূপা বাগচীর ছবি দিয়ে পোস্টার।—নিজস্ব চিত্র

পাঁচ বছর আগে উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্র জুড়ে প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের ছবি দিয়ে প্রচার চালিয়েছিল একটি সংস্থা। বাম প্রার্থীর প্রচারে কেন ছবি, এই বিতর্কের চোটে শেষমেশ হস্তক্ষেপ করেছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। ভোটের আগেই নামিয়ে ফেলতে হয়েছিল ‘জয় হো’ লেখা সেই সব ব্যানার-ফেস্টুন!

Advertisement

এ বার খাস আলিমুদ্দিনের গায়ে সেই উত্তর কলকাতা কেন্দ্রেরই প্রার্থী রূপা বাগচীর ছবি সংবলিত ব্যানার জ্বলজ্বল করছে! কোনও সংস্থার ‘সৌজন্য’ নয়, সরাসরি সিপিএমের নামেই প্রচার। এবং এ বার মেনে নিয়েছেন সেই বিমানবাবুই! যুগের হাওয়ায় এবং পরিস্থিতির চাপে প্রার্থীদের ছবি ব্যবহারে অনুমতি দিয়েছেন রাজ্য সম্পাদক।

তবে অনুমতি মঞ্জুর হয়েছে শর্তসাপেক্ষে। প্রচার-সামগ্রীতে প্রার্থীদের আবক্ষ ছবি ব্যবহার করা গেলেও কোনও ভাবেই চলবে না কাট আউট। মাথা থেকে পা পর্যন্ত গোটা চেহারার কাট আউট তৈরি করে তৃণমূলের জুতোয় পা গলাতে দিতে এখনও কড়া আপত্তি আছে বিমানবাবুর! তবে শর্তসাপেক্ষ অনুমতি পেয়েই বাম প্রার্থীরা এ বার সেই সুযোগ চুটিয়ে ব্যবহার করছেন। উত্তর কলকাতার রূপার ছবির সঙ্গে যেমন লেখা হচ্ছে যে সব মুখে ভাষা নেই, তাতে ভাষা দেওয়ার কথা, তেমনই দক্ষিণ কলকাতার নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ের ছবির সঙ্গে যাচ্ছে শিক্ষা জগতের প্রতি আহ্বান। দমদমের অসীম দাশগুপ্তের ছবির সঙ্গে শ্রমিক এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে। ব্যারাকপুরের সিপিএম প্রার্থী সুভাষিণী আলির জন্য বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকও যে সচিত্র পোস্টার তৈরি করেছে, সেখানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং বন্ধ কারখানা খোলার দাবি জানানো হয়েছে। সেই পোস্টারে আবার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনানী হিসাবে সুভাষিণীর প্রয়াত মা লক্ষ্মী সহগলের ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে।

Advertisement

রাজ্যে ৪২টির মধ্যে ৩২টি আসনে প্রার্থী রয়েছে সিপিএমের। বাকিগুলিতে শরিকদের। সিপিএমের প্রার্থীদের জন্য এ বার সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি এবং তাঁদের কাজের বিবরণ দিয়ে পরিচিতিপত্র তৈরি করা হয়েছে। সেখানেও থাকছে প্রার্থীদের ছবি। দলীয় মুখপত্রেও সেই পরিচিতিপত্র ছাপা হচ্ছে। দক্ষিণ ভারতে সিপিএম অবশ্য অনেক আগেই ছবি দিয়ে প্রচারের সংস্কৃতি আপন করে নিয়েছে। অনেক দিন ঠেকিয়ে রাখার পরে শেষ পর্যন্ত সময়ের দাবিতে যা মেনে নিতে হয়েছে আলিমুদ্দিনকেও।

অথচ ক’দিন আগেও দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক প্রাক্তন সাংসদ প্রচারে ছবি ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তখন রাজ্য নেতৃত্বের সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। এখন তা হলে ছবি কেন?

রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবু আনন্দবাজারকে বলেছেন, “ভেবে দেখলাম, টিভি চ্যানেলের দৌলতে প্রার্থীদের মুখ এখন দেখাই যাচ্ছে। ফেসবুক, টুইটারেও ছবি চলে আসছে। তার পরে আর পোস্টার, ফেস্টুনে ছবিতে নিষেধাজ্ঞা রাখার খুব একটা দরকার হয় না। তাই আমরা এ বার অনুমতি দিয়েছি।” এই যুক্তির কথাই অবশ্য বলেছিলেন সেই প্রাক্তন সাংসদ। বিমানবাবু একই সঙ্গে শর্তের কথাও বলছেন। তাঁর কথায়, “তবে আমরা বলে দিয়েছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হওয়ার চেষ্টা করার দরকার নেই! কাট আউট চলবে না। আবক্ষ ছবি দেওয়া যেতে পারে। ওই পর্যন্তই!” পোস্টারে অবশ্য শুধু প্রার্থীর ছবিই থাকছে। তৃণমূলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেসের সনিয়া গাঁধী বা বিজেপি-র নরেন্দ্র মোদীর মতো দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ছবি পোস্টারে নেই।

বস্তুত, নতুন প্রজন্মের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে বামেদের প্রচারের ধরন-ধারনও অনেকটা বদলেছে। সিপিএমের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা মনে করছেন, বামপন্থীরা যতই এখনও পায়ে হেঁটে বাড়ি বাড়ি পৌঁছোনোর উপরে জোর দিন, বিশাল এলাকার মানুষের কাছে সমান ভাবে পৌঁছোনো দুষ্কর। সেই জন্যও ছবি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ। শ্রীরামপুরের সিপিএম প্রার্থী তীর্থঙ্কর (মুন্না) রায় যেমন ছবি ব্যবহারে জোর দিয়েছেন। তিনি নিজে ডিওয়াইএফআই নেতা, তাঁর ‘টিম’ ছবি ছড়িয়ে দিয়েছে সাধ্যমতো। শ্রীরামপুরের এক ডিওয়াইএফআই কর্মীর কথায়, “মুন্নাদা (তীর্থঙ্করের ডাক নাম) তো সেই অর্থে বিরাট কোনও ওজনদার নেতা নন। বহু জায়গাতেই মানুষ ওঁকে চেনেন না। সেই কারণেই প্রচারে ওর ছবি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত।” তবে সব অংশের ছবি যে একই রকম, তা নয়। শ্রীরামপুরেরই হিন্দমোটরে যত সচিত্র ফ্লেক্স আছে, উত্তরপাড়ায় তা নেই। আবার হুগলি জেলারই শ্রীরামপুর আসনে প্রার্থীর যত ছবি চোখে পড়ছে, ওই জেলারই আরামবাগের প্রার্থী শক্তিমোহন মালিককে তত ছবিতে দেখা যাচ্ছে না।

তবু যুগের হাওয়ায় উড়ে গিয়েছে পুরনো সংস্কার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন