চা বাগানে মালিক খুন

বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেও উদ্বেগে চা-মহল

সোনালি চা বাগানের মালিককে খুন ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলেই ব্যাখ্যা চা শিল্পমহলের। সার্বিক ভাবে চা শিল্পের সমস্যার পরিণতি হিসাবে এই ঘটনাকে মানতে নারাজ তাঁরা। যদিও উত্তরবঙ্গের চা শিল্প যে খুব একটা ভাল অবস্থায় নেই, সে কথাও মেনে নিচ্ছেন মালিকপক্ষ ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলি। তা হলে সোনালি চা বাগানের ঘটনা ‘বিচ্ছিন্ন’ হল কী ভাবে? চা শিল্পমহলের মতে, ওই চা বাগানটি যে পদ্ধতিতে চলত, তা আর পাঁচটা বাগানের মতো নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৭
Share:

সোনালি চা বাগানের মালিককে খুন ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলেই ব্যাখ্যা চা শিল্পমহলের। সার্বিক ভাবে চা শিল্পের সমস্যার পরিণতি হিসাবে এই ঘটনাকে মানতে নারাজ তাঁরা। যদিও উত্তরবঙ্গের চা শিল্প যে খুব একটা ভাল অবস্থায় নেই, সে কথাও মেনে নিচ্ছেন মালিকপক্ষ ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলি।

Advertisement

তা হলে সোনালি চা বাগানের ঘটনা ‘বিচ্ছিন্ন’ হল কী ভাবে? চা শিল্পমহলের মতে, ওই চা বাগানটি যে পদ্ধতিতে চলত, তা আর পাঁচটা বাগানের মতো নয়। সাধারণত, চা বাগানের মালিক নিজে সরাসরি শ্রমিক ইউনিয়নগুলির সঙ্গে দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনায় বসেন না। এ জন্য ইউনিয়নগুলি মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে। এ ছাড়াও, দৈনন্দিন মজুরি বণ্টন-সংক্রান্ত বিষয়গুলি সাধারণত বাগান ম্যানেজার বা কর্তৃপক্ষই দেখভাল করেন। কিন্তু সোনালি চা বাগানের মালিক রাজেশ ঝুনঝুনওয়ালা নিজেই মজুরি নিয়ে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বলে খবর। তা ছাড়া, এই বাগানটি তরাই ইন্ডিয়ান প্লান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বছর তিনেক আগে নামকাওয়াস্তে যুক্ত হলেও অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, গত দু’বছর ধরে মালিক পক্ষ তাঁদের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগই রাখেননি। বাগান পরিচালনার প্রথা এ ক্ষেত্রে আদৌ মেনে চলা হয়েছে কিনা, তা নিয়ে সংশয় আছে চা শিল্প মহলের একাংশের। সে জন্যই সোনালি চা বাগানে শ্রমিক অসন্তোষকে ব্যতিক্রমী হিসাবেই দেখছেন তাঁরা।

কিন্তু তা হলে কী উত্তরবঙ্গের চা শিল্পে সমস্যা নেই? চিত্রটা যে ততটা মসৃণ নয়, তা অবশ্য মানছেন সব পক্ষই। মালিক পক্ষের বক্তব্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একাধিক ইউনিয়ন বা একই রাজনৈতিক দলের একাধিক শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে শ্রমিক অসন্তোষ অনেক সময় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। মালিকপক্ষের দাবি, আর পাঁচটা শিল্পের মতোই একাধিক শ্রমিক ইউনিয়নের দাপটে অতিষ্ঠ বহু চা বাগান। মোর্চার প্রভাবে রমরমা বেড়েছে মোর্চা সমর্থিত ইউনিয়নের। তরাই ও ডুয়ার্সে আবার তৃণমূলেরই তিনটি শ্রমিক সংগঠন। বিজেপিরও প্রভাব বাড়ছে বাগানে। মালিকপক্ষের অভিযোগ, বেতন চুক্তি নিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নগুলির দাবি এক এক রকম। গত মার্চ মাসে তিন বছরের পুরনো বেতন চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। বেতন চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত অনিশ্চয়তার বাতাবরণ কাটবে না বলেই তাঁদের দাবি।

Advertisement

শ্রমিক ইউনিয়নগুলির পাল্টা দাবি, আগেকার বাগান মালিকদের সঙ্গে বর্তমানে মালিকদের অনেক ক্ষেত্রেই অমিল রয়েছে। যেমন তৃণমূল প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি অলোক চক্রবর্তীর বক্তব্য, ইদানীং সহজ রোজগারের স্বপ্নে অনেক ব্যবসায়ী বাগানের মালিকানা কিনেছেন। এই সব মালিকের কাছে শ্রমিকদের দুর্দশার ছবি কোনও গুরুত্বই পায় না।” সিটু প্রভাবিত চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আলম আবার বলেন, “বাগানে কাজ করে সংসার চালানো দুঃসাধ্য হয়ে ওঠায় বহু শ্রমিক বাগান ছাড়ছেন।”

চা বলয়ে তাঁদের তিনটি ইউনিয়ন থাকার কথা মানলেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা অবশ্য স্বীকার করেননি অলোকবাবু। তাঁর বক্তব্য, দাবিসনদ পেশ করার সময়ে সব ইউনিয়নই ঐক্যবদ্ধ থাকে। তবে তিনি জানান, শনিবারই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে স্থির হয়েছে, আগামী মাসেই তিনটি ইউনিয়ন এক সঙ্গে মিশে যাবে। তবে তাঁর অভিযোগ, উত্তরবঙ্গে চা বলয়ে অস্থিরতা তৈরি করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে সিটু। এ প্রসঙ্গে জিয়াউলের পাল্টা দাবি, অস্থিরতা তৈরির দায় তাঁদের নয়, রাজ্যের। কারণ, ন্যূনতম মজুরি চালু করার ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া উচিত রাজ্য সরকারেরই।

বেতন চুক্তি নিয়ে আগামী ৫ ডিসেম্বর ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের ডাক দিয়েছে রাজ্য। আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে সব পক্ষ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement