এনআরএস

নম্বর ধরে খোঁজা হচ্ছে আবাসিকরা কে কোথায় ছিলেন

এনআরএসে এক মানসিক প্রতিবন্ধীকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় হস্টেলের আবাসিকদের পূর্ণ তালিকা ও মোবাইল নম্বর পেল পুলিশ। এ বার মোবাইল টাওয়ারের অবস্থান খতিয়ে দেখে কোন কোন আবাসিক ১৫ নভেম্বর রাতে হস্টেলে ছিলেন এবং পর দিন কে কোন অঞ্চলে গিয়েছিলেন তা খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। তদন্তকারীরা মঙ্গলবার এক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেও কিছু তথ্য পেয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৪ ০৪:০৭
Share:

এনআরএসে এক মানসিক প্রতিবন্ধীকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় হস্টেলের আবাসিকদের পূর্ণ তালিকা ও মোবাইল নম্বর পেল পুলিশ। এ বার মোবাইল টাওয়ারের অবস্থান খতিয়ে দেখে কোন কোন আবাসিক ১৫ নভেম্বর রাতে হস্টেলে ছিলেন এবং পর দিন কে কোন অঞ্চলে গিয়েছিলেন তা খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। তদন্তকারীরা মঙ্গলবার এক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেও কিছু তথ্য পেয়েছেন।

Advertisement

তদন্তকারীদের আশা, হস্টেলের আবাসিকদের গতিবিধির নিরিখে হবু ডাক্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে গণপিটুনির মূল হোতাদের চিহ্নিত করা যাবে। এক তদন্তকারী অফিসার মঙ্গলবার বলেন, “গণপিটুনিতে কোরপান শা-র মৃত্যুর দশ দিনের মাথায় হস্টেলের আবাসিকদের ফোন নম্বর পাওয়া গেল। এ বার তদন্ত নতুন খাতে বইতে শুরু করেছে।”

এই দশ দিন তবে এন্টালি থানা এবং লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ কী তদন্ত করল? লালবাজার সূত্রে বলা হচ্ছে, “এনআরএস কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতায় এত দিন তদন্তের কাজ এতটুকুও এগোয়নি। হস্টেলের কিছু আবাসিকের সঙ্গে একাধিক বার কথা বলা হয়েছে। তাঁদের অধিকাংশই তদন্তে সহযোগিতা করতে চাননি।” কেন?

Advertisement

লালবাজারের ওই সূত্রটি বলেন, “পুলিশ কেন খুনের মামলা করেছে, সেই প্রশ্ন তুলে আবাসিকরা তথ্য দিতে অস্বীকার করেছেন।” কেন এখনও এনআরএস-কর্তৃপক্ষ তদন্তে পুরোপুরি সাহায্য করছেন না? রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যা বলার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষা বলবেন। আমি বলব না।” কলেজের অধ্যক্ষা মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।

লালবাজারের এক পুলিশকর্তা এ দিন বলেন, “আমরা আবাসিকদের তথ্য চেয়েছিলাম গত সোমবার। শুক্রবার যে তালিকা আমাদের দেওয়া হয় তা ছিল অসম্পূর্ণ। ফের সম্পূর্ণ তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয় শনিবার। অবশেষে মঙ্গলবার বিস্তারিত তথ্য হাতে এল আমাদের। এ বার অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে সুবিধে হবে।” যদিও তদন্তকারীদের বক্তব্য, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফোন নম্বরের পাশাপাশি আবাসিকদের ছবি দিলে তদন্তে সুবিধে হতো। শুধু তাই নয়, এনআরএস হস্টেলের বাইরে থাকা একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ চেয়েও পায়নি পুলিশ। ওই ফুটেজ পাওয়া গেলে কোন কোন আবাসিক ঘটনার আগে-পরে হস্টেলে ঢুকেছেন ও বেরিয়েছেন তা জানা যাবে।

ঘটনার ঠিক পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়া মাঝবয়সি এক প্রতক্ষ্যদর্শীর সঙ্গে এ দিন কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। লালবাজার সূত্রের খবর, ১৬ নভেম্বর সকালে ওই ব্যক্তি একটি কাজে হস্টেলে গিয়েছিলেন। তিনি দেখতে পান পুলিশকর্মীরা আহত এক যুবককে পাঁজাকোলা করে নিয়ে যাচ্ছেন। হস্টেলের কোন কোন ঘরে আবাসিকরা ছিলেন তা তিনি দেখেছেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন। আবাসিকদের ছবি পেলে তিনি দোষীদের শনাক্তও করতে পারবেন বলে দাবি তদন্তকারীদের।

নানা অসহযোগিতায় এনআরএস-কাণ্ডের তদন্ত না এগোনোয় সোমবার একটি জনস্বার্থের মামলা দায়ের করেছে একটি সংগঠন। তার শুনানি এগিয়ে আনার দাবি করে ওই সংগঠনটির তরফে এ দিন কলকাতা হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর আইনজীবীর কাছে জানতে চান, ওই ঘটনায় যারা জড়িত, তিনি তাদের নাম জানেন কি না। ওই আইনজীবী তার সদুত্তর দিতে পারেননি। এর পরে প্রধান বিচারপতি জানান, ঘটনায় কারা জড়িত তা ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জানাক। নিছক সংবাদমাধ্যমের খবরের ভিত্তিতে তিনি এই মামলাকে জনস্বার্থের মামলা বলে বিবেচনা করবেন না। বরং ওই আইনজীবীকে সতর্ক করে দিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, “যদি প্রমাণ হয়, এটি জনস্বার্থ মামলা নয়, তা হলে আবেদনকারীকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে।” মামলাটির পরের শুনানি শুক্রবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন