থানায় অভিযোগ, সরব বিরোধীরা, নির্মল অনড়ই

প্রকাশ্য সভায় তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিষদীয় সচিব নির্মল মাজির উস্কানিমূলক মন্তব্যের জেরে এ বার জল গড়াতে শুরু করল। চিকিৎসকদের ‘জ্যান্ত পুতুল’ পোড়ানোর কথা বলে উস্কানি দেওয়ার জন্য থানায় অভিযোগ দায়ের হল শাসক দলের চিকিৎসক-নেতা নির্মলবাবুর বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৪২
Share:

নির্মল মাজি

প্রকাশ্য সভায় তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিষদীয় সচিব নির্মল মাজির উস্কানিমূলক মন্তব্যের জেরে এ বার জল গড়াতে শুরু করল। চিকিৎসকদের ‘জ্যান্ত পুতুল’ পোড়ানোর কথা বলে উস্কানি দেওয়ার জন্য থানায় অভিযোগ দায়ের হল শাসক দলের চিকিৎসক-নেতা নির্মলবাবুর বিরুদ্ধে। শাসক দলের উপরে চাপ বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছে বিরোধীরাও। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ তৃণমূলকে ‘গুন্ডা তৈরির কারখানা’ বলে কটাক্ষ করে দাবি করেছেন, দলীয় বিধায়কের ওই মন্তব্যের জন্য সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত জনসমক্ষে ক্ষমা চাওয়া।

Advertisement

নির্মলবাবু অবশ্য দুঃখপ্রকাশ দূর স্থান, বরং সরকারি চিকিৎসকদের একাংশকে অশালীন আক্রমণ জারি রেখেছেন! আর সাম্প্রতিক কালের ধারা মেনে পুলিশও বুঝিয়ে দিয়েছে, শাসক দলের নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগকে তারা তেমন আমল দিচ্ছে না। এর আগে প্রকাশ্য সভায় উস্কানিমূলক বক্তৃতার জন্য অভিযোগ দায়ের হলেও তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থাই নেয়নি। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা চলছে। নির্মলবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগকে পুলিশ গুরুত্ব না দিলে তাঁরাও আদালতে যাবেন, জানিয়েছেন সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ।

স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিষদীয় সচিবের পদে আছেন নির্মলবাবু। পদমর্যাদায় তা রাজ্যের প্রতিমন্ত্রীর সমতুল। চিকিৎসকদের হুমকি দেওয়া এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য পেশের জন্য অবিলম্বে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে শুক্রবার মুচিপাড়া ও বিধাননগর থানায় দু’টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। দু’টি অভিযোগই দায়ের করেছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চিকিৎসক যতীন্দ্রচন্দ্র পাল। প্রবীণ ওই চিকিৎসক তাঁর অভিযোগপত্রে লিখেছেন, নির্মলবাবু গত বুধবার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক সভায় সাংসদ মুকুল রায় এবং কয়েক জন চিকিৎসকের সামনে উত্তরবঙ্গে সাসপেন্ড হওয়া স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সম্পর্কে বলেছিলেন, “যারা কাজ করে না, তাদের কুশপুতুল পুড়বে নাকি জ্যান্ত পুতুল পুড়বে, তা জানা নেই।” যতীন্দ্রবাবুর বক্তব্য, এটা স্পষ্টই ভীতি প্রদর্শন এবং প্রাণনাশের হুমকি।

Advertisement

বিরোধীদের খুন এবং ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার পরে তৃণমূল সাংসদ তাপসবাবুর বিরুদ্ধে একাধিক থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। সাংসদ অবশ্য দলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে অন্তরালে চলে যান। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি। নির্মলবাবু কিন্তু তাঁর বক্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। হাওড়ায় এ দিনই তিনি বলেন, “যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে অশালীন ভাষায় কথা বলেন, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেন, চিকিৎসা করতে গিয়ে ব্যবসা করেন, তাঁদের কি গাঁদা ফুলের মালা দেব? ওঁদের জামা-প্যান্ট খুলে নেওয়া উচিত!” তবে চিকিৎসকদের জ্যান্ত পুতুল পোড়ানোর মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে একই সঙ্গে এ দিন তিনি বলেন, “মজা করে বলেছি! জ্যান্ত কুশপুত্তলিকা হয় নাকি?” চিকিৎসকদের রাস্তায় জামা-প্যান্ট খুলে নেওয়ার কথা বলাটা কি উস্কানিমূলক নয়? এটা কি কোনও চিকিৎসক অন্য চিকিৎসককে বলতে পারেন? নির্মলবাবুর জবাব, “আমার বক্তব্য থেকে এতটুকুও সরছি না!”

শাসক দলের চিকিৎসক-নেতার মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, “বদল চাই বলে ক্ষমতায় এসে এখন বদলার রাজনীতি হচ্ছে। এক জন সাংসদ বলছেন, নলি কেটে দেব। এক জন বিধায়ক বলছেন, জ্যান্ত পুতুল পুড়বে!” বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, “তৃণমূল গুন্ডা তৈরির কারখানা হয়ে গিয়েছে! নির্মল মাজিকে সাসপেন্ড করা উচিত। তাঁর ওই মন্তব্যের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর উচিত রাজ্যবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া!” পুলিশ তিন সপ্তাহের মধ্যে নির্মলবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আন্দোলনে নামারও হুমকি দিয়েছে বিজেপি। তাদের দাবি, নির্মলবাবুর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা উচিত। থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার সময়ে বিজেপি-র যুব মোর্চার কর্মীরা ছিলেন। পরে বিজেপি থানায় বিক্ষোভও দেখায়।

তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য সিদ্ধার্থনাথের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তৃণমূল নেতা বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নির্মল কি সিদ্ধার্থনাথের দলের কর্মী, যে ওঁকে সাসপেন্ড করার কথা উনি বলছেন? ওঁকে জ্ঞান দিতে হবে না! আমাদের দলে কী করণীয়, তা আমাদের নেত্রী ভালই জানেন। সিদ্ধার্থনাথ নিজের চরকায় তেল দিন!”

এ রাজ্যে চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন দেয় যে প্রতিষ্ঠান, নির্মলবাবু সেই রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলেরও সভাপতি। এটাও কি তাঁর এমন মন্তব্য করেও রেহাই পাওয়ার অন্যতম কারণ? সে প্রশ্নও তুলেছেন চিকিৎসকদের একটা অংশ। সিপিএম-প্রভাবিত চিকিৎসক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস-এর সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “উনি চিকিৎসকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) রাজ্য শাখারও সভাপতি। আমরা তাই আইএমএ-র সর্বভারতীয় শাখা এবং মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়াকে চিঠি লিখব। ওঁর আচরণ মেনে নেওয়া যায় না।” নির্মলবাবু অবশ্য পাল্টা বলেছেন, “কে, কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় দেখা যাবে! যাঁরা প্রকাশ্য সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন, কয়েক দিনের মধ্যে তাঁদের বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন