পছন্দের ওয়ার্ডে চনমনে মদন, চলছে হম্বিতম্বিও

কোনও এক পণ্যের বিজ্ঞাপনে পরিচিত বাক্যবন্ধ ছিল‘মেজাজটাই তো আসল রাজা!’ আর সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত মদন মিত্র আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে যে ভাবে বিচরণ করছেন, তাতে বলা যেতেই পারে ফাটকে কী আটকায়, মেজাজে যে তিনি মন্ত্রীমশাই-ই! গত ১২ ডিসেম্বর সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন মন্ত্রী মদন মিত্র। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁর দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দেন, মদন মন্ত্রীই থাকছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২০
Share:

কোনও এক পণ্যের বিজ্ঞাপনে পরিচিত বাক্যবন্ধ ছিল‘মেজাজটাই তো আসল রাজা!’

Advertisement

আর সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত মদন মিত্র আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে যে ভাবে বিচরণ করছেন, তাতে বলা যেতেই পারে ফাটকে কী আটকায়, মেজাজে যে তিনি মন্ত্রীমশাই-ই!

গত ১২ ডিসেম্বর সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন মন্ত্রী মদন মিত্র। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁর দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দেন, মদন মন্ত্রীই থাকছেন। জেল সূত্রের খবর সংশোধনাগারে নিজের হাঁকডাকে মদন বিলক্ষণ বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তিনি এখনও মন্ত্রী।

Advertisement

কী রকম হাঁকডাক? কারা দফতর সূত্রে খবর, মদন কখনও হম্বিতম্বি করছেন। কখনও বা ঘুরে ফিরে দেখছেন জেলের আনাচ-কানাচ। ব্যাপার দেখে কর্মীদের একাংশ বলছেন যেন হাজতবাস করতে নয়, সংশোধনাগার পরিদর্শনে এসেছেন মন্ত্রীমশাই!

পরিবহণের পাশাপাশি মদন মিত্রের হাতে রয়েছে ক্রীড়া দফতরও। বছর খানেক আগে তাঁর ক্রীড়া দফতরের অনুদানেই বন্দিদের শরীরচর্চার জন্য একটি জিমন্যাসিয়াম তৈরি হয় আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। সে কথা দিব্যি মনে আছে মন্ত্রীর! এ দিন সকালে জেলের অফিসারদের মদন বলেন, জিমন্যাসিয়ামটা তাঁকে ঘুরে দেখতে হবে। ক্রীড়া দফতরের টাকার ঠিক মতো সদ্ব্যবহার হয়েছে কি না, তা তিনি খতিয়ে দেখতে চান। কারা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মদন মঙ্গলবার ওই জিমন্যাসিয়ামটি ঘুরেফিরে দেখেন। কারা দফতরের অফিসারদের এ কথাও বলেন বেশি দিনের জন্য তো জেলে আসেননি, তাই দ্রুত সব দেখে নিতে চান!

শুধু জিমন্যাসিয়াম দর্শনই নয়, মঙ্গলবার জেলে মদনকে অনেকটাই সড়গড় দেখিয়েছে বলেও খবর কারা দফতর সূত্রের। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের এক অফিসারের কথায়, “জেলে আসার পরে প্রথম দু’দিন ধাতস্থ হতে সময় নিয়েছিলেন মদনবাবু। আজ কিন্তু অনেকটাই সহজ ছিলেন। খাওয়াদাওয়াও অন্য দিনের চেয়ে বেশি করেছেন।”

আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের নতুন করে মেরামত করে তোলা ‘মন্দির ওয়ার্ড’ সোমবার থেকে মদন মিত্রের ঠিকানা। ওই ওয়ার্ডে একটি শয্যাকে ঘিরে মন্ত্রীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। জায়গাটি মন্ত্রীর পছন্দ হয়েছে বলেই মনে করছেন জেল কর্তারা। এক কর্তার কথায়, “জেল হাসপাতালে মন্ত্রীকে যেখানে রাখা হয়েছিল, সেই জায়গাটি তাঁর খুব একটা পছন্দ হয়নি। খুব একটা খোলামেলা ছিল না সেটা। মন্দির ওয়ার্ডে আসার পর থেকেই উনি মেজাজে রয়েছেন।”

মদনের অনুগতরা জানাচ্ছেন, জেলের হাসপাতালে তাঁর মেজাজ খিঁচড়ে থাকার পিছনে আরও একটি কারণ রয়েছে। তৃণমূলেরই আর এক শীর্ষ নেতা এবং ডিজি পদমর্যাদার অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস রজত মজুমদারও সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি। অসুস্থ হওয়ায় সম্প্রতি তাঁকেও পাঠানো হয়েছে জেল হাসপাতালে। রজত মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। মদনের সঙ্গে রজতবাবুর বনিবনা সে ভাবে নেই। তা ছাড়া, দলের বর্তমান রাজনৈতিক সমীকরণে ওই প্রাক্তন আইপিএস-কে এড়িয়েই চলেন মদন। কারা দফতরের এক কর্তা জানান, নতুন ঠিকানায় নিরাপত্তা ও অন্যান্য কারণে সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত বন্দিদের কাউকেই মন্ত্রীর আশপাশে রাখা হয়নি। তাই হয়তো মেজাজও ফিরে এসেছে!

কারা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মদন মিত্রকে কিছুটা চনমনে দেখালেও এ দিনই ঠান্ডা লেগে জেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। তাঁর জ্বরও এসেছে। জেলের ডাক্তার তাঁকে দেখার পরে দিনভর সেলের মধ্যেই কাটিয়েছেন সুদীপ্ত। সন্ধ্যার দিকে ভাল আছেন বলে জেলের অফিসারদের জানান সারদা-কর্ণধার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন