নাগাড়ে দুর্ঘটনা, তবু বন্ধ হয়নি লেন ভাঙার প্রবণতা

নামেই জাতীয় সড়ক। রয়েছে আপ ও ডাউন দু’টি পৃথক লেনও। কিন্তু আইন মেনে যান চলাচলের বালাই এখানে নেই। বালাই নেই পথ নিরাপত্তার। গাড়ির চালক এবং আরোহীদের চলাচল করতে হয় প্রাণ হাতে করে। বস্তুত এমনই অবস্থায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক তথা মুম্বই রোড। সোমবার নৈরাজ্যের এমনই অবস্থার শিকার হলেন পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের তৃণমূল বিধায়ক জ্যোতির্ময় কর। উলুবেড়িয়ার বানীতবলার কাছে তাঁর গাড়ির পাশাপাশি একই দিকে আসতে থাকা একটি ডাম্পার আচমকা ডানদিকে ঘুরে পড়ে। উদ্দেশ্য, ডিভাইডারের ফাঁক গলে উল্টোদিকের লেনে যাওয়া।

Advertisement

নুরুল আবসার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৪ ০৪:০৩
Share:

অবাধে চলছে লেন ভাঙা। বাগনানের কাছে তোলা ছবি।

নামেই জাতীয় সড়ক। রয়েছে আপ ও ডাউন দু’টি পৃথক লেনও। কিন্তু আইন মেনে যান চলাচলের বালাই এখানে নেই। বালাই নেই পথ নিরাপত্তার। গাড়ির চালক এবং আরোহীদের চলাচল করতে হয় প্রাণ হাতে করে। বস্তুত এমনই অবস্থায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক তথা মুম্বই রোড।

Advertisement

সোমবার নৈরাজ্যের এমনই অবস্থার শিকার হলেন পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের তৃণমূল বিধায়ক জ্যোতির্ময় কর। উলুবেড়িয়ার বানীতবলার কাছে তাঁর গাড়ির পাশাপাশি একই দিকে আসতে থাকা একটি ডাম্পার আচমকা ডানদিকে ঘুরে পড়ে। উদ্দেশ্য, ডিভাইডারের ফাঁক গলে উল্টোদিকের লেনে যাওয়া। আচমকা এমন ঘটে যাওয়ায় গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় বিধায়কের গাড়ি সরাসরি ডাম্পারে গিয়ে ধাক্কা মারে। বিধায়ক, তাঁর গাড়ির চালক এবং আপ্ত সহায়ক গুরুতর জখম হয়েছেন। তবে এমন ঘটনা যে একদিনের নয়, ডোমপাড়ার কাছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িগুলি যেখানে পুলিশ জমা রাখে মামলার প্রয়োজনে সেখানে গেলেই তো বোঝা যাবে। দিনের পর দিন বাড়ছে ভাঙাচোরা গাড়ির স্তুপ। দেখলে মালুন হয়, দুর্ঘটনার সংখ্যা কী হারে বেড়েছে এই রাস্তায়। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যাও।

২০০৩ সালে ডানকুনি থেকে খড়্গপুর পর্যন্ত ৯২ কিলোমিটার এই সড়ক দুই লেন থেকে চার লেনে পরিণত হয়। গাড়ির সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকায় বর্তমানে তা পরিণত হচ্ছে ছয় লেনে। চার লেনের রাস্তায় দু’টি পৃথক লেন রয়েছে, একটি খড়্গপুরগামী গাড়ির জন্য, পাশেরটি হাওড়াগামী গাড়ির জন্য। কিন্তু সেই মতো গাড়ি চলাচলের আইন অনেক সময়ই মানা হয় না বলে অভিযোগ। বিশেষত, আইন ভাঙার ঘটনা বেশি ঘটে হাওড়া জেলায়। এখানে ডোমজুড়ের জঙ্গলপুর থেকে কোলাঘাট পর্যন্ত রাস্তার ধারে গড়ে উঠেছে অজস্র শিল্প-কারখানা, গুদামঘর প্রভৃতি। এইসব কারখানা বা গুদামঘরে যে সব পণ্যবাহী ট্রাক আসে, যত্রতত্র লেন ভাঙার অভিযোগটি ওঠে মূলত তাদের বিরুদ্ধে। জাতীয় সড়ক সংস্থারও এইসব পণ্যবাহী ট্রাক চালকদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ।

Advertisement

কিন্তু কী করে তারা?

জাতীয় সড়ক সংস্থার বক্তব্য, এক লেন থেকে অন্য লেনে আসার জন্য তারা ডিভাইডার কেটে নির্দিষ্ট জায়গা করে দিয়েছে। কিন্তু পণ্যবাহী ট্রাক চালকেরা সেইসব নিয়ম মানেন না। এলাকার মানুষও মোটরবাইক বা গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের প্রয়োজনে যত্রতত্র ডিভাইডার কেটে এক লেন থেকে অন্য লেনে চলাচলের রাস্তা করে নিয়েছে। ওই সব অংশ দিয়েই কারখানার পণ্যবাহী ট্রাকগুলিও অন্য লেনে চলে আসে। এটা তারা করে পথ সংক্ষেপ করার জন্য, কারণ নিয়ম মেনে লেন পরিবর্তন করতে হলে তাদের অনেকটা পথ ঘুরতে হবে। তাই সহজে গন্তব্যে পৌঁছতে এই বেআইনি পথই বেছে নেয় তারা। আর তখনই অন্য গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দিনের পর দিন এইভাবেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে বলে জানান জাতীয় সড়ক সংস্থা এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। তা হলে বেআইনি এই সব রাস্তাগুলি বন্ধ করা হয় না কেন? এ বিষয়ে জাতীয় সড়ক সংস্থার এক পদস্থ আধিকারিক জানান, দু’একবার তাঁদের তরফে এগুলি বন্ধ করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধায় তা কার্যকর করা যায়নি।


সোমবার একটি ডাম্পারের লেন ভাঙার জেরে দুর্ঘটনাগ্রস্ত পটাশপুরের তৃণমূল বিধায়কের গাড়ি।

জাতীয় সড়ক চার লেন বা ছয় লেনে পরিণত হলে দুর্ঘটনার সংখ্যা যে বাড়তে পারে সেই আশঙ্কা রয়েছে খোদ কেন্দ্রীয় ভূতল পরিবহণ দফতরেরই। সেই কারণে জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে কী কী ব্যবস্থা করা দরকার সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ভূতল পরিবহণ দফতর নিয়োজিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশও জাতীয় সড়ক সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলির কাছে পাঠানো হয়েছে। যদিও তারপরেও দুর্ঘটনা কমার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি মুম্বই রোডে। জাতীয় সড়ক সংস্থার কলকাতা ইউনিটের প্রকল্প অধিকর্তার দফতর থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে অ্যাম্বুল্যান্স এবং ক্রেনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রয়েছে টহলদারি গাড়ি, যাতে দুর্ঘটনা ঘটলেই তার খবর, হাসপাতাল এবং পুলিশকে দ্রুত দেওয়া যায়। কিন্তু রাস্তায় আইন মেনে গাড়ি চলছে কিনা সেটা দেখার দায়িত্ব পুলিশের বলে দাবি করেন জাতীয় সড়ক সংস্থার এক কর্তা।

হাওড়া জেলা গ্রামীণ পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হাওড়া কমিশনারেট এবং জেলা গ্রামীণ পুলিশে ভাগ হয়ে যাওয়ার পরে জেলায় ট্রাফিক পুলিশের কোনও অস্তিত্ব নেই। এর ফলে নিজেদের মতো করে ঠেকা দিয়ে তাঁরা কোনওমতে সাধারণ পুলিশ দিয়েই মুম্বই রোডে যান চলাচলে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করছেন বলে জেলা গ্রামীণ পুলিশের এক কর্তা জানান। যদিও তাঁর দাবি, সীমিত ক্ষমতার মধ্যেই আগের বছরের তুলনায় দুর্ঘটনার হার তাঁরা কমাতে পেরেছেন।

অন্যদিকে রাজ্য ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মুম্বই রোড-সহ অন্যান্য জাতীয় সড়কে ট্রাফিক গার্ড মোতায়েন করার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে। হাওড়াতেও দু’টি ট্রাফিক গার্ড করার প্রস্তাব রয়েছে। যদিও সেই প্রস্তাব কবে রূপায়িত হবে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি রাজ্য ট্রাফিক পুলিশের কর্তারা।

ছবি: সুব্রত জানা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন