নেতাই কাণ্ডে সিআইডি-র জালে অনুজ

অবশেষে গ্রেফতার হলেন নেতাই-কাণ্ডে অভিযুক্ত লালগড়ের সিপিএম নেতা অনুজ পাণ্ডে। দীর্ঘ তিন বছর গা ঢাকা দিয়ে থাকার পরে মঙ্গলবার গভীর রাতে ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার চন্দ্রপুরা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে সিআইডি। বুধবার অনুজকে বর্ধমান আদালতে তোলা হয়। সিআইডি ধৃতকে ট্রানজিট রিমান্ডে নিজেদের হেফাজতে চাইলে সিজেএম সেলিম আহমেদ আনসারি তা মঞ্জুর করেন। আজ, বৃহস্পতিবার সিপিএমের বিনপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক অনুজকে ঝাড়গ্রাম আদালতে হাজির করানো হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান ও লালগড় শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০৩:৩০
Share:

বর্ধমান আদালতে তোলা হচ্ছে অনুজ পাণ্ডেকে। বুধবার। ছবি: উদিত সিংহ।

অবশেষে গ্রেফতার হলেন নেতাই-কাণ্ডে অভিযুক্ত লালগড়ের সিপিএম নেতা অনুজ পাণ্ডে। দীর্ঘ তিন বছর গা ঢাকা দিয়ে থাকার পরে মঙ্গলবার গভীর রাতে ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার চন্দ্রপুরা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে সিআইডি। বুধবার অনুজকে বর্ধমান আদালতে তোলা হয়। সিআইডি ধৃতকে ট্রানজিট রিমান্ডে নিজেদের হেফাজতে চাইলে সিজেএম সেলিম আহমেদ আনসারি তা মঞ্জুর করেন। আজ, বৃহস্পতিবার সিপিএমের বিনপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক অনুজকে ঝাড়গ্রাম আদালতে হাজির করানো হবে।

Advertisement

গত ২৮ এপ্রিল নেতাই-কাণ্ডে অভিযুক্ত পাঁচ সিপিএম নেতা-কর্মীকে হায়দরাবাদ থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি-ই। ধৃতদের মধ্যে ছিলেন সিপিএমের ধরমপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক ডালিম পাণ্ডে, লালগড় লোকাল সম্পাদক জয়দেব গিরি, বিনপুর জোনাল সদস্য খলিলুদ্দিন, লালগড় লোকাল কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক তপন দে ও দলীয় কর্মী রথীন দণ্ডপাট। তাঁরা এখন জেল হেফাজতে। নেতাই মামলার দায়িত্বে কিন্তু রয়েছে সিবিআই। ২০ জন সিপিএম নেতা-কর্মীর নামে সিবিআই চার্জশিটও দিয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১২ জন গ্রেফতার হয়েছিলেন আগেই। বাকি ৮ জন ঘটনার পর থেকে ‘ফেরার’ ছিলেন। এ বার অনুজ ধরা পড়ার পরে এই মামলায় ফেরার রইলেন আর দু’জন। তাঁরা হলেন বেলাটিকরি লোকাল কমিটির সম্পাদক চণ্ডী করণ এবং জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য ফুল্লরা মণ্ডল।

এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ ঝাড়খণ্ডের নম্বর লাগানো লালবাতি লাগানো গাড়িতে অনুজকে নিয়ে বর্ধমান পৌঁছন সিআইডি-র অফিসারেরা। বর্ধমান মেডিক্যালে তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে সরকারি আইনজীবী চন্দ্রনাথ গোস্বামী ও সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসার অতনু চক্রবর্তী অনুজকে আদালতে নিয়ে যান। অনুজের পরনে ছিল সাদা টি-শার্ট ও কালো প্যান্ট। বেশ উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল। আদালতে দাঁড়িয়ে বারবার তিনি রুমাল দিয়ে মুখ-গলা মুছছিলেন।

Advertisement

সিআইডি এ দিন আদালতে জানায়, মঙ্গলবার রাত একটা নাগাদ ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার চন্দ্রপুরা থানার ঝর্নাডিতে ডিভিসির আবাসন (জি-৭/৩১) থেকে অনুজকে ধরা হয়। সেখানে এক আত্মীয়ের কাছে ছিলেন তিনি। অনুজের শ্যালক চন্দ্রপুরা থানার সারেঙ্গার বাসিন্দা দীপককুমার পাণ্ডেকে সিআইডি নিয়ে গিয়েছিল। তিনিই অনুজকে শনাক্ত করেন।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি লালগড়ের নেতাইয়ে রথীন দণ্ডপাটের বাড়িতে থাকা সিপিএমের ‘সশস্ত্র শিবির’ থেকে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। নিহত হন চার মহিলা-সহ ৯ জন নিরীহ গ্রামবাসী। আহত হন অন্তত ২৮ জন। সেই ঘটনাতেই অভিযুক্ত অনুজেরা। নেতাই-কাণ্ডের প্রায় দু’বছর আগে ২০০৯ সালের ১৫ জুন লালগড়ের ধরমপুরে অনুজের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুর করে আগুন লাগানো হয়েছিল সিপিএমের ধরমপুর লোকাল কমিটির কার্যালয়েও। মাওবাদী-জনগণের কমিটির সক্রিয়তার ওই পর্বে দীর্ঘ দিন এলাকা ছাড়া ছিলেন অনুজ, ডালিমরা। নেতাই-কাণ্ডের আগে তাঁরা ফের এলাকায় যাতায়াত শুরু করেন। নেতাইয়ের ঘটনার পর ফের গা ঢাকা দেন তাঁরা।

ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রে ভোট ছিল বুধবার। লালগড়ের ধরমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে এ দিন ভোট দেন অনুজের মা কনকলতাদেবী, স্ত্রী জয়শ্রী এবং ভাই উজ্জ্বল। উজ্জ্বলের দাবি, “আমার দাদা চক্রান্তের শিকার। তবে সত্যি কোনও দিন চাপা থাকে না। এক দিন তা সামনে আসবেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন