ধৃত কওসর।—নিজস্ব চিত্র।
মুর্শিদাবাদের ডোমকল থেকে ধরা পড়া কওসর নামে এক জনকে নিয়ে বৃহস্পতিবার কিছুটা বিভ্রান্তি হল হাসনাবাদে। তবে পরে উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী জানিয়ে দেন, খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডে যে কওসরকে খুঁজছে পুলিশ, ডোমকলের কওসর সে-ই লোক নয়। ডোমকলের গঙ্গাধারীঘাটের বাসিন্দা বছর পঁয়তাল্লিশের এই লোকটি কওসর গাজি ওরফে কওসর শেখ। পুলিশের খাতায় বিভিন্ন অপরাধের জন্য নাম রয়েছে তার।
পুলিশ সূত্রের খবর, ২০০৮ সালের অক্টোবরে কলকাতার পাম অ্যাভিনিউ ও মেফেয়ার রোডের সংযোগস্থলে সেই সময়ের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাড়ির কাছেই ধরা পড়ে অন্যতম শীর্ষ বাংলাদেশি দুষ্কৃতী সুব্রত বাইন। অজস্র অপরাধের পাণ্ডা সুব্রতর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের ‘রেড কর্নার নোটিস’ ছিল। বাংলাদেশ থেকে আসা সুব্রতকে নদিয়ায় থাকার বন্দোবস্ত করে দেওয়ায় অভিযুক্ত এই কওসর। শুধু সুব্রতই নয়, বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা একাধিক সন্ত্রাসবাদীকে এ রাজ্যের নানা প্রান্তে (নদিয়া, বর্ধমান, লালগোলা এবং কলকাতায়) থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকী, উত্তর ২৪ পরগনা লাগোয়া নদিয়া সীমান্তের নাটাবেড়ের এক আস্তানায় বেশ কয়েক জন সিমি সদস্যকেও সে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল বলে অভিযোগ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, কওসরের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে খুনের অভিযোগও আছে। মাদক, জাল টাকা এবং অস্ত্র পাচারের কারবারের সঙ্গেও সে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে পুলিশের কাছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাসনাবাদ থেকে ধরা পড়ে মহম্মদ সাদ্দাম হোসেন শেখ ওরফে সাদ্দাম সর্দার এবং মহম্মদ ফারুখ হোসেন সর্দার নামে দুই জামাত সদস্য। তাদের জেরা করে বসিরহাট পুলিশ এক ‘কওসরের’ নাম পায়। বর্ধমানের বিস্ফোরণে অন্যতম মূল অভিযুক্ত, জেহাদি জঙ্গি কওসরের খোঁজে এখন ব্যস্ত পুলিশ ও গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যেই তার ‘স্কেচ’ আঁকানো হয়েছে। সাদ্দাম এবং ফারুখের কাছ থেকে তাদের পরিচিত ‘কওসরের’ নাম জেনে, সেই লোকটির হদিস করতে বসিরহাট থেকে পুলিশের একটি দল বুধবার রাতেই মুর্শিদাবাদে পৌঁছয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ডোমকলে পদ্মানদীর ধারে একটি নির্জন ডেরায় ছিল কওসর। পুলিশ পৌঁছনোর আগেই তার সঙ্গী জনা পাঁচেক দুষ্কৃতী একটি বড় ব্যাগ নিয়ে বাংলাদেশের দিকে পালিয়ে যায়। কওসর লুকিয়ে ছিল। তবে পুলিশকর্মীরা তাকে খুঁজে বের করে গ্রেফতার করেন। রাতেই হাসনাবাদে আনা হয় তাকে। বসিরহাট আদালতের বিচারক এ দিন ধৃতকে ৬ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একটি দল ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কওসরকে। জেরায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নানা জায়গায় তল্লাশি চলছে।
সীমান্তে ধৃত তিন
খবর ছিল আগেই। বৃহস্পতিবার দুপুরে বনগাঁ থানার পুলিশ সটান হানা দেয় পেট্রাপোল সীমান্তের কাছে জয়ন্তীপুর বাজারে। গ্রেফতার করা হয় সন্দেহভাজন এক বাংলাদেশি যুবককে। খবর পেয়ে বনগাঁ থানায় পৌঁছে যান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারাও। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডের পরে পুলিশ আর ঝুঁকি নিতে চায়নি। শুরু হয় দফায় দফায় জেরা। প্রায় ঘণ্টা তিনেক জেরার পরে উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “আপাতত অনুপ্রবেশের অভিযোগ দায়ের হয়েছে।” তবে খোঁজ চলেছে জঙ্গি-যোগের। জেরায় ওই যুবক জানায়, নাম তার জাবেদ জাহাঙ্গির। বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রামের কেরানিহাট। দিন কয়েক আগে দালালের ‘হাত’ ধরেই এ দেশে ঢুকেছিল সে। এ দিন দুপুরে গাইঘাটার শিমুলপুর হাজরাতলা থেকেও দুই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা এলাকায় ফুলের ব্যবসা শুরু করেছিল। এ ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
‘বাবা’ কাহিনি
খাগড়াগড়-কাণ্ডে নিহত শাকিল আহমেদ একা নয়, শ্বশুরকে বাবা সাজিয়ে ভোটের পরিচয়পত্র তৈরি করেছিল বাংলাদেশের রাজশাহীর কোদাগাড়ির আঙ্গুর শেখও। বেআইনি অস্ত্র ব্যবসার অভিযোগে পুলিশ মুর্শিদাবাদের রানিনগর সীমান্তের দাঁড়াকাটি গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে ১২ রাউন্ড গুলি ও একটি গাদা বন্দুক পাওয়া গিয়েছে। পুলিশ জানায়, ২০০৩ সালে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে চলে আসে আঙ্গুর। ২০০৬ সালে দাঁড়াকাটি গ্রামের আমিনুল শেখের মেয়ের সঙ্গে তার বিয়েও হয়। শ্বশুরবাড়িতেই থাকত সে। ২০১১ সালে শ্বশুরকে বাবা সাজিয়ে সে ভোটার তালিকায় নামও তোলে। শ্বশুরের দাবি, “জামাইয়ের অনুরোধ ফেলতে পারিনি। তবে ও অস্ত্র ব্যবসা করে না।” ডোমকলের এসডিপিও অরিজিৎ সিংহ বলেন, “আঙ্গুরের অস্ত্র ব্যবসার খবর পেয়ে ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে।”