রক্ত দিয়ে বক্রেশ্বরে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার ডাক দেওয়া হয়েছিল বাম জমানায়। আর পরিবর্তনের সরকার জানিয়ে দিল, দুই মেদিনীপুরের স্বার্থে প্রয়োজনে ভিক্ষা করেও ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ করা হবে।
সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার বিধানসভায় সেচ দফতরের বাজেটের জবাবি ভাষণে ভিক্ষে করেও ওই প্রকল্প গড়ার সঙ্কল্পের কথা জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, আগের ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে ভুল ছিল। তা সংশোধন করে ১৯৮০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। ওই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য কেন্দ্রের কাছে ৫০ শতাংশ টাকা চাওয়া হবে। কেন্দ্র টাকা না-দিলে রাজ্য সরকার নিজেই কাজটি করবে।
তাঁর দফতরের বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা বরাদ্দের ক্ষেত্রে কেন্দ্র বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে বলে সেচমন্ত্রীর অভিযোগ। তিনি জানান, বিগত আর্থিক বছরে কেন্দ্রীয় সরকার সেচ দফতরকে মাত্র ৩৩০ কোটি টাকা দিয়েছে। তার মধ্যে ২৮৪ কোটি টাকা দিয়েছে ২৮ থেকে ৩১ মার্চের মধ্যে। যখন আর ওই টাকা খরচ করা কোনও মতেই সম্ভব নয়।
সেচমন্ত্রীর অভিযোগ শুধু কেন্দ্রের বিরুদ্ধেই নয়। ওই দফতরের বিভিন্ন প্রকল্পে অনেক কাজ না-হওয়ার জন্য বিগত বাম জমানাকেও দোষারোপ করেন তিনি। আয়লার প্রসঙ্গ টেনে সেচমন্ত্রী বলেন, বিগত বাম সরকার আয়লা-বিধ্বস্ত সুন্দরবনের বাঁধ তৈরির জন্য ছ’টি ঠিকাদার সংস্থাকে ৬৮৫ কোটি টাকার কাজ বরাদ্দ করেছিল। তার আগাম হিসেবে ৬৮.৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল ওই সব সংস্থাকে। কিন্তু সংস্থাগুলি কাজ করেনি। বর্তমান সরকার ওই সব ঠিকাদারি সংস্থার কাছ থেকে সেই টাকা উদ্ধার করেছে। ওই কাজের জন্য বামফ্রন্ট সরকার একটি পরামর্শদাতা সংস্থাকেও নিয়োগ করেছিল। কাজ করেনি তারাও। তাদের কাছ থেকেও টাকা উদ্ধার করা হবে। তবে তারা আদালতে গিয়েছে। আয়লা-বিধ্বস্ত এলাকা পুর্নগঠনের ক্ষেত্রে ওই সব ঘটনার তদন্ত করবে রাজ্য সরকার।
মন্ত্রী জানান, বামফ্রন্টের আমলে আয়লা-বিধ্বস্ত এলাকায় মাত্র ১২৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। বর্তমান সরকার সেখানে ইতিমধ্যেই ১৭২৩ একর জমি অধিগ্রহণ করে ফেলেছে। তৈরি করেছে ২০ কিলোমিটার বাঁধ। আরও ২৫ কিলোমিটার বাঁধ তৈরির কাজ চলছে।
তিস্তা প্রকল্প নিয়েও বাম জমানাকে একহাত নেন সেচমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বামফ্রন্ট তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ৩৪ বছর কাটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কাজ শেষ হয়নি।” ২০১৫ সালের মধ্যে তিস্তা প্রকল্প শেষ করা হবে বলে জানিয়ে দেন রাজীববাবু।
এ দিন বাজেট-বিতর্কে একাধিক বিধায়ক মুর্শিদাবাদ, মালদহ জেলার ভাঙনের প্রসঙ্গ তোলেন। তাঁদের দাবি, আয়লা বা অন্য ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে সরকার পুনর্বাসন ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু মালদহ ও মুর্শিদাবাদে গঙ্গার ভাঙনে একের পর এক গ্রাম নদীগর্ভে চলে যাওয়া সত্ত্বেও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হচ্ছে না। ওই সব এলাকায় নদী-ভাঙন রোধে তেমন কাজই হয় না। উত্তরে সেচমন্ত্রী বলেন, পুর্নবাসন বা সহায়তা দেওয়ার কাজ তাঁর দফতর থেকে হয় না। কিন্তু যে-কাজ ফরাক্কা বাঁধ কর্তৃপক্ষের করার কথা, তা তাঁরা করছেন না। তাই রাজ্য সরকারকে নিজেদের টাকা খরচ করে ওই এলাকায় কাজ করতে হচ্ছে।