নন্দীগ্রাম-ফাইলের হদিস হাইকোর্টে, শুনানিও চালু

নন্দীগ্রাম-মামলার হারিয়ে যাওয়া ফাইল খুঁজে পেল কলকাতা হাইকোর্ট। গত ফেব্রুয়ারিতে নন্দীগ্রাম সংক্রান্ত এক মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে পেরেছিলেন যে, ফাইলগুলোর হদিস মিলছে না। নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু পরিবারের দায়ের করা মামলার শুনানিতে সে দিন বাদীপক্ষের কৌঁসুলি রাজদীপ মজুমদার বলেছিলেন, নন্দীগ্রাম-কাণ্ড নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একাধিক মামলা হয়েছে। এবং তার সব ফাইল হাইকোর্ট থেকেই হারিয়ে গিয়েছে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৪ ০৩:২৭
Share:

নন্দীগ্রাম-মামলার হারিয়ে যাওয়া ফাইল খুঁজে পেল কলকাতা হাইকোর্ট। গত ফেব্রুয়ারিতে নন্দীগ্রাম সংক্রান্ত এক মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে পেরেছিলেন যে, ফাইলগুলোর হদিস মিলছে না। নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু পরিবারের দায়ের করা মামলার শুনানিতে সে দিন বাদীপক্ষের কৌঁসুলি রাজদীপ মজুমদার বলেছিলেন, নন্দীগ্রাম-কাণ্ড নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একাধিক মামলা হয়েছে। এবং তার সব ফাইল হাইকোর্ট থেকেই হারিয়ে গিয়েছে!

Advertisement

শুনে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন বিচারপতি। হাইকোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রারকে ডেকে তিনি নির্দেশ দেন, অবিলম্বে সব ফাইল খুঁজে বার করতে হবে। এর ক’দিন বাদেই ফাইলের খোঁজ মিলেছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের দাখিল করা মামলাটির শুনানিও সোমবার চালু হয়েছে। আবেদনে পরিবারগুলির অভিযোগ, নন্দীগ্রামে গুলিচালনার পরে দীর্ঘ দিন কেটে গেলেও তারা সুবিচার পাচ্ছে না। ঘটনার সিবিআই-তদন্তে অগ্রগতি কী হয়েছে, তা-ও জানা যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় হাইকোর্টের কাছে আবেদনকারীদের আর্জি, সিবিআই-তদন্তের গতি ত্বরান্বিত করে তাদের দ্রুত সুবিচারের ব্যবস্থা হোক।

এ দিন শুনানি চলাকালীন রাজদীপবাবু বলেন, নন্দীগ্রামে অভিযুক্ত রাজ্য পুলিশের তিন অফিসার সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাশিস বড়াল ও শেখর রায়কে জেরা করতে রাজ্যের অনুমোদন চেয়েছে সিবিআই। কিন্তু কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটি কোটের্র্ যে চার্জশিট জমা দিয়েছে, তাতে বিস্তর অসঙ্গতি। সিবিআই বলেছে, ২০০৭-এর ১৪ মার্চের ওই গুলিচালনায় নন্দীগ্রামের অধিকারীপাড়ায় মারা গিয়েছিলেন তিন জন। তাই সে দিন অধিকারীপাড়ায় যে তিন পুলিশ অফিসার ডিউটি করেছিলেন, তাঁদের জেরা করতে রাজ্যের অনুমতি চেয়েছে সিবিআই। এ দিকে সে দিন তেখালিতে ১১ জন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়। অথচ সেখানে মোতায়েন ছিলেন যে তিন পুলিশ অফিসার, সেই অরুণ গুপ্ত, এন শ্রীনিবাস ও তন্ময় রায়চৌধুরীকে সিবিআই জেরা করতে চায়নি।

Advertisement

চার্জশিটে এ হেন ‘অসঙ্গতি’র যুক্তিতে হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে নতুন ভাবে নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের তদন্ত চেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তদের কৌঁসুলি। রাজদীপবাবুর আর্জি শুনে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ঘটনাটিতে নতুন করে সিবিআই-তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার এক্তিয়ার নেই তাঁর। তবে ক্ষতিগ্রস্থদের আবেদন তিনি বিবেচনা করে দেখবেন। তাই তাদের তরফে যেন চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিয়ে নিজেদের বক্তব্য আদালতে পেশ করা হয়। একই ভাবে রাজদীপবাবুদের তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গে সিবিআইয়ের বক্তব্যও বিচারপতি জানতে চেয়েছেন। এ ব্যাপারে হলফনামা পেশের জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদেরও চার সপ্তাহ সময় দিয়েছে হাইকোর্ট। জুন মাসে মামলাটির ফের শুনানি হবে।

নন্দীগ্রাম-কাণ্ড সংক্রান্ত জনস্বার্থ-মামলায় হাইকোর্টের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি এসএস নিজ্জর ও বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ রায় দিয়ে বলেছিলেন, পুলিশের গুলিচালনা অবৈধ ও অসাংবিধানিক ছিল। ওঁদের নির্দেশে ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সম্প্রতি সিবিআইয়ের চার্জশিটেও দাবি করা হয়েছে, নন্দীগ্রামে সে দিন পরিস্থিতির চাপে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছিল। সিবিআই-সূত্রের বক্তব্য: নন্দীগ্রাম-কাণ্ড নিয়ে সিবিআই যে চারটে মামলা শুরু করে, তার দু’টোয় কোনও সারবত্তা নেই। একটা মামলায় সম্প্রতি চার্জশিট জমা পড়েছে। আর একটায় অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের জেরা করার সরকারি অনুমতি না-মেলায় তদন্তের কাজ আটকে আছে।

প্রসঙ্গত, সিবিআইয়ের কৌঁসুলি ফিরোজ আবু এর আগে হাইকোর্টে জানিয়েছেন, অন্য কিছু পুলিশ অফিসারকে জেরা করার কথা রাজ্য সরকার বললেও সিবিআই তার সঙ্গে একমত নয়। দীর্ঘ তদন্তে সিবিআই যাঁদের অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে, একমাত্র তাঁদেরই জেরা করা হবে। “সিবিআই স্বয়ংশাসিত সংস্থা। কোনও রাজ্য সরকারের নির্দেশে তারা কাজ করতে পারে না।” বলেছেন তিনি। ওঁদের আরও দাবি: সিবিআই কোনও কিছুর তদন্ত এক বার শেষ করলে দ্বিতীয় বার একই ঘটনার তদন্ত করার এক্তিয়ার তাদের নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন