নেত্রীর চাপেই দুঃখ প্রকাশ করলেন কল্যাণ

মঙ্গলবার পর্যন্ত নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন। সংসদের বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েও দিয়েছিলেন, ‘ক্ষমা চাইব কেন! তার প্রশ্নই নেই।’ কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুর বদলে গেল তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। লোকসভায় শুধু দুঃখপ্রকাশই করলেন না, স্পিকারকে ‘মাতৃসমা’ বলেও সম্বোধন করলেন!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১৮
Share:

মঙ্গলবার পর্যন্ত নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন। সংসদের বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েও দিয়েছিলেন, ‘ক্ষমা চাইব কেন! তার প্রশ্নই নেই।’ কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুর বদলে গেল তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। লোকসভায় শুধু দুঃখপ্রকাশই করলেন না, স্পিকারকে ‘মাতৃসমা’ বলেও সম্বোধন করলেন!

Advertisement

হঠাত্‌ কেন এই ভোলবদল? তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, এর পিছনে রয়েছে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ। রাজ্যে বিজেপি ক্রমে প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক প্রচারের কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু সেটা সৌজন্যের সীমা ছাড়িয়ে যাক, তা কখনওই চাননি। সংসদে এই ক’দিন সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো পুরনো সাংসদরা এই কাজটাই করে দেখিয়েছেন। তাঁরা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হয়েছেন, কিন্তু বরাবর সৌজন্য বজায় রেখে।

কল্যাণের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি শুধু মাঠের প্রচারেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কুকথা বলে ক্ষান্ত হননি, সংসদেও বিপক্ষ সাংসদকে তুই-তোকারি করেছেন। এর প্রতিবাদে গত তিন দিন ধরে সংসদে সরব ছিল বিজেপি। শাসক দলের দাবি ছিল, নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে কল্যাণকে। অন্যথায় তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

Advertisement

কল্যাণ ক্ষমা চেয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিন, এটা চাইছিলেন সৌগত-সুদীপরাও। কিন্তু কল্যাণ বরাবরই বোঝাতে চাইছিলেন, তিনি কিছু করেননি। তাই ক্ষমাও চাইবেন না। এই কথা মমতার কানে যায়। তাঁর নির্দেশেই আজ সকালে প্রথমে স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের ঘরে গিয়ে নিজের নমনীয়তার ইঙ্গিত দেন বলে খবর।

এর পরে লোকসভার জিরো আওয়ারে কল্যাণ-প্রসঙ্গটি তোলেন সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু। তখনও প্রথমে আত্মপক্ষ সমর্থন করে কল্যাণ বলেন, “আমি নিজের কেন্দ্রে যা বলেছিলাম, তা নিয়ে কিছু সাংসদের আপত্তি রয়েছে। আমি মনে করি না লোকসভার বাইরের মন্তব্যকে ঘিরে সংসদে আলোচনার কোনও প্রয়োজন রয়েছে।” তার পরেই অবশ্য তাঁর মন্তব্য, “প্রধানমন্ত্রী মোদী বা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীকে অসম্মান করার জন্য কিছু বলিনি। দু’জনের প্রতি আমার পূর্ণ মাত্রায় সম্মান রয়েছে। আসলে বিজেপি সভাপতি আমাদের দলনেত্রীকে নিশানা করে এমন কিছু মন্তব্য করেছিলেন, তার জন্যই আমি ওই কথা বলেছিলাম।”

এ বার মুখ খোলেন বেঙ্কাইয়া। আক্রমণ শানিয়ে বলেন, “লোকসভার বাইরে ও ভিতরে যে ভাবে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন, অঙ্গভঙ্গি করে নেচেছেন, তা গোটা দেশ দেখেছে। এটা কোনও ব্যক্তি বা দলের নয়, গোটা সংসদের সম্মানের প্রশ্ন।” বেঙ্কাইয়ার যুক্তি, অতীতেও একাধিক বার লোকসভায় এমন কাণ্ড করেছেন কল্যাণ। কটূক্তি করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। সে সব উদাহরণ যদি স্পিকারের কাছে পেশ করা হয়, তা হলে বড় শাস্তি পেতে হবে তাঁকে। এর পরে খোদ স্পিকার অত্যন্ত নরম ভাবে কল্যাণকে বলেন, “ক্ষমা চাইলে কেউ ছোট হয় না। ক্ষমা চাইলে যদি সমস্যা মিটে যায়, তা হলে তা চেয়ে নেওয়াই ভাল।”

তত ক্ষণে সুর নরম করে নেওয়া কল্যাণ উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, “আপনি আজ সকালে কিছু নির্দেশ দিয়েছিলেন। আপনি মায়ের মতো করে বুঝিয়েছেন। সংসদে আপনি আমাদের অভিভাবক। আপনার পদের সম্মান রক্ষা করে আমি বলতে চাই, আমার কথায় কেউ যদি আঘাত পেয়ে থাকেন, তা হলে তার জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি।”

যদিও এর আগে কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়গে ও সমাজবাদী পার্টির মুলায়ম সিংহ যাদব সওয়াল করেন, কল্যাণ তো সংসদের বাইরে বলেছেন। তাঁরা কল্যাণের মন্তব্যকে সমর্থন না করলেও ওই বক্তব্যের জন্য আলাদা করে ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না। পাল্টা যুক্তিতে বেঙ্কাইয়া বলেন, এ ক্ষেত্রে রাস্তা দেখিয়েছে বিরোধী শিবিরই। বাইরে বক্তব্য রাখার জন্য সাধ্বী নিরঞ্জন যদি ক্ষমা চাইতে পারেন, তা হলে কল্যাণ কেন ছাড় পাবেন। কল্যাণের কাছে তত ক্ষণে নেত্রীর নির্দেশও এসে গিয়েছে। সৌগতবাবুর সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি ক্ষমা চান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন