বেআইনি কাজ রুখতে গেলেই মার খেতে হবে। এটাই যেন নিয়ম হয়ে গেল। পুলিশ পেটানোর সেই ধারাবাহিকতা বুধবারও সকাল-বিকেলে দেখা গেল। জাতীয় সড়কের উপরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা বাস সরাতে বলার ‘দায়ে’ সকালে বারাসতে মার খেলেন ট্রাফিক পুলিশের এক এএসআই। আর বিকেলেই কলকাতার প্রিন্সেপ ঘাটের কাছে গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চাওয়ার ‘অপরাধে’ দুই বাইক-আরোহীর হাতে মার খেতে হল এক ট্রাফিক সার্জেন্টকে। দু’টি ঘটনার পরেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সকালে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কলকাতা থেকে মালদহের চাঁচল যাচ্ছিল একটি দূরপাল্লার বাস। সাড়ে ৯টা নাগাদ বাসটি বারাসতের কলোনি মোড়ে দাঁড়ায়। যাত্রী ওঠা-নামা শেষ হয়ে গেলেও বাসটি বেশ কিছুক্ষণ সেখানেই দাঁড়িয়েছিল বলে জানায় পুলিশ। স্থানীয়েরা জানান, কলোনি মোড়ের মতো জনবহুল চারমাথা মোড়ে বাসটি দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট তৈরি হয়। দাঁড়িয়ে পড়ে কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ যাওয়ার দূরপাল্লার অন্য বাসও। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, তখন সেখানে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের অ্যাসিস্টেন্ট সাব-ইনস্পেক্টর মহেশ্বর মাণ্ডি বাসটিকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু বাসটি নড়ে না। এ নিয়েই বাসের কন্ডাক্টর অজিত ঘোষের সঙ্গে মহেশ্বরবাবুর বচসা বাধে। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। বারাসত থানায় দায়ের করা অভিযোগে মহেশ্বরবাবু জানিয়েছেন, ওই কন্ডাক্টর তাঁকে মারধরও করেছে।
এই ঘটনার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বারাসত থানার পুলিশ। কলোনি মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা জনতার একাংশও মহেশ্বরবাবুর পাশে দাঁড়িয়ে বাস কন্ডাক্টরের নামে অভিযোগ তোলে। পুলিশ গ্রেফতার করে অজিত ঘোষকে। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “ট্রাফিক পুলিশকর্মীর অভিযোগ মতো ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাও শুরু হয়েছে।” এ দিনই অভিযুক্ত ওই কন্ডাক্টরকে বারাসত আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠান।
এ দিনই বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ প্রিন্সেপ ঘাটের কাছে একটি মোটরবাইক থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে চেয়েছিলেন কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট। তা দেখাতে না পেরে উল্টে ওই পুলিশকর্মীকেই তারা মারধর করে বলে অভিযোগে। বাইক-আরোহী ওই দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম অবিনাশ সাউ এবং জীবন রাজ। এক জনের বাড়ি ভবানীপুরে, অন্য জন একবালপুরের বাসিন্দা।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন বিদ্যাসাগর সেতু ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট সুপ্রভাত ঘোষ ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত ছিলেন। তখন দ্রুতগতিতে যাওয়া ওই মোটরবাইকটি দাঁড় করিয়ে কাগজপত্র দেখতে চান তিনিই। পুলিশ জানিয়েছে, মোটরবাইক আরোহী দুই যুবকের কাছেই কোনও কাগজ ছিল না। তাই তারা ওই সার্জেন্টের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু করে। তার পরে আচমকা তারা কনুই দিয়ে সুপ্রভাতবাবুর বুকে মারে বলে অভিযোগ। বুকে ব্যথা অনুভব করায় সুপ্রভাতবাবুর চিকিত্সাও করানো হয়েছে।
কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) ভি সলোমন নেসাকুমার এটিকে বিরল ঘটনা বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, “যে পরিমাণ চেকিং করে পুলিশ, সেই তুলনায় এই ধরনের ঘটনা সংখ্যায় খুবই কম। কী ঘটেছে, তার উপরে ভিত্তি করেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” তিনি জানান, এই ক্ষেত্রে ধৃতদের বিরুদ্ধে ৩৫৩ এবং ৩২৪ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। বারবার ট্রাফিক পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার পরেও এ দিন ডিসি-র বক্তব্য, “আগেও এমন ঘটনা ঘটত। এখনও ঘটছে।”