ডিজি-র হাজিরা রোখার পথ কী, হয়রান সরকার

প্রথম দফায় কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য পুলিশের ডিজি-র তলব পড়ায় ডিভিশন বেঞ্চে গিয়ে তখনকার মতো তাঁর হাজিরা ঠেকিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু পাড়ুই হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত ফের ডিজি-কে ডেকে পাঠানোয় সমস্যায় পড়ে গিয়েছে তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫৫
Share:

প্রথম দফায় কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য পুলিশের ডিজি-র তলব পড়ায় ডিভিশন বেঞ্চে গিয়ে তখনকার মতো তাঁর হাজিরা ঠেকিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু পাড়ুই হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত ফের ডিজি-কে ডেকে পাঠানোয় সমস্যায় পড়ে গিয়েছে তারা।

Advertisement

কী ভাবে আদালতে ডিজি-র হাজিরা ঠেকানো যায়, সেই বিষয়ে আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছে রাজ্য। হাইকোর্টকে না-জানিয়ে বিশেষ তদন্তদল (সিট) কেন বীরভূম নিম্ন আদালতে তড়িঘড়ি চার্জশিট পেশ করেছে, তার ব্যাখ্যা জানতে ডিজি জিএমপি রেড্ডিকে তলব করেছেন বিচারপতি হরিশ টন্ডন। ৪ সেপ্টেম্বর ডিজি-কে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশ ঠেকানোর পথ পাওয়া যে কঠিন, মানছেন নবান্নের কর্তারা।

কেন? প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, তদন্ত শেষ হলে তবেই চার্জশিট দেওয়া হয়। হাইকোর্টের নজরদারিতে পাড়ুই-তদন্ত চলছিল। তাই চার্জশিট পেশের আগে কোর্টের অনুমোদন নেওয়া এক রকম বাধ্যতামূলক। কারণ, তদন্ত শেষ করার মতো অবস্থায় পৌঁছেছে কি না, এ ক্ষেত্রে তা নির্ণয়ের দায়িত্ব আদালতের। তারা তাইলে তদন্ত আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এই অবস্থায় পাড়ুই মামলায় চার্জশিট পেশের আগে কেন হাইকোর্টের অনুমতি নেওয়া হল না, সিটের প্রধান তথা রাজ্য পুলিশের ডিজি-র কাছে তা জানতে চেয়েছেন বিচারপতি টন্ডন।

Advertisement

কীসের ভিত্তিতে সরকার উচ্চতর আদালতে যাবে, তা নিয়েই দিনভর বৈঠক চলে নবান্নে। আইন দফতর সূত্রের খবর, প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের সঙ্গেও পরামর্শ করবে রাজ্য। নবান্নের এক কর্তা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশেই পাড়ুই মামলার বিশেষ তদন্তদল তৈরি করা হয়েছিল। ডিজি-কে তার প্রধান করা হয়। আদালতের নজরদারিতেই সেই তদন্ত চলেছে। এখন যদি সিটের কাজকর্ম হাইকোর্টের অপছন্দ হয় এবং তারা তদন্তদলের প্রধানকে এর ব্যাখ্যা জানতে ডেকে পাঠায়, তা হলে সরকারের ভূমিকা কী, সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রশাসনের একাংশ। সরকার কেন ডিজি-র হাজিরা ঠেকাতে চাইছে, সেই প্রশ্নও উঠছে প্রশাসনের অন্দরে।

ডিজি-কে হাইকোর্টে তলব প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বলেন, “বিচার ব্যবস্থাকে অবজ্ঞা করে যা খুশি তা-ই করার চেষ্টা হচ্ছে। বাংলার মানুষ আর সরকারের উপরে ভরসা রাখবে না। ভরসা থাকবে কেবল বিচার ব্যবস্থার উপরে। কারণ, যে-কাজ সরকার ও পুলিশের করা উচিত, সেটা করতে হচ্ছে আদালতকে।” তাঁর কটাক্ষ, এ রাজ্যে এখন আর পুলিশ-প্রশাসনের নিজস্ব ভাষা নেই। তারাও তৃণমূলের শাখা সংগঠন হয়ে গিয়েছে।

এর আগে পাড়ুই মামলার শুনানি চলছিল বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের আদালতে। বিচারপতি দত্তই পাড়ুই কাণ্ডে সিটের অবস্থান জানতে রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে তলব করেছিলেন। সেটা ১০ এপ্রিলের ঘটনা। বিচারপতি দত্তের নির্দেশের বিরুদ্ধে সরকার ডিভিশন বেঞ্চে গেলে স্থগিতাদেশ পায় সরকার। ডিজি সে-যাত্রায় আদালতে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে রেহাই পান। তার পরে ব্যক্তিগত কারণে গত ১৩ জুন পাড়ুই মামলা থেকে সরে দাঁড়ান বিচারপতি দত্ত। কিন্তু হাইকোর্ট ফের ডিজি-কেই ডেকে পাঠিয়েছে। সেই হাজিরা ঠেকানোর পথ খুঁজতেই হিমশিম খাচ্ছে সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন