ফের বেফাঁস কথা, দলেই ভর্ৎসিত জয়

আগেও আলটপকা মন্তব্য করে দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন। ফের বেফাঁস কথা বলে দলের অন্দরে ভর্ৎসিত হলেন বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার সংবাদমাধ্যমে জয়ের ওই বক্তৃতার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ পেতেই নিন্দায় সামিল হয়েছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৯
Share:

জিপিও-তে ডাক বিভাগের কর্মীদের অনুষ্ঠানে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার শতাধিক কর্মী বাম এবং কংগ্রেস অনুমোদিত সংগঠন ছেড়ে বিএমএস-প্রভাবিত ভারতীয় পোস্টাল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিইএ)-এ যোগ দেন। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

আগেও আলটপকা মন্তব্য করে দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন। ফের বেফাঁস কথা বলে দলের অন্দরে ভর্ৎসিত হলেন বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার সংবাদমাধ্যমে জয়ের ওই বক্তৃতার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ পেতেই নিন্দায় সামিল হয়েছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলও।

Advertisement

শনিবার দুপুরে বীরভূমের ময়ূরেশ্বর থানার দক্ষিণগ্রামে বিজেপি কর্মীদের প্রশিক্ষণ শিবির ছিল। তার পরে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল বের করে বিজেপি। মিছিল শেষেই স্থানীয় ঘোষপাড়ায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় জয় বলেন, ‘‘গত লোকসভা ভোটে আমাদের চুরি করে হারানো হয়েছিল। এ বার সেটাও পারবেন না। কারণ নির্বাচন কমিশন আমাদের হাতে। আর বিধানসভা ভোট হবে— মিলিটারি দিয়ে; বন্ধু, মিলিটারি দিয়ে। স্বচ্ছ, সুন্দর নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গবাসী ২০১৬ সালে দেখবে।’’ এর পরেই তাঁর সংযোজন, ‘‘৮ নভেম্বর আমরা যেন বিহার জয় করতে পারি। আর বিহার জয় করলে বাংলায় বুলডোজার চালিয়ে দেওয়া হবে, এ কথা আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলে দিয়েছেন।’’

জয়ের ওই বক্তব্য জানাজানি হতেই অস্বস্তিতে পড়েন বিজেপি নেতৃত্ব। এই ধরনের বিতর্কিত বক্তব্যে দলের অনেকেই ক্ষুব্ধ বলে খবর। ওই শিবিরে হাজির দলের বীরভূম জেলা বিজেপি সভাপতি অর্জুন সাহা প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়েছেন। রবিবার তাঁর দাবি, ‘‘আমি মিছিলে থাকলেও জয়বাবুর বক্তব্যের সময়ে অসুস্থ এক কর্মীকে দেখতে চলে গিয়েছিলাম। তাই উনি ঠিক কী বলেছেন, তা না জেনে মন্তব্য করব না।’’ যদিও রাজ্য নেতৃত্ব সূত্রের খবর, বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য এ দিনই জয়কে সতর্ক করেছেন দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। জয়ও তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বলে বিজেপির দাবি। দলের মুখপাত্র কৃশানু মিত্র বলেন, ‘‘জয়ের ওই মন্তব্যকে সমর্থন করে না বিজেপি। ওটা তাঁর ব্যক্তিগত মত। বিজেপি বরাবরই গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।’’ রাজ্য বিজেপি-র সহ পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহও বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন কোনও দলের হাতে থাকা গণতান্ত্রিক ধারণার পরিপন্থী। বিজেপি এতে বিশ্বাস করে না।’’

Advertisement

ঘটনা হল, ওই মন্তব্যটি করার আগে নিজের বক্তৃতায় জয়কে কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি করতেই শোনা যাচ্ছিল। হঠাৎ ওই মন্তব্য কেন? এ দিন জয়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আবেগের বশে ভুল করে বলে ফেলেছি। এর জন্য বাংলার মানুষের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইছি।’’ এর পরে তিনি যুক্তি দেন, ‘‘আসলে তৃণমূল ক্রমাগত আমাদের কর্মী-সমর্থকদের উপরে অত্যাচার চালাচ্ছে। অনুব্রত মণ্ডল চোখ উপড়ে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। তাই কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার জন্যই বলতে চেয়েছিলাম, বিহারের ভোটে জিতলে বাংলার মানুষও প্রভাবিত হয়ে তৃণমূলের উপরে বুলডোজার চালিয়ে দেবেন।’’

জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত অবশ্য বলেন, ‘‘ওঁরা পাগল হয়ে গিয়েছেন। প্রলাপ বকছেন। তাই প্রলাপের কী জবাব দেব? ২০১৬-র ভোটের ফল ঘোষণা পরে জয়বাবুরাই লজ্জায় মুখ লুকনোর জায়গা পাবেন না!’’ আর সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলেন, ‘‘বিজেপি নেতাদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা যায় না। তৃণমূলের হাত ধরেই তো পশ্চিমবঙ্গে ওদের উত্থান। চার বছর ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মানুষের উপরে বুলডোজার চালাচ্ছেন। একই কাজে বিজেপি তো উৎসাহ পাবেই!’’

এ দিনই আসানসোলে কর্মিসভায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বিজেপি-তৃণমূল আঁতাঁতের অভিযোগ তোলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যতই সন্ত্রাস হোক, এখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে না। কংগ্রেসের ক্ষমতা নেই বাহিনী আনার। বিজেপি তা পারে। কিন্তু ওরা আনবে না। কারণ, বিজেপি-তৃণমূলের আঁতাঁত হয়েছে। তাই আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় চাইলেও কেন্দ্রীয় বাহিনী আনতে পারবেন না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement