দলে আরও মুখ ফুটুক, বার্তা বাম রিপোর্টে

শাসক দলে বইছে বিদ্রোহের হাওয়া! বিদ্রোহের ঝাপ্টায় কোন গাছের কোন মুকুল কখন ঝরে যায়, উৎকণ্ঠায় আছেন তৃণমূল নেতৃত্ব! প্রায় রোজই তাঁদের মরিয়া চেষ্টা করতে হচ্ছে বিদ্রোহীদের মুখ বন্ধ করতে। সেই সময়েই খাতায়-কলমে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের আক্ষেপ, দলের অন্দরে আত্মসমালোচনার আবহ এখনও গড়ে ওঠেনি।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩২
Share:

শাসক দলে বইছে বিদ্রোহের হাওয়া! বিদ্রোহের ঝাপ্টায় কোন গাছের কোন মুকুল কখন ঝরে যায়, উৎকণ্ঠায় আছেন তৃণমূল নেতৃত্ব! প্রায় রোজই তাঁদের মরিয়া চেষ্টা করতে হচ্ছে বিদ্রোহীদের মুখ বন্ধ করতে। সেই সময়েই খাতায়-কলমে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের আক্ষেপ, দলের অন্দরে আত্মসমালোচনার আবহ এখনও গড়ে ওঠেনি। আসন্ন রাজ্য সম্মেলনের রিপোর্টে সিপিএম তার নেতাদের পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে, দলের নানা স্তরে কর্মীদের সমালোচনা ও আত্মসমালোচনার অধিকারকে মর্যাদা দিতে হবে। অসহিষ্ণু না হয়ে দিতে হবে তাঁদের প্রশ্নের জবাব।

Advertisement

ক্ষমতা হারানোর পর সিপিএমের কাজের ধারায় একটু একটু করে খোলা হাওয়ার অনুপ্রবেশ দেখা যাচ্ছে। যাকে বলা হচ্ছে, চাপের মুখে নমনীয় হওয়া। দলের আসন্ন ২৪ তম রাজ্য সম্মেলনে সেই পথেই আরও কয়েক কদম এগোতে চাইছে সিপিএম। সম্মেলনে পেশ করার জন্য তৈরি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক খসড়া প্রতিবেদনে সেই ইঙ্গিতই স্পষ্ট। যেখানে এ বার মেনে নেওয়া হয়েছে, দলের মধ্যে ‘নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা অপেক্ষা অনেক সময়ই ভয়’ কাজ করে। আগে এই নিয়ে দলক সতর্ক করেও কাজ হয়নি। তাই এ বার দলের সব স্তরের নেতৃত্বকে গণতান্ত্রিক পরিবেশের প্রতি অনেক বেশি নজর দিতে বলা হয়েছে খসড়া রিপোর্টে।

‘গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা’র নীতির উপরে এ বার বিশেষ একটি অধ্যায়ই বরাদ্দ হয়েছে সিপিএমের রিপোর্টে। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে বিতর্ক অবশ্য বহু দিনের। এ রাজ্যেও অধুনা প্রয়াত নেতা সৈফুদ্দিন চৌধুরী পৃথক দল গড়ার আগে প্রশ্ন তুলেছিলেন সিপিএমের গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার কার্যকারিতা নিয়ে। গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার মানে হল দলের মধ্যে মত জানানোর সুযোগ সবাই পাবেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠের যে মতামত প্রধান্য পাবে, তাকেই বিনা প্রশ্নে মেনে নিতে হবে। পরবর্তী কালে এ রাজ্যের সিপিএমেই সুভাষ চক্রবর্তী, আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা বা দিল্লিতে প্রসেনজিৎ বসুরা অভিযোগ করেছেন, গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নামে মুষ্টিমেয় কিছু নেতার পছন্দ-অপছন্দই জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্যদের উপরে। এমনকী, লক্ষ্মণ শেঠের মতো নেতাও দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরে তোপ দেগেছেন, সিপিএমে কেন্দ্রিকতাই আছে। গণতন্ত্র নেই!

Advertisement

পুরনো বিক্ষুব্ধ নেতাদের সুরেই সিপিএমের এ বারের প্রতিবেদনে মেনে নেওয়া হয়েছে: ‘দল থেকে প্রতিহিংসার মনোভাবের ভয়ে সদস্যেরা যেখানে আলোচনা ও সমালোচনায় উৎসাহিত হন না, সেখানে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার ক্ষয় হয় এবং পার্টি সংগঠনের শক্তিবৃদ্ধি ঘটে না।...কমিটির অভ্যন্তরে কমিটির কাজের এবং ব্যক্তিবিশেষের কাজের খোলামেলা সমালোচনা হয় না’।

কেন এখন দলের মধ্যে গণতন্ত্রের উপরে এত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তার ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, ‘প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নতুন অসংখ্য কর্মী পার্টিতে আসছেন। পরিবর্তনশীল সমাজে পার্টির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে তাঁদের বহু প্রশ্ন ও কৌতূহল স্বাভাবিক। ধৈর্য ধরে কমিটির সভায় তা শোনা, তাঁদের সহায়তা করা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া, সংগ্রামের ময়দানে যথার্থ ভূমিকা পালনের জন্য শিক্ষাদান এ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ’। দলের দুর্দিনে যেটুকু নতুন মুখ সিপিএমের দিকে আসছে, তাদেরও যাতে বিরূপ করে তোলা না হয়, সেই বার্তাই দেওয়া হচ্ছে সম্মেলনের রিপোর্টে। স্পষ্টই বলা হয়েছে, ‘প্রশ্নের প্রতি তাচ্ছিল্য, বিদ্রুপ ও অসহিষ্ণুতা গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতির ক্ষতিসাধন করে। সমালোচনা ও আত্মসমালোচনায় উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের দায়িত্বই সর্বাধিক’।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মনোভাব বদলানোকে রেজ্জাকেরা বলছেন, ‘বিলম্বে বোধোদয়’! প্রশ্ন, দলের মধ্যে যাঁরা গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা নিয়ে সরব হয়েছিলেন, তাঁদের অনেককে শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছিল কেন? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “এই অভিযোগ একেবারেই ঠিক নয়। যাঁরা সব রকম শৃঙ্খলার সীমা অতিক্রম করেছিলেন, তাঁদেরই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। দলের মধ্যে মুখ খুললেই শাস্তি কখনও হয়নি।”

তা হলে কি সিপিএমের জেলা বা রাজ্য কমিটির বৈঠক আরও সরগরম হবে? সেই প্রশ্নেও প্রচ্ছন্ন একটি সতর্ক-বার্তা দেওয়া রয়েছে এ বারের রিপোর্টে। বলা হয়েছে, বেশ কিছু দিন ধরেই রাজ্য কমিটির বৈঠকের খবর সংবাদমাধ্যমে বেরিয়ে যাচ্ছে! সদস্যদের এই ‘ঝোঁক’ বন্ধ হওয়া দরকার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন